নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়িত ফিড দ্যা ফিউচার বাংলাদেশ অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড নিউট্রিশন অ্যাক্টিভিটি (অ্যাকোয়াকালচার অ্যাক্টিভিটি) প্রকল্পের মাধ্যমে এক প্লাটফর্মে একেবারে মাছ চাষের শুরু থেকে বাজারজাতসহ ভোক্তার টেবিল পর্ন্ত সব ধরণের সহযোগিতা ও সেবা দেয়া হচ্ছে।

আধুনিক মাছ চাষে চাষীরা এমন সেবা পাওয়ায় দেশে বাড়ছে মান সম্মত মাছের উৎপাদন। অপরদিকে মৎস্য খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারাও হচ্ছেন উপকৃত। ভোক্তারা টেবিলে পাচ্ছেন স্বাস্থ্য সম্মত মাছ।

সোমবার রাজধানী ঢাকায় সিক্স সিজন হোটেলে “ওয়ার্কশপ অন সিনার্জিস্টিক পার্টনারশীপ” শিরোনামে আয়োজিত কর্মশালায় এসব কথা বলেন বক্তারা। কর্মশালায় জানানো হয়, তিন লাখ ৮৫ হাজার মাছ চাষীসহ মৎস্য খাতের সাথে যুক্ত ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, ভোক্তাদের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এক প্লাটফর্মে সেবা দেয়া হচ্ছে।

বক্তারা প্রকল্পের উদ্দেশ্য তুলে ধরে বলেন, চলতি বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ অ্যাকোয়াকালচার অ্যাক্টিভিটি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। প্রকল্প শেষেও এর মাধ্যমে শুরু করা কার্যক্রম যেন অব্যাহত থাকে, সে জন্য প্রকল্পের অংশীদারদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করাই এই কর্মশালার উদ্দেশ্য।

কর্মশালায় প্রকল্প পরবর্তী সময়ে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে মৎস্য খাতকে কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায়, অংশগ্রহণকারীরা সে বিষয়ে আলোচনা করেন।

সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এ কর্মশালায় বাংলাদেশ অ্যাকোয়াকালচার অ্যাক্টিভিটি প্রধান ড. মনজুরুল করিম উদ্বোধনী বক্তব্য দেন।

“ওয়ার্কশপ অন সিনার্জিস্টিক পার্টনারশীপ” শিরোনামে আয়োজিত কর্মশালা ড. করিম বলেন, “প্রকল্পটি মূলত বেসরকারি খাতের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করে। মৎস্য খাতের প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য এ প্রকল্পের মাধ্যমে নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ সুফল বয়ে এনেছে”। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পটি এর মধ্যে ২৩ জেলার ৩৮৫,০০০ মৎস্যচাষীদের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে। তিনি এ অর্জনের জন্য অংশীদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা উল্লেখ করে, তাদের অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানান।

মূল উপস্থাপনায় সিনিয়র মার্কেট সিস্টেম স্পেশালিস্ট মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, “অ্যাকোয়াকালচার অ্যাক্টিভিটির মাধ্যমে বেসরকারি খাতে যেসব পার্টনারশীপ গড়ে উঠেছে, তারা প্রত্যেকেই ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের ব্যবসা বৃদ্ধির হার ন্যূনতম ১০ থেকে ১৫ শতাংশ, কোন কোন ক্ষেত্রে এ হার আরও বেশি”।

অংশীদারদের পক্ষে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে গিয়ে মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, সিনিয়র ম্যানেজার, মার্কেট ডেভেলপমেন্ট, পেট্রোকেম বাংলাদেশ লিমিটেড, বলেন “অ্যাকোয়াকালচার অ্যাক্টিভিটির সাথে কাজ করতে গিয়ে প্রথম আমরা নারী উদোক্তাদের নিয়ে উইমেন মাইক্রোফ্রাঞ্চাইজি ও পরবর্তীতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার গড়ে তুলেছি। মৎস্য খাতে আমাদের অভিজ্ঞতা ছিলো না। কিন্তু অ্যাকোয়াকালচার অ্যাক্টিভিটির- কারণে আমরা মৎস্য খাতে কাজ শুরু করেছি এবং আমাদের একদম গ্রামীন পর্যায়ে ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে পেরেছি”।

রোমানা আখতার তুলি, অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট, ব্যাংক এশিয়াও অনুষ্ঠানে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। “এই পার্টনারশিপের কারণে আমরা মৎস্যখাতে কাজ শুরু করতে পেরেছি, নতুন গ্রাহক পেয়েছি। আমাদের হাতে ঋন দেয়ার মতো টাকা ছিল। আগে আমরা এই টাকা ব্যক্তি পর্যায়ে ঋণ প্রদান করতাম। অ্যাকোয়াকালচার অ্যাক্টিভিটির সহায়তায় আমরা মৎস্য চাষীদের জন্য আমানতবিহীন ছোট আকারে ক্ষুদ্রঋণ দেয়া শুরু করি, আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার অংশ হিসেবে। পরবর্তীতে মৎস্য চাষীদের ফিশ কার্ড চালু করি যার মাধ্যমে মৎস্য চাষীরা নির্দিষ্ট দোকান থেকে টাকা ছাড়াই মাছের খাবার, ওষুধের মতো জরুরি উপাদানগুলো কিনতে পারে”।

কর্মশালায় ফিড দ্যা ফিউচার বাংলাদেশ অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড নিউট্রিশন অ্যাক্টিভিটি প্রকল্পের ঢাকার অংশীদারী প্রতিষ্ঠান সমূহের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিগন অংশগ্রহন করেন। তারা এই প্রকল্পের সাথে কাজের মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞান এবং তা কাজে লাগানোর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন প্রাইভেট সেক্টরের পেট্রোকেম লিমিটেড, আফতাব ফিড প্রোডাক্টস লিমিটেড, এসকেএফ, ব্রাদার্স সী-ফুড লিমিটেড, গ্রিনডেল বাংলাদেশ লিমিটেড, কোস্ট ফাউন্ডেশন, ব্যাংক এশিয়া, দূরন্ত টিভি, সময় প্রকাশন, বিএসএফএফ, ব্র্যাক হ্যাচারি, সিটি ব্যাংক, সুশীলন, আইমেক্স-প্রো, ম্যাট্রিক্স বিজনেস ডেভেলপমেন্ট, কাস ট্রেড, গড়াই ফিল্মস, এআরআইটিএস লিমিটেড, মার্জেন।

পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে পেট্রোকেম লিমিটেড এবং ম্যাট্রিক্স বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।