মাহমুদুন্নবী, পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: শত শত বছর থেকে মানুষ কৃষি কাজে পানি সেচের জন্য কৌশল ব্যবহার করে আসছে। এর মধ্যে অন্যতম পদ্ধতি ছিলো “দোন”। যার সাহায্যে ফসলের ক্ষেতে পানি সরবরাহ করা হতো। কালের বিবর্তনে আধুনিক সেচযন্ত্রের ভিড়ে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সেচ যন্ত্র ”দোন”।

আম অথবা কাঁঠালজাতীয় গাছের মাঝের অংশের কাঠ কেটে নিয়ে তার মাঝ খানে খোদাই করে ড্রেন তৈরী করে পানি সেচ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতো। কোন কোন স্থানে নারিকেল, তাল, সুপারি গাছ দিয়েও এ দোন তৈরী করা হতো। আবার কেউ কাঠের তক্তা দিয়েও এই দোন তৈরী করতো।

এই দোন দিয়ে ফসলি জমিতে পানি সেচ করলে খরচা অনেক কম হয়। ক্রস আকারে দুটি বাঁশের শক্ত খুঁটি মাটিতে পুঁতে তার সঙ্গে লম্বা অন্য একটি বাঁশ বেঁধে দেওয়া হয়। এক অংশে দোনের মাথায় অন্য অংশে মাথায় মাটির ভরা (ওজন) তুলে দিয়ে পানিতে চুবিয়ে তুললে একসঙ্গে পানি উঠে আসে। এভাবে অনবরত পানি সেচ দিলে দ্রুত সেচের কাজ হয়ে যায়।

পড়তে পারেন: হারিয়ে গেছে তেলবিহীন যান “গরুর গাড়ি”

পত্নীতলা উপজেলার প্রবীন কৃষকদের নিকট থেকে জানা যায়, আগেকার দিনে ফসলি জমিতে পানি সেচের জন্য টিন ও বাঁশের তৈরী অথবা টিন ও কাঠের তৈরী দোন ব্যবহার হতো। নদী, খালবিল বা জলাশয় থেকে কৃষকরা ফসলি জমি পানি সেচের জন্য এই দোন ব্যবহার করতো। উঁচু- নিচু জমিতে পানি সেচ দিতে দোন ছিলো অতুলনীয়। গ্রাম বাংলার কৃষকদের আবিষ্কার ছিলো এই দোন।

বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির সেচযন্ত্র যেমন, শ্যালো, ডিপ, এলএলপিসহ বিভিন্ন ধরণের সেচযন্ত্র আসায় সেই প্রাচীন যুগের কৃষকদের তৈরী গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী দোন বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

কৃষক হামিদুর রহমান বলেন, দিন যাচ্ছে দেশ আধুনিকতার ছোয়া পাচ্ছে। আমাদের বাপ-দাদারা এই টিন ও কাঁঠের তৈরী দোন ব্যবহার করে ফসলি জমিতে পানি সেচ করতো। এত খরচা অনেক কম হতো। আর এখন আধুনিকতার ছোয়ায় নতুন নতুন সেচযন্ত্র তৈরী হয়েছে যার ফলে খরচাও অনেক বেড়ে গেছে।

এবিষয়ে পত্নীতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ প্রকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, দেশে বর্তমানে সব জমি শতভাগ সেচের আওতায় আসায় দোন এর সাহায্যে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয়না। ফলে কৃষকরা এখন আর দোন ব্যবহার করে না।

এগ্রি