চিনি

আন্তর্জাতিক কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ চিনি উৎপাদক দেশ ভারত। বর্তমান মৌসুমের চেয়ে আগামী মৌসুমে দেশটির চিনি উৎপাদন পাঁচ লাখ টনেরও বেশি বাড়বে বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশন (আইএসএমএ)।

আইএসএম ‘র সর্বশেষ প্রাক্কলনে জানায়, চলতি বছরে দেশটির আখ আবাদ ৪ শতাংশ বেড়েছে। এতে পরবর্তী মৌসুমে ভারতের চিনি উৎপাদন ৩৯৯ দশমিক ৯৭ লাখ টনে দাঁড়াবে বলে আশাবাদ আইএসএমএর। উল্লেখ্য, গত মৌসুমে ভারতে চিনি উৎপাদন হয়েছিল ৩৯৪ লাখ টন।

এক বিবৃতিতে আইএসএমএ জানায়, চলতি মৌসুমের ১০ জুলাই নাগাদ প্রায় ৩৪ লাখ টন আখ ইথানলে রূপান্তর করা হয়েছে। ২০২২-২৩ মৌসুমে ৫৪৫ কোটি লিটার ইথানল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ভারতের। এতে ইথানল তৈরিতে আখের ব্যবহার ১২ শতাংশ বেড়ে ৪৫ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে।

পড়তে পারেন: চিনি রফতানি বন্ধ করবে ভারত

স্থানীয় বাজারে চিনির চাহিদা ২৭৫ লাখ টন। আশা করা যাচ্ছে পরবর্তী মৌসুমে প্রায় ৮০ লাখ টন অতিরিক্ত চিনি রফতানি করা যাবে।

এরআগে চলতি বছরের জুনে নতুন মৌসুমেও চিনি রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে বলে জানিয়েছিল দেশটি। তখন ইন্ডাস্ট্রি ও সরকারসংশ্লিষ্টরা এ তথ্য জানিয়েছেন।

ইন্ডাস্ট্রি ও সরকারি সূত্র বলছে, আগামী মৌসুমে যে পরিমাণ চিনি রফতানির পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তা চলতি মৌসুমের মোট রফতানির এক-তৃতীয়াংশেরও কম। চিনি রফতানি বন্ধের উদ্দেশ্য স্থানীয় বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত এবং পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণ। এমনই খবর প্রকাশ করেছে রয়টার্স।

২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে দেশটি চিনি রফতানি ৬০-৭০ লাখ টনে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে। চলতি বছরের অক্টোবরে এ মৌসুম শুরু হয়ে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে শেষ হবে।

ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে সাদা চিনির দাম প্রায় সাড়ে পাঁচ বছরের সর্বোচ্চে অবস্থান করছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ রফতানিকারক দেশটি রফতানি কমিয়ে দিলে তা বাজারকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলবে।

পড়তে পারেন: চিনি রপ্তানিতে রেকর্ড ভারতের, কিনছে বাংলাদেশ

এদিকে রফতানিতে বিধিনিষেধের এ খবরে আন্তর্জাতিক বাজারে জুলাইয়ে সরবরাহ চুক্তিতে অপরিশোধিত চিনির দাম ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি পাউন্ডের মূল্য স্থির হয়েছে ১৮ ডলার ৯৩ সেন্টে। অন্যদিকে আগস্টে সরবরাহ চুক্তিতে সাদা চিনির দাম ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি টন লেনদেন হয়েছে ৫৬৮ ডলার ৭০ সেন্টে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শুধু চিনির দামই বাড়েনি, ভারতের শীর্ষস্থানীয় চিনি উৎপাদন কোম্পানিগুলোর শেয়ারও কমে গিয়েছে। শ্রী রেনুকা সগারস, বাজাজ হিন্দুস্তান সুগার ও ই আই ডি প্যারি (ইন্ডিয়া) লিমিটেডের শেয়ার ২-৬ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

বৈশ্বিক চিনি উৎপাদন ও রফতানির তালিকায় প্রথম ব্রাজিল। কিন্তু গত বছর থেকেই বৈরী আবহাওয়ায় দেশটির উৎপাদন ধসের মুখে। চলতি বছর পরিস্থিতি কিছুটা ইতিবাচক দিকে মোড় নিলেও তা আশাব্যঞ্জক নয়। এ বছরও দেশটিতে উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা। তার ওপর বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কয়েক বছরের সর্বোচ্চে অবস্থান করছে। এ বিষয়গুলোর কারণে চলতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে চিনিকলগুলো বেশি লাভের আশায় আখ থেকে চিনির পরিবর্তে ইথানল উৎপাদনে ঝুঁকছে। এটি থেকে পরবর্তী সময়ে গ্যাসোলিনের মতো জ্বালানি উৎপাদন করা হয়।

পড়তে পারেন: বাড়লো পেঁয়াজ তেল চিনি ডিম মুরগির দাম

ব্রাজিলে চলতি মৌসুমে চিনি উৎপাদনে ইতিবাচক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কিন্তু ভারত যদি রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে, তবে বাজারে স্থিতি ফিরবে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। বরং দাম উল্টো বেড়ে যেতে পারে।

ভারতের এক ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রফতানিতে এমনভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা প্রয়োজন, যাতে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি না হয়।

সূত্র বলছে, আগামী মৌসুমে প্রায় ৬০-৭০ লাখ টনের মধ্যেই চিনি রফতানি সীমাবদ্ধ রাখা হবে। তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ মৌসুম শুরুর কিছু আগেই নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে রফতানি কোটা নির্ধারণ করবে সরকার।

আবহাওয়া বিভাগের তথ্য বলছে, ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশে সবচেয়ে বেশি চিনি উৎপাদন হয়। বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এ প্রদেশে বৃষ্টিপাতের গড় পরিমাণ ৬০ শতাংশেরও নিচে অবস্থান করছে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৪ মে চিনি রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে নয়াদিল্লি। ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এমন বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো। এতে রফতানির পরিমাণ ১০ লাখ টন বেঁধে দেয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ