নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীর বাজারগুলো মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের কেজিতে বেড়েছে ৬ টাকা। পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজে দু-এক টাকা কমে বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই ব্যবসায়ীরা জানতেন গতকাল থেকে বন্ধ হবে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি। তাই গাঁটছড়া বেঁধেই দাম বাড়ালো ব্যবসায়ীরা। এমনই বলছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

বুধবার (১১ মে ২০২২) রাজশাহীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি সপ্তাহের শনিবার থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। দুদিনের মধ্যে ২৫ টাকা কেজির পেঁয়াজ একলাফে ৩২ টাকা হয়েছে। ক্রেতারা বিড়ম্বনায় পড়লেও চাষিরা খুশি হয়েছেন।

পড়তে পারেন: ভারতীয় পেঁয়াজ আসা বন্ধ, বাড়বে দেশীর দাম

নিত্যপ্রয়োজনীয় এ মসলা পণ্যের দাম বাড়ায় চাষিরা স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছেন। তারা বলছেন, উৎপাদন খরচের সাথে বিক্রির বাজারদর মিলে গেলে লোকসান গুনতে হয়। দাম নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন তারা। পাইকারি বাজারে ৮’শ টাকা মণ পেঁয়াজ বিক্রি করে কোন লাভ হয়না। হটাৎ দাম বাড়ার কারণে পেঁয়াজ পাইকারিতে হাজার-বারো’শ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। এতে কিছুটা আশার মুখ দেখছেন চাষিরা।

রাজশাহীর সাহেববাজর মাষ্টারপাড়া এলাকার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, খুচরা বাজারে ১৫০ টাকা পাল্লা বিক্রি করছি। এককেজি ৩২ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করছি। রসুনের দাম আগের মতোই ৬০ টাকা কেজি। পেঁয়াজের দাম বাড়ার সম্ভাবনা আছে। ৪০ পার হয়ে যাবে এ সপ্তাহে।

পড়তে পারেন: বেড়েছে পেঁয়াজ তেল ডিমের, কমেছে চালের দাম

এই ব্যবসায়ী আরোও বলেন, পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। প্রতিবছর রোজায় মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এবার উল্টো হয়েছে’ সারাবছরই দাম বেশি।

আরেক ব্যবসায়ী আবু বক্কার এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, পেঁয়াজের দাম হয়ত বাড়তে পারে। তবে, পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা লাগার সম্ভাবনা জোরালো। তিন দিনে বাড়ছে ১০ টাকা। আগামী তিন-চার দিনে ৪০ টাকা পেরিয়ে যেতে পারে। কৃষকরা অন্তত বাঁচবে। পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণে বিক্রি কমে গেছে বলেও জানান এই পেঁয়াজ ব্যবসায়ী।

দাম বাড়তে পারে এমনই আভাস দিয়েছে পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতারা। তারা বলছেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ার তেমন কোন কারন নাই। তবে, দেশে যে পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে তা মানুষের খাবারের মূল জায়গায় রয়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজে ক্রেতাদের আগ্রহ নেই।

পড়তে পারেন: পেঁয়াজের দাম বেশি কমে গেলে আমদানি বন্ধ : কৃষিমন্ত্রী

সাহেববাজার মাস্টারপাড়ার পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মাসুদ রানা বলেন, পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হলে দেশীয় কৃষকের লাভ। দাম কিছুটা বাড়বে। তবে, এক-দেশ’শ টাকা কেজি লাগবে না। এটা ঈদের আগের দেওয়া অনুমতিতে এখন পর্যন্ত আমদানি হয়েছে। সেটার মেয়াদ শেষ হলো।

উল্লেখ্য, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ রয়েছে। আমদানির অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে এখন ভারতীয় পেঁয়াজ আসছে না। ফলে দেশীয় পেঁয়াজের চাহিদা ও দাম দুটোই বাড়বে।

জানা গেছে, দেশীয় কৃষকের স্বার্থ বিবেচনায় সরকার পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে। তবে আমদানি বন্ধ থাকায় পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির আগের ইমপোর্ট পারমিটের (আইপি) মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে আইপি না পাওয়ায় কয়েকদিন ধরে আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে।

পড়তে পারেন: কোটিপতি চাষি শাহিদার পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন খামারে কৃষিমন্ত্রী

সূত্রে জানা গেছে, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল ৬৮টি ট্রাকে ১৯০২ মেট্রিক টন ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এরপর ঈদের ছুটি শুরু হয়। ছুটি শেষে শনিবার (৭ মে) থেকে বন্দর দিয়ে আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়। তবে শনিবার থেকে বন্ধ রয়েছে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি। এদিকে হিলির খুচরা বাজারে ঈদের আগে প্রকারভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৫ থেকে ১৬ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ২০ থেকে ২২ টাকায় ঠেকেছে।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ