নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশে আম উৎপাদনকারী অন্যতম জেলা নওগাঁয় প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ী গুটি আম পাড়া শুরু হয়েছে। ফলে আজ থেকেই বাজারে আসছে নওগাঁর আম।

নওগাঁয় ধান বা অন্যান্য ফসলের চেয়ে আম চাষ লাভজনক হওয়ায় দিনে দিনে জেলায় আম বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। তাছাড়া নওগাঁর আম স্বাদে সুমিষ্ট এবং ‘শতভাগ ফরমালিনমুক্ত’ হওয়ায় সারাদেশে এর চাহিদা বাড়ছে। অপরিপক্ক আম কেমিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করণ ও ফরমালিন ব্যবহাররোধে ২৪ মে পর্যন্ত নওগাঁয় আম পাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করছিল স্থানীয় প্রশাসন। সে অনুযায়ী বুধবার গুটি জাতের আম নামানোর মধ্যে দিয়ে জেলায় শুরু হয়েছে আম পাড়া উৎসব।

পড়তে পারেন: রাজশাহীতে এবার সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা

তবে গুটি আম পাড়ার প্রথম দিনে কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। আগামী ৩০ মে গাছ থেকে গোপালভোগ আম পাড়া উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামশুল ওয়াদুদ বলেন, নওগাঁয় এ বছর গত বছরের চাইতে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে অর্থাৎ ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এতে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে কৃষি বিভাগ। কিন্তু প্রচণ্ড খরা ও পরপর দুবার ঝড়বৃষ্টিতে ১৭ হাজার হেক্টর বাগানের আমের ক্ষতি হয়েছে।

তবে আমের গ্রোথ ভালো থাকায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় খুব একটা প্রভাব পড়বে না জানিয়ে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, করোনার প্রকোপ না থাকায় বাইরের পাইকাররা বেশি আসবেন। পাশাপাশি প্রায় ১ হাজার মেট্রিকটন আম বিদেশে রপ্তানি করা হবে। এর ফলে এবার আমচাষিরা ভালো দাম পাবেন এবং প্রকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি পুষিয়ে লাভবান হতে পারবেন।

পড়তে পারেন: ‘হাঁড়িভাঙ্গা’ আমে ২০০ কোটি টাকার বাণিজ্য সম্ভাবনা

চাষিরা বলছেন, দেশের অন্যতম প্রধান আম উৎপাদনকারি জেলা নওগাঁয় প্রচণ্ড খরা ও পরপর তিন বার ঝড়বৃষ্টিতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ভাগ আম গাছ থেকে ঝড়ে গেছে। এতে এ বছর আমের ফলন কমে গেছে। ফলে আমের দাম গত বছরের তুলনায় না বাড়লে ঝড়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না।

সাপাহারের আম ব্যবসায়ী ও বাগান মালিক মাসুদ রানা বলেন, নওগাঁ জেলার বাণিজ্যিকভাবে আম উৎপাদনকারি বরেন্দ্রভূমি খ্যাত পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর উপজেলাসহ জেলায় এবার আমের ফলন গতবারের চেয়ে অনেক কম হয়েছে। ল্যাংড়া, ফজলি, বারি-৪, গোপালভোগ ওখিরসাপাত ও আমরুপালীসহ বিভিন্ন জাতের আম রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হয়ে আম কালো বর্ণ ধারন করে পঁচে গেছে। এতে বাগান মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

পড়তে পারেন: নওগাঁয় আমের কেজি ২ টাকা

আমের দাম প্রতিমণ কমপক্ষে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা না হলে বাগান মালিকদের পক্ষে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব না বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী।

মহাদেবপুর উপজেলার আম চাষি হারুনুর রশিদ বলেন, করোনার কারণে গত ২ বছর আমের ভালো দাম পাওয়া যায়নি । ঝড়বৃষ্টিতে আমের ক্ষতি হলেও আমের ভালো দাম পাওয়া গেলে চাষিরা ফলনের ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নিতে পারবেন।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামশুল বলেন, পর্যায়ক্রমে ৩০ শে মে গোপালভোগ, ৫ জুন হীমসাগর ও ক্ষীরসাপাত,৮ জুন নাকফজলী, ১২ জুন লেংড়া ও হাড়িভাঙা,২২ জুন ফজলি, ২৫ জুন আমরুপালী ও ১০ জুলাই আশ্বিনা, বারি-৪ এবং গৌরমতি আম গাছ থেকে নামানোর দিন ধার্য করেছে জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ