মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বিভিন্ন সময় জেলেদের জালে বড় বড় মাছের দেখা মেলে। তেমনই বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বাংলাদেশ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে (বিএফডিসি) পাইকারি বাজারে চারটি দাতিনা মাছ বিক্রি হয়েছে ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকায়।

মাছ চারটির ওজন হয়েছে ৯০ কেজি। বিএফডিসি বাজারের মৎস্য পাইকার মোস্তফা আলম নগদ টাকায় মাছগুলো ক্রয় করেন। নজরুল ইসলাম জানান, তার এক দাদোনভোগী জেলে বেল্লাল হোসেন সুন্দরবন সংলগ্ন সাগরে কোড়াল মাছ ধরার জন্য মঙ্গলবার রাতে জাল ফেলে ২ ঘণ্টা পর জাল উঠালে ওই জালে চারটি মাছ ধরা পরে।

পড়তে পারেন: শীতকালে মাছের খাবার, অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় যত্ন জানুন

জেলেরা ওই মাছ পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাটে পাইকারি মাছ বাজারে আনলে আড়ৎদারের মাধ্যমে পাইকারি বাজারে মাছ চারটি বিক্রির জন্য উঠাতে মাছ চারটি ক্রয়ের জন্য ১২জন পাইকার অংশ নেয়। পরে সর্বোচ্চ ডাকে মোস্তফা আলম মাছ চারটি ক্রয় করেন। মাছ চারটি প্রতি মণ সাত লাখ ৯০ হাজার টাকা করে দাম পড়েছে।

মোস্তফা আলম বলেন, ‘এই মাছ আমার বৈজ্ঞানিক নাম জানা নেই। তবে জেলেদের ভাষায় অনেকে বলে দাতিনা আবার কেউ বলে ভোল মাছ। মাছগুলো আমি ভারতের বাজারে বিক্রি করব। এই মাছে আমার লাখ টাকার মতো ব্যবসা হতে পারে। মাছগুলো দেখতে কোরাল মাছের মতো।’

বিশেষ করে কাঁটার জন্য মাছ খেতে ভয় পান এমন মানুষের কাছে দাতিনা মাছের আলাদা কদর রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের এই মাছটির একদিকে যেমন কাঁটা কম তেমনি খেতেও সুস্বাদু। ২০২১ সালের শুরুর দিকে বিরল প্রজাতির এই মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা। গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন ইনস্টিটিউটের খুলনার পাইকগাছাস্থ লোনাপানি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. লতিফুল ইসলাম।

পড়তে পারেন: মাছের কেজিতে বেড়েছে ৮০ টাকা, খুশি চাষিরা

ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, গবেষণার জন্য এ মাছের পোনা চার বছর আগে খুলনার শিবসা নদী থেকে সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীকালে কেন্দ্রের পুকুরে তা লালনপালন করে আবদ্ধ জলাশয়ে প্রচলিত ভাসমান খাবারে অভ্যস্তকরণের মাধ্যমে প্রজননক্ষম মাছে পরিণত করা হয়েছে। দাতিনা মাছের এ প্রজাতিটি দেখতে সাদা ও গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের হয়। তবে সর্বোচ্চ ওজন হয়ে থাকে ১ হাজার ২০০ গ্রাম। সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম হচ্ছে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস অর্থাৎ এ মাছটি শীতকালে প্রজনন করে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই বছর বয়সে ২০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজন হলেই এরা প্রজননক্ষম হয়ে যায় এবং ডিম ধারণ ক্ষমতা গড়ে ৩৫০০ ডিম/গ্রাম। উপকূলীয় অঞ্চলে দাতিনার তিনটি প্রজাতি পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এ মাছটি ‘সাদা দাইতনা’ নামে অধিক পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম pomadasys hasta|

পড়তে পারেন: মাছ চাষে কোটিপতি ফরহাদ, চলতি বছরে ৭০ লাখ!

দাতিনা মাছের পোনা উৎপাদনে সফলতা প্রসঙ্গে গবেষক দলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. লতিফুল ইসলাম জানান, গত চার বছর যাবৎ মাছটির কৃত্রিম প্রজনন নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। গত প্রজনন মৌসুমে পোনা উৎপাদনে প্রাথমিক সফলতা অর্জিত হলেও পরবর্তীকালে পোনা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ বছর মাত্র এক জোড়া প্রজননক্ষম দাতিনা মাছকে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে লক্ষাধিক পোনা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, উৎপাদিত পোনা নিয়মিত খাবার নিচ্ছে এবং সুস্থ-সবল আছে। চলতি জানুয়ারি মাসে পর্যায়ক্রমে অধিকসংখ্যক মাছকে প্রজনন করিয়ে ব্যাপক পোনা উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

এই বিজ্ঞানী বলেন, পরিপক্ক মাছ পুকুর হতে সংগ্রহ করে গবেষণা কেন্দ্রের হ্যাচারিতে হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে এবার সর্বাধিক পোনা উৎপাদন সফলতা অর্জিত হয়েছে। হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনাকে এখন রটিফার জাতীয় খাবার দেওয়া হচ্ছে। উৎপাদিত রেণু পোনার বয়স এখন ১২ দিন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিঠাপানির মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে লোনাপানির মাছের কৃত্রিম প্রজনন করানো কষ্টসাধ্য। লোনাপানির মাছের ক্ষেত্রে এর পোনার খাদ্য হিসেবে লাইভ ফিড প্রয়োজন হয়।

পড়তে পারেন: ১২১টি তেলিয়া মাছে রাতারাতি কোটিপতি জেলে

সংশ্লিষ্ট গবেষকরা জানান, বিশ্বের দু-একটি দেশে দাতিনার খাদ্য ও খাদ্যাভাস এবং ডিম ধারণ ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হলেও এর প্রজনন সম্পর্কিত কোনো গবেষণা-তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিবেচনায় দাতিনা মাছের এ প্রজনন সফলতা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, দাতিনা মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উত্পাদনের ফলে এর পোনা প্রাপ্তি সহজ হবে এবং ঘেরে অন্যান্য মাছের সঙ্গে মিশ্রচাষ করা সম্ভব হবে। ফলে চাষিরা অধিক লাভবান হওয়ার পাশাপাশি মাছটির জীববৈচিত্র্য সমুন্নত থাকবে।

৪টি মাছের দাম ১৮ লাখ টাকায় বৃহস্পতিবার (০৪ নভেম্বর ২০২১) দুপুর ১টার দিকে পাইকারি বাজারের আর কে ফিসের মৎস্য আরতদার নজরুল ইসলাম প্রকাশ্যে ডাকে মাছ চারটি বিক্রি করেন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ