হাইব্রিড বীজ; সবজি উৎপাদন

ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: জীবন ধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণের অন্যতম উৎস হলো সবজি। আর হাইব্রিড বীজ; সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির এক অনন্য হাতিয়ার।

বর্তমানে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সবজির চাহিদা পূরণ করতে হলে ১১.২৪ মিলিয়ন টন সবজির প্রয়োজন। সবজি উৎপাদন হয় ৪.০৫ মিলিয়ন টন। ক্রমহ্রাসমান আবাদি ভূমির চাপকে সমান রেখে সবজির উৎপাদন প্রায় ৩ গুণ বাড়াতে হবে।



এই পরিস্থিতিতে একমাত্র হাইব্রিড সবজির জাত ব্যবহার ও উন্নত চাষাবাদ প্রযুক্তির মাধ্যমেই এই বিশাল সবজির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। বর্তমানে বাংলাদেশের কৃষকরা খুব অল্প পরিমাণে (৩০-৪০%) সবজির হাইব্রিড বীজ ব্যবহার করেন। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশেই শতভাগ পর্যন্ত সবজির হাইব্রিড জাত ব্যবহার হচ্ছে।

সংকর (হাইব্রিড) সংকরায়ন: সংকরায়ন হলো একটি উদ্ভিদ প্রজনন প্রদ্ধতি, যার মাধ্যমে দুই বা ততোধিক ভিন্ন রকম জেনোটাইপ সম্পন্ন উদ্ভিদসমূহের যৌন মিলনের ফলে নতুন ধরনের জাত সৃষ্টি করা। এর ফলে যে নতুন জাত সৃষ্টি হয় তা হলো সংকর বা হাইব্রিড, আর এ প্রক্রিয়াটি হলো সংকরায়ন।

সংকরায়নের উদ্দেশ্য: সংকরায়নের প্রধান উদ্দেশ্য হলো কৌলিক বিভিন্নতা সৃষ্টি করা। সংকরায়নের মাধ্যমে কোন একটি জাতে অন্যান্য জাতসমূহ বা বন্য প্রজাতিসমূহ থেকে এক বা একাধিক বৈশিষ্ট স্থানান্তরিত করা যায়।

সংকরায়নের অন্য একটি উদ্দেশ্য হলো প্রজনকদ্বয় অপেক্ষা উন্নতর বা অধিক ফলনশীল (১০-৫০%) পর্যন্ত জাত সৃষ্টি করা। সংকরায়ন করার পূর্বে নিম্নোক্ত তথ্যাবলি জানা একান্ত প্রয়োজন।

পুং-প্রজনক সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান থাকা দরকার। স্ত্রী-প্রজনক সম্পর্কেও বিস্তারিত জানতে হবে। গাছসমূহ এক লিঙ্গ না উভয়লিঙ্গ ও ফুল প্রস্ফুটিত  হওয়ার সময়টা জানতে হবে। ফুল স্বপরাগী বা পরপরাগী এগুলো খেয়াল রাখতে হবে।

ফসল সংগ্রহের সময় যে কোনো ফসলের হাইব্রিড জাত তৈরি বা সংকরায়নের জন্য অনেকগুলি ধাপ আছে। প্রতিটি ধাপ সতর্কতার সাথে অতিক্রম করলেই কেবল সংকরায়নে কৃতকার্যতা আসতে পারে।

ধাপগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রজনক নির্বাচন, স্ত্রী ও পুরুষ ফুলকে সংকরায়নের জন্য উপযুক্তকরণ ও পরাগায়ন।

বীজ সংগ্রহ সংরক্ষণ: বীজ পরিপক্ব হলে প্রতি গাছের বীজ আলাদা আলাদা ব্যাগে ট্যাগ সহকারে সংগ্রহ করা হয়। বীজ শুকিয়ে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয় যেন তা অন্যান্য বীজের সঙ্গে মিশে যেতে না পারে এবং পোকামাকড় কর্তৃক আক্রান্ত হতে না পারে।

 হাইব্রিড বীজের ব্যবহার:  উপরোক্তভাবে উৎপাদিত সংকর (হাইব্রিড) বীজকে শুধুমাত্র একবারেই  ব্যবহার করা যাবে। কোনভাবেই পরবর্তী বছর তা থেকে বীজ রাখা যাবে না এবং খাবারের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়।

দিন দিন আমাদের দেশে হাইব্রিড সবজি চাষাবাদ বাড়ছে। আমাদের দেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে সবজি উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়াতে হবে।

আর এক্ষেত্রে অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে সবজিতে শতভাগ হাইব্রিড বীজের ব্যবহার। হাইব্রিড বীজকে কৃষকের মাঝে জনপ্রিয় করতে হবে এবং সেই সাথে হাইব্রিড সবজি বীজের প্রাপ্যতাও নিশ্চিত করতে হবে।

এক্ষেত্রে একটি ভ্রান্তধারণা প্রচলিত আছে যে হাইব্রিড সবজির স্বাদ দেশি সবজির মতো হয় না। এ ধারণা সঠিক নয়। হাইব্রিড সবজির স্বাদ নির্ভর করে প্রজনক দ্বয়ের স্বাদের ওপর এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহারের ওপর। মাত্রাঅতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহারের কারণে সবজির স্বাদে কিছুটা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।

বর্তমানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওয়াতাধীন বিএডিসি ‘বিএডিসির সবজি বীজ বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে হাইব্রিড সবজি বীজ উৎপাদন প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও বিতরণ কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

আশা করা যায় এই প্রকল্পের গবেষণা প্রান্তিক পর্যায়ে হাইব্রিড সবজি বীজের স্বল্পমূলে প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে এবং দেশে সবজি চাহিদাপূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

হাইব্রিড বীজ; সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির এক অনন্য হাতিয়ার লেখাটির লেখক ড. বাহাউদ্দিন আহমদ ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সবজি বিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র বিএআরআই, জয়দেবপুর, গাজীপুর। লেখাটি সংগ্রহ করা হয়েছে কৃষি তথ্য সার্ভিস

আরও পড়ুন: হলুদ চেরি টমেটো’র জাত অবমুক্ত, ফলন মিলবে ছয়মাস পর্যন্ত