আন্তর্জাতিক কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আন্তর্জাতিক বাজারে গরুর মাংসের দাম সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। ব্রাজিলে মাংস সরবরাহের জন্য পশুর প্রাপ্যতা কমে আসা ও অস্ট্রেলিয়ায় পশুপালন পুনর্গঠনের চাহিদার ফলে এমনটা দেখা যায়। সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) ফুড প্রাইস ইনডেক্সে এমনটা দেখা যায়।

ফেব্রুয়ারিতে মাংসজাত পণ্যের মূল্যসূচক বেড়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। একই সময়ে শূকরের মাংসের দামও বেশ বাড়ে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির ফলে এমনটা দেখা যায়।

পড়তে পারেন: এককেজি মাংসের দাম ৯০০ টাকা!

ফেব্রুয়ারিতে যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ সূচক স্পর্শ করেছে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্য। বিশেষ করে ভোজ্যতেল ও দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বাড়ার ফলে খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচক বেশি প্রভাবিত হয়েছে।

ফেব্রুয়ারিতে এফএওর খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্যসূচকের পরিমাণ ১৪০ দশমিক ৭, যা জানুয়ারির তুলনায় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। গত বছরের তুলনায় এ সূচকের পরিমাণ ২০ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। এফএওর ফুড প্রাইস ইনডেক্সে সাধারণত বৈশ্বিক বাজারে বেশি বাণিজ্য হওয়া খাদ্যপণ্যের আন্তর্জাতিক মূল্য পর্যালোচনা করা হয়।

এফএওর অর্থনীতিবিদ উপালি গালকেতি আরতচিলাগে বলেন, ফসলের পর্যাপ্ত উৎপাদন ও রফতানি সরবরাহের উদ্বেগে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে একটি বড় ধরনের চাপ আসছে খাদ্য উৎপাদনের বাইরের খাত থেকে। যেমন জ্বালানি, সার ও ফিড। এসব খাত খাদ্য উৎপাদনকারীদের মুনাফার সীমাকে সংকুচিত করতে ভূমিকা রাখছে। ফলে উৎপাদনকারীরা বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধির প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন।

পড়তে পারেন: এশিয়ার ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় পশু চিকিৎসক সালমা

এফএওর ফুড প্রাইস ইনডেক্স যেহেতু খাদ্যপণ্যের মাসিক মূল্যকে পর্যালোচনা করে। ফলে ফেব্রুয়ারিতে সংস্থাটির খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রভাব আংশিক প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে ভোজ্যতেলের মূল্যসূচক বেড়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ, যা যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ। স্থিতিশীল আমদানি চাহিদার বিপরীতে রফতানি প্রাপ্যতা কমায় ভোজ্যতেলের দাম অনেকটা বেড়েছে। বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ায় পাম অয়েলের রফতানি সীমাবদ্ধতা, দক্ষিণ আমেরিকায় সয়াবিনের স্বল্প উৎপাদন এবং কৃষ্ণ সাগরে যুদ্ধ পরিস্থিতির ফলে সূর্যমুখী তেলের রফতানি অনিশ্চয়তা এতে প্রভাবকের ভূমিকা রেখেছে।

জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে শস্যের মূল্য বেড়েছে ৩ শতাংশ। বিশেষ করে মোটাদানার শস্যের দাম বাড়ার ঘটনা এতে বেশি প্রভাব রেখেছে। এ সময় ভুট্টার দাম বেড়ছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। দক্ষিণ আমেরিকায় ফসলের পরিস্থিতি নেতিবাচক হওয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উল্লেখযোগ্য শস্যের অনিশ্চয়তা এবং গমের রফতানি মূল্যবৃদ্ধি দাম বাড়াতে সাহায্য করেছে। কৃষ্ণ সাগরে চলমান উত্তেজনা গমের দাম ২ দশমিক ১ শতাংশ বাড়িয়েছে। এ সময়ে চালের মূল্যসূচক বেড়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশ। এ মাসে যব ও সারগামের মূল্যসূচক বেড়েছে যথাক্রমে ২ দশমিক ৭ ও ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।

পড়তে পারেন: ভারতে সয়াবিন রপ্তানিতে দেশে বাড়ছে ডিম-মাংসের দাম

এফএওর ফেব্রুয়ারির মূল্যসূচকে দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। এ সময়ে ননিযুক্ত গুঁড়োদুধের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে। একই সঙ্গে স্পট সরবরাহের জন্য মাখনের দামও বেশ বাড়ে। ইউরোপ ও ওশেনিয়া অঞ্চলের প্রত্যাশার চেয়ে কম দুধ উৎপাদন হওয়ায় সরবরাহ সংকট এবং উত্তর এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে আমদানি চাহিদা বাড়ায় দুগ্ধপণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ উচ্চগতি লাভ করে।

ফেব্রুয়ারিতে একমাত্র ব্যতিক্রম দেখা যায় চিনির বৈশ্বিক মূল্যসূচকে। জানুয়ারির তুলনায় এ সময়ে পণ্যটির মূল্যসূচক ১ দশমিক ৯ শতাংশ কমে। ভারত ও থাইল্যান্ডে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি উৎপাদন মিষ্টিপণ্যটির মূল্য নিম্নমুখী অবস্থানে পৌঁছতে ভূমিকা রাখে।

এ্রগ্রিকেয়ার/এমএইচ