নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করোনাকালে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে অনলাইন পশুহাট আশা জাগাচ্ছিল খামারি ও ব্যবসায়ীদের। এমনই এক হাট রাজশাহীর সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ইনোভেশন প্রোগামের ‘গরুহাট’।এই হাটে পশু বিক্রির জন্য একটি ওয়েবসাইট, ফেসবুজ গ্রুপ ও খামারিদের নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজের মাধ্যমেই প্রচারণা চালিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন জেলা প্রশাসন। কিন্তু এ অনলাইন পশুর হাটে বিক্রেতা ১৬০০, ক্রেতা ৫০০, বিক্রি হয়েছে মাত্র ৭০ টি গরু।

গরুহাট ওয়েবসাইটটি সিরাজগঞ্জ ছাড়াও বাইরের আরো কয়েকটি জেলায় কাজ করছে। এ পর্যন্ত এ হাটে ১৬শ বিক্রেতা তাদের ১৭০০ গরু নিবন্ধন করা হয়েছে। এই হাটে ক্রেতার সংখ্যা মাত্র ৫০০ জন। এ পর্যন্ত এ হাট থেকে মাত্র ৭০ টি গরু বিক্রি হয়েছে। গরুহাট নামক এই নতুন ওয়েব সাইট ব্যবহার করতে গিয়েও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন বিক্রেতারা।

ঈদের আর হতেগোনা ক’দিন বাকি থাকলেও অনলাইন পশুহাটে ক্রেতাদের সাড়া না পাওয়ায় হতাশায় খামারিরা। এছাড়া অনেক বিক্রেতার প্রযুক্তি উপকরণ ও জ্ঞান না থাকায় অনলাইন পশুহাটের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

পবা উপজেলার মুসতাক ক্যাটল ফার্মের মালিক মুসতাক আহমেদ এগ্রিকয়ার২৪কম কে জানান, তিনি একজন ক্ষুদ্র খামারি। তার খামারে এবার ৯ টি গরু কোরবানির জন্যে প্রস্তুত ছিলো। করোনার কারণে সবার মতো তিনিও হতাশার মধ্যে আছেন। এ পর্যন্ত তার ২ টি গরু বিক্রি হয়েছে। এই ২ টি গরুতে প্রায় ৬০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। তিনি কয়েকদিন আগে অনলাইনে কয়েকটি গ্রুপ ও গরুহাট সাইটে নিবন্ধন করে গরুর বিস্তারিত প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করেনি।

আরেকজন খামারি কাঁকনহাট এলাকার নাদিম হায়দার এগিকেয়ার২৪.কম কে জানান, তার তিনটি গরু বিক্রির জন্যে রাজশাহীর হাট গ্রুপসহ নিজের অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি কোনো সাড়া পাননি। এছাড়া গরুর হাট ওয়েব সাইটে তিনি ছবি ও ভিডিও আপলোড করতে পারেন নি।

অনলাইন গরুহাট ওয়েব সাইট, ফেসবুজ পেজ ও গ্রুপগুলোতে দেখা যায়, বিক্রেতারা তাদের গরুর বিস্তারিত তথ্য এ হাটে সম্ভ্যাব্য ক্রেতাদের সামনে প্রদর্শন করছেন। ক্রেতারা পশুর ছবি ও ভিডিও দেখে গরু পছন্দ করে বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তৃতীয় পক্ষ ছাড়া নিজেরাই দরদামের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করছেন।

গরুহাট ওয়েব সাইটের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এসএফ টেকনোলজিস লিমিটেড এর সিইও শাহীন রেজা এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, অনলাইন গরুহাটগুলো মূলত ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে একটা লিংকেজ তৈরি করে দিচ্ছে। এখানে তারা মতবিনিময় করে বিশ্বস্ততার মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করছেন। আর তাদের যে গরুহাট সাইটি আছে সেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে নিজেদের তথ্য নিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। ক্রেতা ছবি দেখে পশু পছন্দ করে মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজ দায়িত্বে পশু ক্রয় করবেন। এখানে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কোনো সার্ভিস চার্জ দিতে হবে না। যাবতীয় লেনদেন তারা নিজের দায়িত্বে করবেন। সাইট কর্তৃপক্ষ কোনো দায়বন্ধতা নিবে না। তবে এই সাইটটি যেহেতু জেলা প্রশাসন তদারকি করছেন সুতরাং কোনো রকম অন্যায় হলে প্রমাণ সাপেক্ষে তারা ব্যবস্থা নিবেন।

তিনি আরো জানান, এ বছর অনলাইনে পশু কেনাবেচা প্রথম শুরু হওয়ায় বিভিন্ন কারণে এ হাট তেমন জমে উঠছে না। নতুন হওয়ায় তাদের সাইট নিয়েও কিছু সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে যেগুলো তারা সমাধান করার চেষ্টা করছেন। তবে সাইটটি এখন সারা বছরই ব্যবহার করা যাবে। আগামীতে সাইটটিকে আরো সমৃদ্ধ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এদিকে, রাজশাহীতে ফেসবুকে পরিচিত কয়েকটি র্ফাম আনলাইনে ভালো সাড়া পাচ্ছেন। এরই মধ্যে ভালো দামে বিক্রি করেছেন গরু।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অন্তিম কুমার সরকার এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, অনলাইনে পশু বেচাকেনা এই প্রথমবার শুরু হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের কিছু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তবে তা সমাধানে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারাও নিজেদের ফেসবুক পেজসহ গ্রুপে অনলাইন গরুহাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিবন্ধন করতে উদ্বুদ্ধ করছেন। খামারিদের গরুহাট সাইটে নিবন্ধন করতে সহযোগিতা করছেন। অনলাইন হাটে অনেকেই ভালো সাড়া পাচ্ছেন। নাবা ক্যাটল র্ফামের মতো বড় খামারিরা অনলাইনের মাধ্যমেই তাদের পশু বিক্রি করছেন।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রাশাসক (সার্বিক) শরিফুল হক এগ্রিকেযার২৪.কম কে জানান, অনলাইনের মাধ্যমে গরু কেনাবেচার প্রতি তারা গুরুত্ব দিয়েছেন। এ বছর প্রথম অনলাইনে পশুহাট শুরু হওয়ায় তেমন জমে উঠছে না। তবে এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা খামারিদের নিয়ে কাজ করছেন। গরুহাট সাইটটি নিয়েও তারা কাজ করছেন। এখানে খামারিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে জোর দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত রাজশাহীর অনেক খামারি এ হাটে নিবন্ধন করেছেন। হাট সম্পর্কে জানাতে বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এখন যেহেতু ক্রেতা কম ও যাদের ২ থেকে ১ টি গরু আছে তারাও এই হাট সর্ম্পকে তেমন জানেন না। সুতরাং তাদের জানাতে মাইকিং এর উদ্যোগ নেয়া হবে।