শীর্ষ চাল আমদানিকারক হতে

ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ২০২০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে থাইল্যান্ডের চাল রফতানি সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে আসার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। খাদ্যপণ্যটির রফতানি ২০ বছরের মধ্যে কমেছে এবং চলতি বছর শেষে এ পরিস্থিতি আরো জোরদার হতে পারে।সেইসাথে এই খাতে বড় পতনের শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে থাইল্যান্ডের রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।খবর রয়টার্স ও বিজনেস রেকর্ডার।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, দেশজুড়ে চলমান তীব্র খরা পরিস্থিতি চলতি বছর থাইল্যান্ডে চাল উৎপাদন ও রফতানি কমাবে। এর সঙ্গে আরো যুক্ত হয়েছে করোনা সংকট ও মুদ্রাবাজারে দেশটির মুদ্রা থাই বাথের শক্ত অবস্থান। এসব কারণ বছর শেষে থাইল্যান্ডের চাল রফতানি বাজারকে বড় পতনের মুখে দাঁড় করাতে পারে।

থাইল্যান্ডের রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর শেষে দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে চাল রফতানির সম্মিলিত পরিমাণ ৬৫ লাখ টনে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেটা বাস্তব হলে দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম চাল রফতানির রেকর্ড করবে থাইল্যান্ড। তবে দেশটির চাল রফতানি খাতের এ মন্দা ভাব অনুমেয় ছিল। চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, ২০২০ সাল শেষে থাইল্যান্ড থেকে ৭৫ লাখ টন চাল রফতানি হতে পারে। এটাও সাত বছরের মধ্যে থাইল্যান্ডের সবচেয়ে কম চাল রফতানির প্রাক্কলন ছিল। বছরের মাঝামাঝি সময়ে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, চলতি বছর থাইল্যান্ড থেকে আগের প্রাক্কলনের তুলনায় আরো ১০ লাখ টন কম চাল রফতানি হতে পারে।

থাইল্যান্ড বিশ্বের ষষ্ঠ শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী দেশ। তবে খাদ্যপণ্যটির রফতানিকারকদের বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় দেশটি ভারতের পর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। চীন ও আফ্রিকার দেশগুলোয় সবচেয়ে বেশি চাল রফতানি করেন থাই রফতানিকারকরা। চলতি বছর দেশটির চাল উৎপাদন ও রফতানি খাত নানামুখী সংকটে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন থাইল্যান্ডের রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট চোকিয়াত ওপাশোনগসি। তিনি বলেন, খরার কারণে থাইল্যান্ডে চাল উৎপাদন কমতির দিকে রয়েছে। করোনা মহামারী খাদ্যপণ্যটির সরবরাহে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। পরিস্থিতি আমাদের অনুকূলে নেই। এ অবস্থায় চলতি বছর চাল রফতানি দুই দশকের সর্বনিম্নে নেমে আসতে পারে। এর আগে ২০০০ সালে থাইল্যান্ড থেকে চাল রফতানি কমে ৬১ লাখ ৫০ হাজার টনে নেমে এসেছিল।

দেশটির কৃষিপ্রধান এলাকাগুলোয় দীর্ঘদিন ধরে তীব্র খরা চলছে। বৃষ্টির দেখা মেলেনি। তাপমাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় রয়েছে বাড়তি। এ পরিস্থিতিতে এবারের মৌসুমে থাইল্যান্ডে চাল উৎপাদন আগের তুলনায় ৫০ লাখ টন কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এটা দেশটির কৃষি খাতের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এর জের ধরে স্বাভাবিকভাবেই দেশটিতে চালের দাম বেড়ে যাবে। বাজার আরো প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। উৎপাদন হ্রাসের কারণে বছর শেষে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশটির চাল রফতানি খাতেও। একই সঙ্গে করোনা মহামারীতে সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় ও মুদ্রাবাজারে থাই বাথের শক্ত অবস্থানের কারণে দেশটি থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি আরো কমে আসতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) থাইল্যান্ড থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৩১ লাখ ৪০ হাজার টন চাল রফতানি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত জানুয়ারি-জুন সময়ে দেশটি থেকে কৃষিপণ্যটির রফতানি এক-তৃতীয়াংশ কমেছে।

তবে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর শেষে থাইল্যান্ড থেকে সব মিলিয়ে ৯০ লাখ টন চাল রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্য দিয়ে দেশটির চাল রফতানিতে টানা তিন বছরের মন্দা ভাব কাটতে পারে। গত বছর থাইল্যান্ড মোট ৭০ লাখ টন চাল রফতানি করেছিল। তবে খাতসংশ্লিষ্টদের মত, খরা ও করোনার কারণে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শিগগিরই থাইল্যান্ডের চাল রফতানির এ পূর্বাভাস কমিয়ে আনবে ইউএসডিএ।

২০ বছরের সর্বনিন্মে থাইল্যান্ডের চাল রফতানি, বড় পতনের শঙ্কা শিরোনামে সংবাদের তথ্য বণিক বার্তা থেকে নেওয়া হয়েছে।