মো. আতিকুল ইসলাম

২০০৪ সাল হতে দেশব্যাপী মৎস্য, পোল্ট্রি ডেইরি খাতে সাশ্রয়ী দামে মানসম্মত ওষুধ পরামর্শমূলক সেবা দেয়ার মাধ্যমে দেশের ওষুধ শিল্পের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড এর এগ্রোভেট শাখার যাত্রা শুরু

ইতিমধ্যে খামারি ও মৎস্য চাষিদের আস্থা অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত কয়েকবছরে অপসোনিন এগ্রোভেট’র দেশব্যাপী যে বিস্তৃতি হয়েছে তার নেতৃত্বে রয়েছেন মো. আতিকুল ইসলামমৎস্য ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে পড়াশোনা করা আতিকুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘ বছর ধরে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন

বর্তমানে অপসোনিন এগ্রোভেট শাখায় ম্যানেজার (পিএমডি)পদে দায়িত্ব পালন করছেন মো. আতিকুল ইসলাম

অপসোনিন এগ্রোভেট’র এগিয়ে চলার গল্প, পণ্যের মান ও খামারিদের নিয়ে এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর সাথে কথা বলেছেন অভিজ্ঞ এ ঊর্ধতন কর্মকর্তা। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আবু খালিদ। প্রশ্ন ও উত্তর আকারে সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কী লক্ষ্যে অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড এগ্রোভেট নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

আতিকুল ইসলাম: শুরুতেই বলবো প্রাণি ও মৎস্য খাতে ভালো মানের ওষুধ সাশ্রয়ী মূল্যে খামারিদের কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে অপসোনিন ফার্মা’র প্রয়াত চেয়ারম্যান জনাব আব্দুল খালেক খান এর নেতৃত্বে এই এগ্রোভেট বিভাগটি যাত্রা শুরু করে।

আপনি জেনে থাকবেন যে, এগ্রোভেট’র সাথে একটা বড় সম্পর্ক আছে মানুষের স্বাস্থ্যের। আর মানুষের স্বাস্থ্যের অন্যতম প্রধান চাহিদা আমিষের ঘাটতি মেটাতে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছে প্রাণিজ আমিষ অর্থাৎ মাছ, মুরগি, ডিম, মাংস।

এই প্রাণিজ আমিষের যোগান দিতে খামারের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, প্রাণিজ আমিষ যোগান দেয়া এসব ফার্মিং প্রতিষ্ঠান কতটুকু আধুনিক পদ্ধতিতে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করতে পারছে। উত্তরটা কিন্তু ‘সীমত’ হবে।

এ বিষয় নিয়েই কাজ করছি আমরা। নিরাপদ খাদ্য যেন মানুষ পায় সেই লক্ষ্য নিয়ে গত ২০১২ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছি। শুধু ব্যবসা বা অর্থ উপার্জন প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য নয়।

অপসোনিন এগ্রোভেট’র মূল ফোকাস খামারিদের লাভবান করার পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং নন অ্যান্টিবায়োটিক ফিড এডিটিভস ও খাদ্য নিরাপত্তা। মূলত এসব কারণেই অপসোনিন এগ্রোভেট এখন খামারীদের কাছে একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: খামারে এ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও অপসোনিনের কৌশল নিয়ে কিছু বলবেন।

আতিকুল ইসলাম: প্রাণি অসুস্থ হলেই বা অসুস্থ হওয়ার পূর্বেই খামারিদের অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধ ব্যবহারের যে প্রবণতা রয়েছে সেখান থেকে কীভাবে বের হয়ে আসা যায় সেই কৌশল নিয়ে কাজ করছি।

খেয়াল করলে দেখা যাবে, প্রাণি রোগাক্রান্ত হওয়ার আগেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যববহার শুরু করেন খামারিরা। এতে একদিকে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার হচ্ছে অপরদিকে দিনদিন অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হারিয়ে যাচ্ছে। আর এর বিরুপ প্রভাব পড়ছে মানুষের শরীরে। এ বিষয়ে আমরা খুব সতর্ক।

ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুর রাকিব খান স্যার এ বিষয়ে আমাদের প্রতিমূহুর্তে সচেতন করে যাচ্ছেন। উনি আমাদের সব সময় একটা ভালো পণ্য দেয়ার জন্যে বলেন। আমরাও সেই নির্দেশনা নিয়েই কাজ করি।

আমাদের সুযোগ হয়েছিলো ইউরোপিয়ান দেশগুলো পরিদর্শন করার। তাদের অনেক বড় খাদ্যশিল্প (ফুড ইন্ড্রাস্ট্রি) হওয়ার পরেও তারা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে না। কীভাবে পারছে? এগুলোও আমাদের মাঝে কাজ করছে। আমরা ওইসব দেখে অনেক আইডিয়া ডেভলপ করতে পারছি।

আমরা খামারিদের রোগ প্রতিরোধক নন অ্যান্টিবায়োটিক ফিড এডিটিভস ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। এলক্ষ্যে বেশ কয়েকটি পণ্যেও বাজারে নিয়ে আসছি। উন্নত দেশের গবেষণালব্ধ পণ্য এগুলো।

এসব পণ্য ব্যবহারের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া কীভাবে খামার পরিচালনা করা যায় সেই চিত্রও দেখতে পাবো। ইতিমধ্যে কিন্তু আমাদের এ কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। অনেকেই লাভবান হচ্ছেন, কারণ অ্যান্টিবায়োটিকে খরচ বেশি।

মজার বিষয় হলো আমাদের ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠান হওয়ায় অ্যান্টিবায়োটিকের অভাব নাই তারপরও খাদ্য নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা প্রয়োজনহীন অ্যান্টিবায়োটিককে না বলছি।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: অপসোনিন এর পণ্য কেন খামারিরা ব্যবহার করবে?

আতিকুল ইসলাম: এক কথায় যদি বলি তাহলে বলবো সাশ্রয়ী মূল্যে শতভাগ মান ও গুণসম্মত পণ্যের কারণে অপসোনিন এর পণ্যে খামারিরা ব্যবহার করবেন। কোয়ালিটির ধাপগুলো আমরা যেভাবে মেইনটেইন করি সেখানে শতভাগ মান সম্মত পণ্য উৎপাদন হয়। এরফলে খামারিদের আয়ও ভালো হচ্ছে।

অপসোনিন মানব স্বাস্থ্যের ওষুধ তৈরির বড় প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এখান থেকে বেশ সুবিধাও পাওয়া যায়। একারণে এগ্রোভেট এর ওষুধ স্বল্প খরচে ভালো মানের করা সম্ভব হয়। এর সুবিধাটা খামারিরাও পেয়ে থাকেন।

এছাড়া আমরা যেসব পণ্য বিদেশ থেকে নিয়ে আসি সেগুলো সরাসরি খামারি পর্যায়ে না দিয়ে নিজস্বভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করি। তারপর মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ করি। এতে খামারিরাও খুশি ও সন্তুষ্ট। এভাবেই খামারিদের মন জয় করছি।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলবেন।

আতিকুল ইসলাম: সংক্ষেপে যদি বলি তাহলে বলবো, খুব শিগগিরই আমরা ওই জায়গায় পৌঁছাতে পারবো যেখানে খামারিরা চিন্তা করবে যে, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে যদি আমার ফার্ম পরিচালনা করতে চাই তাহলে এক নম্বর প্রতিষ্ঠান হিসেবে অপসোনিন কে বেছে নিতে হবে।

মূল কথা হলো নিরাপদ প্রাণিজ খাদ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করছে অপসোনিন এগ্রোভেট। আমাদের শুরু হয় সাশ্রয়ী দামে ভালো মানের পণ্য খামারিদের কাছে সরবরাহ, এরপর যুক্ত হয় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে কাজ।

ডিমডি স্যারের নির্দেশিত “নৈতিকতার পয়েন্ট অব ভিউ’ থেকেই আমরা নিরাপদ খাদ্যের পথে হাঁটছি ২০১২ সাল থেকে। নিরাপদ প্রাণিজ খাদ্য তৈরিতে অপসোনিন এর পণ্যের বিকল্প নাই সেই জায়গায় আমরা নিজেদের নিয়ে যেতে কাজ করছি।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: খামারিদের কল্যাণে কী কী কাজ করছে অপসোনিন ফার্মা এগ্রোভেট।

আতিকুল ইসলাম: আমাদের মূল ফোকাস কিন্তু খামারিদের দক্ষ, সচেতন ও লাভজনক করে তোলা। এ লক্ষ্যে দেশব্যাপী খামারিদের নিয়ে বছরে গড়ে প্রায় ৬ হাজারের মতো সম্মেলন করা হয়।

এসব সম্মেলনে খামার কীভাবে করতে হয়, খামার করতে গিয়ে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হবে এবং সেই সব সমস্যা সমাধানের কৌশল কী আমরা তা বলে ও শিখিয়ে দিচ্ছি।

আমাদের কর্মীরা খামারির কাছে গিয়ে সমস্যার কথা শুনছেন এবং সেখান থেকে সমস্যার ছবি তুলে টেকনিক্যাল পার্সনের (ডিভিএম) কাছে পাঠাচ্ছেন।

টেকনিক্যাল পার্সন সঠিক পরামর্শটি আমাদের কর্মীর কাছে দিচ্ছেন আর কর্মী সেই সেবা খামারিকে দিচ্ছেন। এভাবে একটা সার্কেলের মধ্যে খামারিকে সরাসারি সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কখনও কখনও সেই খামারে ছুটে যাচ্ছেন আমাদের টেকনিক্যাল এক্সপার্টগণ।

আমরা সব সময় বিশ্বাষ করি খামারিদের উন্নত করা ছাড়া এই শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। একারণে আমরা ম্যানেজিং প্রোডক্টকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। যেন খামারি লাভবান হন।

সারা বাংলাদেশে ২২জন ভেটেরিনারিয়ান ও ১১জন ফিসারিজ এক্সপার্ট রয়েছেন। যারা দ্রুত মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতে সমস্যার সমাধান দিতে কাজ করে যাচ্ছেন।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পোল্ট্রি শিল্পকে এগিয়ে নিতে আপনার পরামর্শ কী?

আতিকুল ইসলাম: এখাতে সরকারের বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। এখানে দরকার ওয়ান স্টপ সার্ভিস। যেমন ধরুন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো ‘তুমি পোল্ট্রি পণ্য রপ্তানী করতে চাও, পারবে, আমি তোমাকে ভরসা দিচ্ছি। তবে এই এই মান ও শর্ত মানতে হবে।’

এতে এক শ্রেণির মানুষ উদ্বুদ্ধ হবে। আমি দশটা খামারিকে গিয়ে বলতে পারব। তখন তারাও দেখবে যে হ্যাঁ এ্যান্টিবায়োটিক মুক্ত খামার পরিচালনা করে ভাল আয় করাও সম্ভব। সরকারের এই সাপোর্ট এ শিল্পকে কোথায় নিয়ে যাবে সরকারও নিজে বুঝতে পারছে না। বর্তমান সময়ে এই সাপোর্ট জরুরি।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: খামারি ও মৎস্য চাষিদের পরামর্শ কী।

আতিকুল ইসলাম: খামারিকে বেছে নিতে হবে কোনটা ভালো পণ্য ও কোনটা মন্দ। তবে এই জায়গাতেই দূর্বলতা রয়েছে, বেশিরভাগ খামারিরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। আমি বলবো যাচাই বাছাই করে যেন সঠিক পণ্যটি খামারি বেছে নেন।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বর্তমানে অপসোনিন ফার্মা এগ্রোভেট শাখার পণ্যের সংখ্যা কত?

আতিকুল ইসলাম: আমাদের মোট পণ্য রয়েছে ১৪০ এর মতো। সব প্রাণি ও মৎস্য খাতের চিকিৎসার বিষয়ে সম্পূর্ণ সমাধান রয়েছে। বলা যেতে পারে এক ঠিকানাতেই খামার সম্পর্কিত সকল সমস্যার সমাধান দিচ্ছে অপসোনিন এগ্রোভেট।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আপনাকে ধন্যবাদ।

আতিকুল ইসলাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।