পোল্ট্রি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সুস্থ্য ও নিরোগ থাকতে হলে প্রতিদিন সকালের নাস্তায় একটি ডিম থাকা উচিত বলে মনে করেন ফেনী জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামান।

১২ ডিসেম্বর ফেনী শহরের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত পোল্ট্রি রিপোর্টিং বিষয়ক মিডিয়া কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এ কর্মশালার আয়োজন করে। ব্যবস্থাপনায় ছিল বেসরকারি সংস্থা ওয়াচডগ বাংলাদেশ।

ওয়াহিদুজজামান বলেন, মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। প্রত্যেকেই কম দামে পুষ্টিকর খাবার পেতে চায়। পোল্ট্রি শিল্প সে চাহিদা পূরণ করছে।

তিনি বলেন, ছোট বেলায় শুনতাম ডিম খেলে পরীক্ষার খাতায় ডিম পায়। এখন বলা হচ্ছে, পরীক্ষার সময়গুলোতে ডিম খুবই দরকারী। এক সময় বলা হতো ডিম খেলে হার্টের রোগ হয়, এখন বলা হচ্ছে ডিম খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।

আগে বলা হতো ডিমে কোলেস্টরেল আছে। এখন বলা হচ্ছে, ডিমের কোলেস্টরেল উপকারি। এমনকি কার্ডিয়াক পেশেন্টকেও অবস্থা বুঝে ডিম খেতে দেয়া হচ্ছে। কাজেই নতুন নতুন গবেষণা হচ্ছে। ধারনার পরিবর্তন আসছে।

এ সমস্ত জ্ঞান ও তথ্যকে সাধারন মানুষের কাছে পৌঁছানো দরকার। সাধারন মানুষের কাছে সহজবোধ্যভাবে তথ্য পৌঁছে দিতে অবদান রাখছেন সাংবাদিক ও গণমাধ্যম।

ফেনী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজ আহম্মদ চৌধুরী বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় বর্তমান সরকারের আমলে ফেনীতে পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। মানুষের কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, আমিষের চাহিদা মিটছে, দারিদ্র বিমোচনে এ শিল্প উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পি.কে.এম এনামুল করিম বলেন, ক্ষুদ্র খামারিদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা থাকা উচিত। এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আমিনুর রহমান বলেন, নিরাপদ ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদনের জন্য খামারিদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার এ শিল্পকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে তবে জনবলসহ কিছু সীমাবদ্ধতার কারনে পরিপূর্ণ সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার নির্বাহী সদস্য তৌহিদ হোসেন বলেন, এ বছর পোল্ট্রি শিল্পের জন্য কঠিন একটি সময় গেছে। টানা প্রায় এক বছর- প্রথমে ডিম এবং পরবর্তীতে ব্রয়লার মুরগির দর পতনের কারনে অসংখ্য খামার বন্ধ হয়ে গেছে।

তাই খামারি কিংবা উদ্যোক্তার জন্যই শুধু নয়, প্রাণিজ আমিষের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ বজায় রাখার তাগিদেই সরকারকে পোল্ট্রি শিল্পের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে।

মিডিয়া কর্মশালার রিসোর্স পারসন দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, গণমাধ্যমই নকল ডিম নিয়ে মানুষের উৎকন্ঠা তুলে ধরেছে আবার বাংলাদেশে যে নকল ডিমের অস্তিত্ব নেই সে কথাটিও তুলে ধরেছে; ভেজাল ফিড নিয়ে রিপোর্ট করেছে আবার ভেজাল ফিড বিরোধী অভিযানের সংবাদ পরিবেশন করে পোল্ট্রি উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে কর্মরত সাংবাদিকদের অসংখ্য বিষয়ে রিপোর্ট করতে হয়, কোন একটি বিষয়ে অধিক সময় দেয়া তাঁদের পক্ষে প্রায়শই সম্ভব হয়না। তাই তথ্যের দ্বিমুখী প্রবাহ বাড়াতে পোল্ট্রি উদ্যোক্তাদেরকেই উদ্যোগী হতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক শশি আহমেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে পোল্ট্রি খাতে রোগ-জীবানুর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এইচ৯.এন২ ভাইরাসের কারনে ডিমের উৎপাদন ২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। তাই আরও বড় ক্ষতি এড়াতে সরকারের উচিত এ রোগের ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি দেয়া।

যমুনা টেলিভিশনের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট সুশান্ত সিনহা বলেন, পোল্ট্রি বিষয়ে সঠিক তথ্য এবং জ্ঞানের অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই ভুল সংবাদ পরিবেশিত হতে দেখা যায়।

যেহেতু এ শিল্পের সাথে ভোক্তার প্রতিদিনের সম্পর্ক রয়েছে তাই যে কোন ভুল তথ্যে সাধারন মানুষ এবং পোল্ট্রি শিল্পের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সে কারণেই আধুনিক পোল্ট্রি বিজ্ঞান সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানা দরকার এবং পোল্ট্রি শিল্প ও গণমাধ্যমের মধ্যকার সম্পর্ক আরও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন।

ওয়াচডগ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের জন্য ফেলোশীপ এবং মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান করছে বিপিআইসিসি। ঢাকার বাইরের সংবাদ মাধ্যমগুলোকেও আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তাই ফেনীর সংবাদকর্মীরাও এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন।

কর্মশালাটির স্থানীয় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন দৈনিক প্রথম আলোর ফেনী ব্যুরো প্রধান আবু তাহের। কর্মশালায় জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক, টিভি চ্যানেল, বার্তা-সংস্থা এবং অন-লাইন নিউজপেপারের মোট ৩৫ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।