এগ্রিকেয়ার২৪.কম ডেস্ক: কদিন পরেই বাংলা নববর্ষ। হালখাতার মৌসুমও শুরু হবে। দেশে ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতেও আয়োজন করা হবে হালখাতার। পুরনো বছরের দেনা-পাওনা মেটাবেন স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
স্বাভাবিকভাবেই হালখাতার আগে নগদ অর্থ সংগ্রহে ঝুঁকেছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। ফলে বেচাকেনা বাড়ানোর জন্য অনেকেই তুলনামূলক কম দামে পণ্য বিক্রি শুরু করেছেন। এর প্রভাব পড়েছে খাতুনগঞ্জের মসলার বাজারে। বেচাকেনা বেড়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ মসলার দাম আগের তুলনায় কমেছে।
সম্প্রতি খাতুনগঞ্জে মসলার পাইকারি আড়তগুলো ঘুরে ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি জিরা গড়ে ৩২৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। এক সপ্তাহ আগেও তা ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সে হিসাবে সাতদিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম কমেছে কেজিতে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা। অন্যদিকে সিরিয়া থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি জিরা ৩৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে সিরিয়ান জিরার দাম কেজিতে ২০ টাকা কমেছে।
একই চিত্র দেখা গেছে এলাচ, লবঙ্গসহ সব ধরনের গরম মসলার দামে। সম্প্রতি খাতুনগঞ্জ বাজারে প্রতি কেজি ছোট এলাচ বিক্রি হয় ১ হাজার ৩৪০ টাকায়, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৪০ টাকা কমেছে। লবঙ্গের দামও একই পরিমাণ কমে কেজিপ্রতি ৯৪০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। প্রতি কেজি গোলমরিচের দাম কমেছে সাতদিন আগের তুলনায় সর্বোচ্চ ২০ টাকা। গতকাল মসলা পণ্যটি বিক্রি হয় ৪৫০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে তেজিভাব দেখা গেছে শুকনা মরিচ ও দারচিনির দামে। খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোয় ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। সাতদিনের ব্যবধানে আমদানি করা শুকনা মরিচের দাম বেড়েছে কেজিতে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা।
অন্যদিকে মৌসুমের শুরুতে দেশে উৎপাদিত শুকনা মরিচের দাম ছিল কেজিপ্রতি ১২০ টাকা। পণ্যটির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৫ টাকা। মূলত দেশে উৎপাদিত নতুন মৌসুমের শুকনা মরিচ এখনো কিছুটা ভেজা রয়েছে। এ কারণে ক্রেতারা ভারত থেকে আমদানি করা শুকনা মরিচ বেশি কিনছেন।
বাড়তি চাহিদার জের ধরে আমদানি করা শুকনা মরিচের বাজারে তেজিভাব দেখা গেছে। এদিকে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গতকাল প্রতি কেজি দারচিনি বিক্রি হয় ২২০ টাকায়। সপ্তাহ শেষে পণ্যটির দাম কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ১০ টাকা বেড়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক মাস ধরে ডলারের শক্তিশালী বিনিময় মূল্য ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন ধরনের মসলার বাড়তি বুকিং দরের জের ধরে দেশের বাজারেও মসলার দাম বেশি ছিল। একই সময় দেশের বাজারে বাড়তি চাহিদা মসলার দাম বাড়াতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
তবে শীত মৌসুমের শেষে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কিছুটা কমায় মসলার বাজারে বিদ্যমান তেজিভাব কমতে শুরু করে। চলতি মাসের শুরু থেকে খাতুনগঞ্জে মসলার দাম স্থিতিশীল ছিল। মাসের শেষ নাগাদ আসন্ন নববর্ষ ও হালখাতাকে কেন্দ্র করে নতুন করে দরপতন দেখা গেছে।
এ বিষয়ে খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ী মেসার্স জিলানি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আবুল কালাম জানান, বাংলা নববর্ষ সামনে রেখে হালখাতায় বকেয়া পরিশোধের চাপে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কেননা আমদানিকারকদের কাছ থেকে বছরজুড়ে বাকিতে আনা পণ্যের দাম পরিশোধ না করলে নতুন বছরে বাকিতে পণ্য কেনার সুযোগ পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
এ কারণে কম দামে হলেও নিজেদের গুদামে মজুদ পণ্যের বিক্রি বাড়িয়ে নগদ অর্থ সংগ্রহে ঝুঁকেছেন স্থানীয় মসলা ব্যবসায়ীরা। এর জের ধরে মসলার বাজারে জিরা, লবঙ্গ, শুকনা মরিচ, দারচিনিসহ বেশির ভাগ পণ্যের দামে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। আগামী দিনেও বাজারে এ নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্র: বণিক বার্তা।