আন্তর্জাতিক ‍কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যকার ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য দ্বন্দ্ব নিরসনে ইইউর বাজারে সয়াবিন আমদানির পথ উন্মুক্ত হয়েছে।

আর চীনের বাজারে রফতানি কমে আসার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন সয়াবিন রফতানিকারকরা আশার আলো দেখছেন। অন্যদিকে নিজেদের উৎপাদিত সয়াবিনের কেনাবেচা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন ইউরোপের চাষীরা। তবে ইইউর নীতিনির্ধারকরা বলছেন, আমদানি সত্ত্বেও ইউরোপীয় সয়াবিনচাষীরা নিজেদের বাজারে অবস্থান হারাবেন না। খবর রয়টার্স।

গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউজে বৈঠকে মিলিত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রধান জঁ-ক্লদ ইয়ুংকার। বৈঠক শেষে হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য বিরোধ নিরসনে একযোগে কাজ করার পরিকল্পনার কথা জানান দুই নেতা।

এ সময় ট্রাম্পের বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইইউর সয়াবিন আমদানির বিষয়টি উঠে আসে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে তাত্ক্ষণিকভাবে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন কিনতে আগ্রহী ইইউ।

দ্বিতীয় শীর্ষ সয়াবিন উৎপাদনকারী ও রফতানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে কৃষিপণ্যটির আমদানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় ইইউভুক্ত দেশগুলোর সম্মিলিত অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়।

মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ইইউভুক্ত দেশগুলো আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৫৩ লাখ টন সয়াবিন আমদানি করবে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি।

২০১৭ সালে এসব দেশে মোট ১ কোটি ৪১ লাখ টন সয়াবিন আমদানি হয়েছিল। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ইইউভুক্ত দেশগুলোয় কৃষিপণ্যটির আমদানি বাড়ছে ১২ লাখ টন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আমদানি হবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

তবে দেশটির বাজার থেকে ইউরোপীয় আমদানিকারকরা তাত্ক্ষণিকভাবে কী পরিমাণ সয়াবিন আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে, তা ট্রাম্প কিংবা ইয়ুংকার কেউই স্পষ্ট করেননি।

বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে মার্কিন সয়াবিনে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে বেইজিং। ফলে বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন আমদানিকারক দেশ চীনে কৃষিপণ্যটির রফতানি কমার শঙ্কায় ভুগছেন মার্কিন রফতানিকারকরা।

এ পরিস্থিতিতে সয়াবিনের বিকল্প বাজারের সন্ধানে নেমেছেন তারা। এরই মধ্যে ইইউর বাজারে ‘বিপুল পরিমাণ’ সয়াবিন রফতানির সুযোগ তাদের মুখে হাসি ফোটাবে বলে জানান মেলবোর্নভিত্তিক অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড নিউজিল্যান্ড ব্যাংকের বিশ্লেষক উইলিয়াম কেইন। এটাই ইউরোপের সয়াবিনচাষীদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

চলতি বছর ইইউভুক্ত দেশগুলোয় প্রায় ২৮ লাখ টন সয়াবিন উৎপাদন হবে। এ বিষয়ে ফরাসি উৎপাদনকারী জ্যঁ মোশিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি বাড়ানো হলে ইইউভুক্ত দেশগুলোয় কৃষিপণ্যটির দাম কমতে শুরু করবে। ফলে দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় আমরা যে সয়াবিন উৎপাদন করেছি, তা অবিক্রীত রয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ইউরোপের সয়াবিনচাষীরা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বেন।

ইউরোপীয় সয়াবিনচাষীদের এমন উদ্বেগ নাকচ করে দিয়েছেন জার্মানির খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী জুলিয়া ক্লোয়েঙ্কার। শনিবার আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে জি২০ভুক্ত দেশগুলোর কৃষিমন্ত্রীদের বৈঠকের বিরতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধের জের ধরে রফতানি কমায় মার্কিন সয়াবিনচাষীরা ভীষণ চাপের মধ্যে রয়েছেন।

এ পরিস্থিতিতে ইইউভুক্ত দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি করলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর থেকে বাড়তি চাপ কমবে। বিপরীতে লাভবান হবেন ইউরোপের আমদানিকারকরা। কেননা ইইউর বাজারে আমদানি করা সয়াবিনের বিপুল চাহিদা রয়েছে। একই সঙ্গে মান ও দাম তুলনামূলক একই হওয়ায় ইউরোপীয় সয়াবিনচাষীদের নিজস্ব বাজার হারানো ও আর্থিক লোকসানের আশঙ্কা নেই বললেই চলে।

উইলিয়াম কেইন বলেন, চাপের মুখে থাকা মার্কিন সয়াবিন খাতের জন্য ইউরোপের বাজার সুখবর বয়ে এনেছে, এতে সন্দেহ নেই। দুপক্ষের বাণিজ্য বিরোধ নিরসনেও এ আমদানি প্রস্তাব কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।

এখন দেখার বিষয় মার্কিন সয়াবিনে ইউরোপীয় চাষীদের মুখেও হাসি ফোটে, নাকি তাদের লোকসানের পাল্লা ভারী হয়। সূত্র: বণিক বার্তা।