নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: হাওরের ৪০ ভাগ ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। এছাড়া এ অঞ্চলে ধান কাটার জন্যে শ্রমিক ও যন্ত্র যথেষ্ট রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী এসব তথ্য তুলে ধরেন। অনলাইনে অনুষ্ঠিত এ সভাটি সঞ্চালনা করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম।

সভায় জানানো হয়, চলতি বছর হাওরের ৭ জেলা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শুধু হাওরে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে।

বুধবার (২১ এপ্রিল) পর্যন্ত হাওরভুক্ত ৭ জেলায় ২ লাখ ৩১ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। যা শতকরা হিসাবে প্রায় ২৫ ভাগ। আর শুধু হাওরের ১ লাখ ৮০ হাজার ৭২৯ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে, যা শতকরা হিসাবে প্রায় ৪০ ভাগ।

গত বছরের মতো চলতি বছরেও হাওরের ধান কাটার জন্য একই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলা থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদেরকে নিয়ে আসা হয়েছে। এ মূহুর্তে হাওরে ধান কাটার জন্য শ্রমিকের কোন সংকট নেই। পর্যাপ্ত শ্রমিক রয়েছেন। একইসাথে, কম্বাইন হারভেস্টার, রিপারসহ পর্যাপ্ত ধান কাটার যন্ত্র হাওরে এ বছর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এবছর ধান চালের উৎপাদন বাড়াতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি বলে মন্তব্য করেন ড. আব্দুর রাজ্জাক। বলেন, আমাদের চেষ্টার কোন কমতি ছিল না। বেশি জমি চাষের আওতায় আনা, উন্নত জাতের ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। বীজ, সারসহ নানা প্রণোদনা কৃষকদেরকে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, হাইব্রিড ধানের বীজ সহায়তা বাবদ ৭৬ কোটি টাকার প্রণোদনা কৃষকদেরকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মীরা করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কঠোর পরিশ্রম করেছেন, কৃষকের পাশে আছেন। তারা নতুন উন্নত জাতের ধান চাষের জন্য চাষিদেরকে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি, প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি জানান, এসব উদ্যোগের ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। একই সাথে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে হাইব্রিডের আবাদ বেড়েছে। আশা করা যায়, গত বছরের তুলনায় এবছর বোরোতে ৯ থেকে ১০ লাখ টন ধান বেশি উৎপাদন হবে। এসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে ধান কাটায় এগিয়ে আসার পাশাপাশি যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতার আহ্বান জানান কৃষিমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: জমিতে শোভা পাচ্ছে বেগুনি ধান!

এ বছর সারাদেশে বোরোতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৮ লাখ ৫ হাজার ২০০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে। এ বছর বোরোতে ২ কোটি ৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

সভায় জানানো হয়, চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরের আরএডিপিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৮২টি প্রকল্পের অনুকূলে মোট ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। মার্চ ২০২১ পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি হয়েছে ৪৯.১০%, যেখানে জাতীয় গড় অগ্রগতি ৪১.৯২%। সভায় মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংস্থাপ্রধান, প্রকল্প পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, হাওরের ৪০ ভাগ ধান কর্তন সম্পন্ন হওয়ায় প্রাকৃতিক বিপরর‌্যয় থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে।