ভারতে গরু জবাই, পশু

মন্তব্য প্রতিবেদন ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: শাহ এমরানভারতে গরু জবাই, পশু কেনাবেচায় নিষেধাজ্ঞা বাতিল ও বাংলাদেশের মাংস শিল্পের ভবিষ্যত শিরেনামের লেখাটি লিখেছেন মো. শাহ এমরান, স্বপ্ন ডেইরি’র স্বত্বাধিকার ও তরুণ শিক্ষিত উদ্যোক্তা।

বৃহস্পতিবার ৮ই আগষ্ট, ২০১৯ ভারতে জবাইয়ের উদ্দেশ্যে গবাদি পশু কেনাবেচার ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে মোদী সরকার।এর মাধ্যমে জবাইয়ের জন্য গবাদি পশু কেনাবেচায় আর কোনো আইনি বাধা রইলো না।

২০১৬ সনে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে বলেছিল, ‘গবাদি পশু হত্যা এবং পরিবহণের উপরে বিধিনিষেধ আরোপ করে রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠাল কেন্দ্র। কুরবানির ঈদে অবাধে গরু, বাছুর, উট এবং অন্যান্য পশু নিধন যেন না হয়, সে জন্য কেন্দ্রীয় প্রাণী কল্যাণ বোর্ড নির্দেশ দিয়েছে।’

পত্রিকাটি জানায়, গত ৪ জুলাই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মুখ্য সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং রাজ্য প্রাণীসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠিয়েছেন ভারতীয় প্রাণী কল্যাণ বোর্ডের সচিব এম রবিকুমার। কুরবানির ঈদের কথা উল্লেখ করেই চিঠিটি লেখা হয়েছিলঃ

বোর্ডের সচিব লিখেছিলেন: ‘শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সবক’টি রাজ্য সরকারকেই ভারতীয় প্রাণী কল্যাণ বোর্ড এই চিঠি পাঠিয়েছে। রাজ্য সরকারগুলিকে কেন্দ্রীয় বোর্ডের স্পষ্ট নির্দেশ, কোথাও কুরবানির জন্য উট নিধন করতে দেওয়া দেওয়া যাবে না।



যে সব রাজ্যে গো-হত্যা রোধ আইন বলবৎ রয়েছে, সেই সব রাজ্যে গরু কুরবানিও চলবে না। কুরবানির ঈদের আগে যারা অবৈধভাবে পশু পরিবহণ করছেন এবং ঈদের দিন যারা আইন ভাঙবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কী ব্যবস্থা সরকার নিল, তাও বিশদে কেন্দ্রীয় বোর্ডকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।’

মুলত মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতীয় মুসলমানদের জন্য গরু জবাই ও কেনাবেচায় যে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেই আদেশই আজকে বাতিল করে দিল মোদী সরকার। ২০১৭ তে একবার দেশেটির সুপ্রীম কোর্ট ৩ মাসের জন্য এই আদেশটি বাতিল করে দিয়েছিল।

বর্তমান এই আদেশের ফলে ভারতে ১৩৯ কোটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২০ কোটি মুসলমান তাদের পবিত্র ঈদ উল আযহায় পশু কোরবানী করতে পারবে এবং পশু কেনাবেচাও করতে পারবে। এই আদেশের পর থেকে আজকে (বৃহস্পতিবার ৮ই আগষ্ট) কলকাতায় ঈদ উল আযহা উপলক্ষ্যে জমে উঠেছে কোরবানীর পশুর হাট।

ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু পাঠানোর আইনী ঝামেলা ও প্রক্রিয়া ফলে এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গেলো।

অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধের আদেশের পর থেকেই হাজার হাজার নতুন উদ্যোগক্তা সৃষ্টি হয়েছে। বিগত ৭ বছরে দেখা গেছে খামারের সংখ্যা ৫৫ হাজার থেকে প্রায় ৪.৫ লাখে উন্নীত হয়েছে। শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়ে এবং বিদেশে থাকেন অনেক প্রবাসীরা ও বিনিয়োগ করেছে এই শিল্পে।

২০০৮ সনে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু আসতো প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ। ২০১৮ তে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মাংসের চাহিদা বাড়া সস্ত্বেও ভারত থেকে গরু আমদানী কিন্তু কমে এসেছে মাত্র ৬ লাখে। বাংলাদেশ মাংস রপ্তানী করার ভবিষ্যত পরিকল্পনায় এখন।

এ অবস্থায় মোদী সরকারের এই মাংস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আদেশ বাতিল ঘোষনা বাংলাদেশে দেশে মাংস শিল্পে কতটা প্রভাব ফেলবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

ভারতীয় মোদি সরকারের এহেন সিদ্ধ্যান্ত ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য আপাত দৃষ্টিতে স্বস্তি এনে দিলেও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে তা কতটা বাস্তবায়ন হবে তা চিন্তার ও দেখার বিষয়। আমরা চাই বাস্তবায়ন হোক, ভারতে মুসলিম সম্প্রদায় ভাল ও নিরাপদে থাকুক।

পাশাপাশি বাংলাদেশ পশু শিল্পে উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে থেকে যদি সামনের দিনগুলোতে ভারত থেকে গরু না আনার ব্যাপারে শক্ত অবস্থান না নিতে পারে তাহলে বিগত ৭ বছরে বাংলাদেশ প্রানিসম্পদ উন্নয়নের যে রোল মডেল তৈরী করেছে তা মুখ থুবড়ে পড়বে, হয়তো এই ২০১৯ ই রচিত হবে বাংলাদেশের মাংস শিল্পের কবর।

পাঠক ভারতে গরু জবাই, পশু কেনাবেচায় নিষেধাজ্ঞা বাতিলও  বাংলাদেশের মাংস শিল্পের ভবিষ্যত শিরোনামের লেখাটির বিষয়ে যে কোনো মত প্রকাশ করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজে।

আরও পড়ুন: গরু মোটাতাজাকরণ ও ছাগল, ভেড়া, গাভী পালনে মিলবে কৃষি ঋণ