মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রমজানের শুরুতে মাছের দাম বেশ ভালো থাকলেও তা বর্তমানে কমে গেছে। মাস খানেক আগে প্রতিকেজি মাছে ২০ থেকে ৩০ টাকা বাড়ার পর আবার হটাৎ মাছের কেজিতে উধাও ৩০ থেকে ৫০ টাকা। মাছচাষিরা বলছেন- বর্তমানে মাছের যে দাম আছে তাতে চাষিদের তেমন কোন লাভ হবে না।

সারাদেশে কার্পজাতীয় মাছ উৎপাদন, বিপণন-বিক্রিতে উল্লেখযোগ্য জায়গা দখল করে আছে রাজশাহী। তবে বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছরে মাছের দাম বেশ ভালো বলে জানিয়েছেন এখানকার মাছচাষিরা। করোনা মহামারির শুরু থেকে মাছের দাম উঠানামা করলেও বর্তমানে প্রতিকেজি মাছে লোকসানের হাত থেকে বেঁচেছেন। ফলে, লোকসানের কিছু অংশ পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে মাছের চাহিদা রয়েছে। পর্যাপ্ত ক্রেতা। স্থানীয় বাজারগুলোতেও বিগত সময়ের চেয়ে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে কার্পজাতীয় মাছ। একদিকে অক্সিজেন স্বল্পতা কমাতে বড় আকারের মাছ বিক্রি করছেন চাষিরা, অন্যদিকে ক্রেতা-বিক্রেতার সমারোহে ব্যবসা জমিয়ে তুলেছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। জেলায় উৎপাদিত রুই, কাতলা, ম্রিগেল, গ্রাসকার্প, ব্লাডকার্প, সিলভারসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছ কৌশলে ট্রাকে করে কয়েকবার পানি বদলিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে। সেখানেও ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে তাজা মাছ।

রাজশাহীর বিভিন্ন কাঁচা বাজারের মৎস্য আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে প্রতিকেজি ছোট রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা কেজি দরে যা রোজার শুরুতে বিক্রি হয়েছিল ২৯০ থেকে ৩২০ টাকা দরে। ৫ কেজির রুই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে যা কমেছে, সিলভার কার্প ১৬০, ছোট আকারের কাতল ২৮০ টাকা; ৫ কেজির কাতল ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা , দুই কেজি ওজনের মৃগেল চাষি পর্যায়ে ১৭০ টাকা এবং বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায় কিন্তু ৩০ টাকা বেশি দরেও বিক্রি হয়েছে। এছাড়া তেলাপিয়া ১৮০ টাকা, বোয়াল ৬০০ টাকা এবং বাগদা চিংড়ি মানভেদে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

রাজশাহী জেলা মৎস্য সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলায় মৎস্য উৎপাদন ও বিপণন-বিক্রির সঙ্গে জড়িত জেলার প্রায় ৯ লাখ মানুষ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮০ হাজার ১৪১ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হয়। বর্তমানে মাছ উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৮৩ হাজার ৪৯২ মেট্রিন টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলায় মাছ উদ্বৃত্ত ৩১ হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২০ সালে মাছের উদ্বৃত্ত প্রায় আড়াই গুণ। সেইসাথে মোট জলাশয়ের সংখ্যা বেড়েছে। তিন ৪৮ হাজার ৪২৭টি থেকে বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৭২০ টিতে।

রাজশাহীতে উৎপাদিত মাছের কার্প জাতীয় মাছ প্রায় ৮৫ শতাংশ। এছাড়াও কার্পজাতীয় মাছ উৎপাদনে শীর্ষে থাকা রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন প্রায় ১৫০ ট্রাক মাছ রপ্তানি হয়ে থাকে। বর্তমানে ঢাকায় মাছের চাহিদা থাকায় খুশি এখানকার চাষিরা।

রাজধানীর নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, মিরপুর-১০, মিরপুর-৬ এলাকার মৎস্য আড়তগুলোতে বিক্রি হয় রাজশাহীর মাছ। মিরপুর-১০ এলাকার মানিক এন্টারপ্রাইজের মালিক মানিক হোসেন বলেন, “বাজারে মাছের চাহিদা রয়েছে। আবার পুকুর-পুশকুনি শুকিয়ে যাওয়ার জন্য সব মাছ বাজারে আসছে। নতুন নতুন মাছ আসছে যা সারাবছর পাওয়া যায় না। এবার এই মৌসুমে মাছের দাম আছে। আগের বছরের তুলনায় প্রতিকেজি ১০০ টাকা বেশি। তবে, রমজানের শুরুতে যে দাম ছিল তা থেকে কমেছে।

জেলার পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের বাসিন্দা সোহরাব হোসেন। প্রায় দুই যুগ ধরে মাছ চাষ করছেন। ছোট বড় মিলিয়ে তাঁর পুকুর সংখ্যা ২১ টি। যার আয়তন ২৫০ বিঘা ছাড়িয়ে। প্রতিবছর এসব পুকুর থেকে আয় হয় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা।

এই মাছচাষি বলেন, ২০১৯-২০ সালের দিকে ৩-৪ কেজি ওজনের রুই বিক্রি করেছি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে মাছের কিছুটা দাম বেড়েছে। পাইকারিতে আমরা ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেশি পাচ্ছিলাম কিন্তু হটাৎ আবার কমেছে। ছোট রুই বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা, ২৭০ টাকায়। ৫-৬ কেজির গ্রাস কার্প ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি। গতবছর ৬-৭ কেজি ওজনের কাতল বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি, এবার আগের দামের দিকেই যাচ্ছে। ১০ কেজি ওজনের কাতল ৫০০ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, করোনা ভাইরাসের শুরু থেকেই মাছ কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে চাষিদের। বর্তমানে মাছের দাম বেড়েছে। চাষিরা পূর্বের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিয়ে পারবে বলে আশা করছি। শীতকালে মাছের গায়ে ঘা হয় কিন্তু রাজশাহীতে এধরণের খবর পাওয়া যায়নি। চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ