নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী, এ্রগ্রিকেয়ার২৪.কম: “২ বিঘা জমিতে ব্রকলি চাষ করছি। পুরোটাই লস। আগের চালানে যারা তুলতে পারছে, তারা ভালো দাম পাইছে। এখন অনেকে তুলছেই না, গরুকে দিয়ে খাওয়াচ্ছে। দুই-তিন টাকা পিস ব্রকলি বেচে কি করবে?” এভাবেই বলছিলেন নগরীর নগরীর ১৭ নাম্বার ওয়ার্ড এলাকার চাষি আব্দুল মান্নান।

রাজশাহীর মাষ্টারপাড়া কাঁচাবাজার। এখানে নিত্যদিন বসে হরেক রকমের সবজির মেলা। সবজিতে পরিপূর্ণ রাস্তার দু-পাশ। ফুলকপি, বাধাকপি, পালংশাক, ব্রকলি, পুঁইশাকসহ সারাবছরই সবজির পসরা সাজিয়ে বসেন চাষি ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

রাস্তার পাশে ব্রকলির ঝুড়ি সাজিয়ে আনমনা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আব্দুল মান্নান। বাজারে নানান সবজির ভিড়ে যেন ঠাঁই পাইনি ব্রকলি। ক্রেতারা তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আর ক্রেতাদের মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছেন এই চাষি। চোখে-মুখে হতাশার ছাপ!

আক্ষেপ করে বলেন, “দুই বিঘা জমিতে ব্রকলি চাষ করছি, খরচ পড়ছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত হাজার পাঁচেক টাকা পাইছি। সব বিক্রি করলে হাজার দশেক টাকা হতে পারে। বাঁকি টাকা সবই লস গেলো এইবার।”

এই চাষি বলেন, “রাজশাহীর সবজি খায় ছাত্ররা। স্কুল-কলেজ সব বন্ধ। সবজি খাবে কে? তাই দাম কম। রাজশাহী অঞ্চলে ব্রকলি কম খায়। ঢাকায় পাঠাতে পারলে দাম হতো। এবার তো আর সেটা সম্ভব না, দাম কম। বাজারে ব্রকলি নিয়ে আসলে গাড়িভাড়া উঠছে না।”

বড়-বড় লকলকে ফুলকপি, ওজন দেড় কেজি ছুঁইছুঁই। প্রতিপিস বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৪ টাকা। বাঁশের খাঁচায় কপিগুলো সাজিয়ে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্শন করতে ব্যস্ত মোস্তফা। চোখে-মুখে বিরক্তি ফুটে উঠেছে। কপির দাম জিজ্ঞেস করতেই বললেন- “কয় পাল্লা দিব ভাই? বিশ টাকা পাল্লা।”

৫ মণ ফুলকপি নিয়ে বিক্রি করতে এসেছেন কপি চাষি গোলাম মোস্তফা। কথা হলে তিনি জানান, কপির দামে উৎপাদন খরচ উঠছে না। প্রতিপিস কপির উৎপাদন খরচ ৬-৭ টাকা। বর্তমানে বাজারে পাইকারি পর্যায়ে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের কপি বিক্রি হচ্ছে ২ টাকা। খুচরায় ৩-৪ টাকা। সবজি পরিবহনের জন্য নিজের ভ্যান থাকায় কপি বিক্রি করতে এসেছেন তিনি। এছাড়া কপি বিক্রি করার নাম মুখেই তুলতেন না বলে জানালেন এই চাষি।

তিনি বলেন,“ বাজারে প্রচুর সবজির আমদানি। মানুষ কয়টা সবজি খাবে। আমদানির কারনেই মূলত দাম কমে গেছে।”

এদিকে অল্পদামে সবজি কিনতে পারায় খুশি ক্রেতারা। জাহিদ মালেক নামের এক ক্রেতা বলেন,“ তিন চার টাকা পিস কপি। তাও আবার বড়-বড় কপি! অন্যান্য সবজির দামও কম। করোনার মধ্যে আলু, পেঁয়াজ, শাক সবকিছুরই দাম বেশি ছিল। এখন কম দামে পাচ্ছি, তাই বেশি করেই কিনছি। চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের তো আর কিছুই করার নাই। আমরা ক্রেতা।”

এাষ্টারপাড়া এলাকার সবজি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, “ সবজির দাম খুবই কম। বাজারে প্রচুর আমদানি। আলু ১০ টাকা কেজি, পেঁয়াজ ২০ টাকা, কপি ৫ টাকা পিস, বেগুন ২০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা আঁটি বিক্রি করছি। দু-একটা ছাড়া ২০ টাকা কেজির উপর কোন সবজি নাই। কৃষকরা মার খাচ্ছে। আমরা দু-এক টাকা লাভ করছি, তাদের লাভ তো দুরের কথা লোকসান হচ্ছে।”

উল্লেখ্য, রাজশাহী জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী জেলায় চলতি মৌসুমে টমেটোসহ মোট সবজি চাষ হয়েছে ১০ হাজার ২৩৩ হেক্টর জমিতে। গত বছর একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৯২৫ হেক্টর।

এগ্রিকেয়ার/ এমএইচ