মেহেদী হাসান, রাজশাহী: রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষি বিপ্লব হয়েছে। ফল, শাক-সবজি উৎপাদনে দিন যত এগুচ্ছে ঠিক ততই বৈপ্লবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সনাতন পদ্ধতি ছেড়ে আধুনিক কৃষির দিকে ঝুঁকছে এখানকার কৃষকরা। আমের রাজ্য হওয়ায় ফল মৌসুম পেরিয়ে গেলে পতিত হয়ে পড়ে আমবাগানগুলো। তবে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও পদ্ধতির কল্যাণে সোনা ফলছে সেই আম বাগানের পতিত জমিতে।

রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রাম ধামিলা। এ গ্রামের কৃষি অনেক উন্নত, আধুনিক এবং প্রযুক্তি নির্ভর। কৃষক মো.সুলতানুল আরেফিন এই আধুনিক কৃষির উজ্জল উদাহরণ। তিনি সাড়ে ৩ বিঘা আম বাগানের ফাঁকা জমিতে চাষ করেছেন লাউ। মোচা থেকে যৌবনে পা দেওয়া সারি সারি লাউ মাচায় দোল খাচ্ছে।

জানা যায়, কৃষক মোঃ সুলতানুল আরেফিন পেশায় একজন দক্ষ ব্যাংকার ছিলেন। গত বছর তিনি নিরাপদ ও পুষ্টিকর টাটকা ফলমূল ও সবজির নিশ্চয়তা ও কৃষির প্রতি তার হৃদয়ের অনুভূতি থেকে এবি ব্যাংকের সিনিয়র ক্যাশিয়ার পদের চাকরি ছেড়ে তার ৩০ বিঘা জমিতে আম, পেয়ারা, লেবু মাল্টা সহ বিভিন্ন ফসলের বাগান স্হাপন করেছেন।

তাঁর আম বাগানের পতিত জমিতে বিভিন্ন ধরনের নিরাপদ সবজি চাষ শুরু করেন বছর দুয়েক আগে। তার চাষ করা সবজিগুলোর মধ্যে বেগুন, ওল, মরিচ, লাউ উল্লেখযোগ্য। একদিকে যেমন তার পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরন হচ্ছে তেমনি প্রতিবেশীদের পুষ্টির চাহিদা পূরনে সহযোগিতা করছেন এই আলোকিত মানুষ।

অতিরিক্ত শাক সবজি বাজারে বিক্রি করে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।তাঁর সাড়ে ৩ বিঘার মাচায় উৎপাদিত লাউ ইতিমধ্যে ট্রাকে করে রাজধানী ঢাকার কাওরান বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। তার দেখাদেখি অন্য সব চাষিরাও আম বাগানের পতিত জমিতে লাউ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, পটল, পেঁয়াজ সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ শুরু করেছেন।

এরইমধ্যে তাঁর দেখাদেখি ধামিলা গ্রামের মোঃ মনিরুল ইসলাম ও পালপুর গ্রামের সাহাবুদ্দিন আমবাগানের পতিত জমিতে চাষ করছেন সবজি। আম বাগানের পতিত জমিতে সবজি চাষের যাবতীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।

কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করতে সব সময় মাঠে থাকেন গোদাগাড়ী উপজেলা ‍উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার। তিনি বলেন, এই উপজেলায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে অনেকেই সবজি চাষ শুরু করেছেন। তারা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগের মাধ্যমেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম আজ সবজিতে ভরপুর।

শুধু উৎপাদন করেই শেষ নয়, নিরাপদ সবজি উৎপাদন, পতিত জমির সর্বোত্তম ব্যবহার পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ধামিলা গ্রামের কৃষকরা । জমিতে সুষম সার ব্যবহার, জৈব সার, ছাই, জৈব বালাই নাশক, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ ফাঁদ ও রাসায়নিক সারের সীমিত ব্যবহারের মাধ্যমে এখানকার কৃষি এগিয়ে চলেছেন দূর্বার গতিতে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ