চিনি

আন্তর্জাতিক কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ব্রাজিল বিশ্বের শীর্ষ চিনি উৎপাদক দেশ। কিন্তু গত বছর দেশটির চিনি উৎপাদনে বিপর্যয় নেমে আসে। মূলত ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ খরা ও তুষারপাতের কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে, বর্তমানে অল্প সময়ে চিনি উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে দেশটির।

সুইস এগ্রিটেক কোম্পানি গামায়া এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি মৌসুমের এ পর্যন্ত ব্রাজিলে যে পরিমাণ চিনি উৎপাদন হয়েছে, মৌসুমের বাকি সময়ে তার চেয়ে বেশি উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে মৌসুম শেষে উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ৩ শতাংশ বাড়তে পারে।

এক প্রতিবেদনে কোম্পানিটি জানায়, মৌসুমের প্রথমার্ধে উৎপাদন পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত দুর্বল। তখন মিল মালিকরা অভিযোগ করেন, স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আখের ফলন ভালো হচ্ছে না।

পড়তে পারেন: এবার দেশের বাজারে চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব

ফলে চিনি উৎপাদনেও দেখা মিলছে না প্রবৃদ্ধির। ফলে চলতি বছর দেশটি গত বছরের চেয়ে বেশি উৎপাদন করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল।

গামায়া বলছে, শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আখ গাছের বৃদ্ধিতে ৪৫ দিন বেশি সময় লেগেছে। তবে আসন্ন দিনগুলোয় উৎপাদন ও উত্তোলন বাড়বে। এছাড়া ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মিলগুলো পূর্ণ সক্ষমতায় কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলেও প্রত্যাশা প্রতিষ্ঠানটির।

এদিকে দেশটির উৎপাদন তলানিতে নামায় বিশ্ববাজারে চিনির বড় আকারের ঘাটতি তৈরি হয়। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে দাম।

১ কোটি লাখ টন চিনি রফতানি করবে ভারত

ভারতে আখ মাড়াই কার্যক্রম অক্টোবরে শুরু হয়ে আগামী বছরের নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। দেশটিতে চিনির বিপণন মৌসুম অক্টোবরে শুরু হয়ে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে শেষ হবে। চলতি মৌসুমে ভারত ১ কোটি ১২ লাখ টন চিনি রফতানি করবে বলে জানিয়েছে দেশটির খাদ্য মন্ত্রণালয়।

২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে ভারতের চিনি রফতানি ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রফতানির পরিমাণ দাঁড়াবে ৮০ লাখ টনে। মৌসুমে প্রথম দিকের মজুদে নিম্নমুখিতা এবং আখ থেকে ইথানল উৎপাদন বৃদ্ধি রফতানিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। দেশটির খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে।

ভারত বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ চিনি উৎপাদক ও ব্যবহারকারী। ২৪ মে দেশটির সরকার চিনি রফতানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। ছয় বছরের মধ্যে প্রথম পণ্যটির রফতানি বিধিনিষেধের মুখে পড়ল। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে এক মৌসুমে এক কোটি টনের বেশি চিনি রফতানি করা যাবে না।

পড়তে পারেন: এবার দেশের বাজারে চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরুর পর মূল্যনির্ধারণ প্রক্রিয়া শুরু হবে। উন্মুক্ত ছাড়পত্র নাকি কোটার আওতায় রফতানির অনুমতি দেয়া হবে তা জানা যাবে এসব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর।

২০২২-২৩ মৌসুমে ভারতে চিনি উৎপাদনও কমার পূর্বাভাস মিলেছে। মিলগুলো এ সময় চিনির পরিবর্তে জৈব জ্বালানি ইথানল উৎপাদন বাড়াবে। সম্প্রতি ইন্ডিয়ান সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশন (ইসমা) এক বিবৃতিতে উৎপাদন কমার পূর্বাভাস দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিতিশীলতার কারণে ইথানল উৎপাদন লাভজনক বলে মনে করছেন মিল মালিকরা। এছাড়া তুলনামূলক কম দূষণযোগ্য হওয়ায় জ্বালানিটির চাহিদা বেশি। এ কারণেই আখ থেকে চিনির পরিবর্তে ইথানল উৎপাদনের প্রবণতা বেশি।

পড়তে পারেন: ৫ লাখ টন চিনি উৎপাদন বাড়াবে ভারত

ইসমার বিবৃতিতে বলা হয়, এ মৌসুমে ভারতের চিনির উৎপাদন ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমবে। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টনে। চলতি মৌসুমে প্রাক্কলিত উৎপাদন ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ টন। ইসমা জানায়, আসন্ন মৌসুমে ৪৫ লাখ টন আখ চিনির পরিবর্তে ইথানল উৎপাদনে ব্যবহার করা হবে। চলতি মৌসুমে যার পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩৪ লাখ টন।

এছাড়া ১ জুন থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যেকোনো রফতানির ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদন বা রফতানি ছাড়পত্র নিতে বলা হয়েছে রফতানিকারকদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, বিধিনিষেধ আরোপের আগ পর্যন্ত তালিকাভুক্ত কার্গোর মাধ্যমে ভারতের চিনিকলগুলো ৮৫ লাখ টন চিনি রফতানি করেছে।

পড়তে পারেন: চিনি রফতানি বন্ধ করবে ভারত

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে চিনির দাম বর্তমানে বেশ লাভজনক। ঊর্ধ্বমুখী আন্তর্জাতিক বাজারদরের সুবিধা নিতে চান ভারতের মিল মালিকরা। এক গ্লোবাল ট্রেডিং হাউজের মুম্বাইভিত্তিক ডিলার বলেন, বর্তমানে চিনির আন্তর্জাতিক বাজারদর রফতানিকারকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। পাশাপাশি বাজারে ভারতীয় চিনির বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। ভারত খুব সহজেই এক কোটি টন চিনি রফতানি করতে পারবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ