মোফাজ্জল বিদ্যুৎ, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: এবার দাম বেশি, আবহাওয়াও অনুকূলে। ফলে রবি মৌসুমে অধিক লাভের আশায় আগেভাগে আলুর আবাদে নেমে পড়েছেন রাজশাহীর চাষিরা। হিমাগার থেকে বীজ উত্তোলন, জমি তৈরি, আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ এবং প্রস্তুতকৃত জমিতে আলু রোপণের কাজে ব্যস্ত চাষিরা।

সরে জমিনে দেখা যায়, জেলার নয়টি উপজেলার সব উপজেলাতেই পুরোদমে চলছে আলু আবাদের প্রস্তুতি। জমি তৈরি করে ডায়মন্ড, গ্রানুলা, স্টারিস ও কার্ডিনাল জাতের বীজ আলু কেটে প্রস্তুত করার পর রোপণ করা হচ্ছে। চলছে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধে কীটনাশক স্প্রেও। পুরোপুরি ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও বাণিজ্যিকভাবে আলু আবাদকারী ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন: রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও এ্যাস্টেরিক জাতের আলু বেশি চাষ হয়। গত রবি ২০১৯-২০ মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। এতে হেক্টর প্রতি গড় ফলন ছিলো ২৬ টন। মোট উৎপাদন ছিলো ৯ লক্ষ ৬৩ হাজার মেট্রিক টন। চলতি বছরও জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ পর্যন্ত রাজশাহী জেলায় ১৪ হাজার ৭৭ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে।

চাষিরা বলছেন, বিগত কয়েক বছর ধরে তারা আলুর নায্য দাম পান না। তবে গত দুই বছর থেকে দাম ভালো পাওয়ায় আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন তারা।

তানোর উপজেলার যোগীশহ এলাকার আলু চাষি রেজাউল ইসলাম। তিনি বলেন, এ বছর ২০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছি। বর্তমানে আলুর দাম ভালো দাম রয়েছে। ফলে উপজেলার আলু ব্যবসায়ীসহ সাধারণ লোকজনও ঝুঁকছেন আলু চাষে। শ্রমিকের সংকট দেখা না গেলেও বীজের সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া সার ও বীজের দাম রয়েছে লাগাম ছাড়া। রেজাউল বলেন, আলু চাষের কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি ভালো দামের আশায় প্রায় সবাই আলু চাষ করায় ভরা মৌসুমে দাম কমতে পারে। তবে এ বছর আলুর ভালো ফলন হবে।

আরও পড়ুন: বাগমারায় আলু বীজ সংকটে চাষিরা

একই উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের আলু চাষি আব্দুর রাকিব বলেন, চলতি মৌসুমে ভালো দামের আশায় অনেকেই আলু চাষে নেমেছেন। ফলে এবার তুলনামূলক কম জমিতে আলু চাষ করছি। মোট ৩০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করবো। গত কয়েক দিন ধরে এ পর্যন্ত ২৫ বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছি। আগামীকাল ৫ বিঘা জমিতে আলু লাগালে মোট ৩০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করা হবে। আলুর বীজ সংকটে পড়েছি। এই বীজ সংকটের পেছনে এক ধরণের সিন্ডিকেট চক্রের হাত রয়েছে বলে ধারণা করছেন আব্দুর রাকিব।

আড়াই বিঘা জমি লিজ নিয়ে আলু চাষ করছেন রাজপাড়া থানার বাসিন্দা আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, গত রোববার থেকে জমিতে আলু রোপণের প্রস্তুতির কাজ করেছি। আজকে আলু রোপণের কাজ শুরু করেছি। এ বছর এলাকায় শ্রমিক সংকট দেখা দেয়নি। ফলে অনেকে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে আলু চাষ করছেন। আলুর বীজ সংকট এবং সারের কারণে এবার অতিরিক্ত খরচ হওয়ার আশঙ্কা করছি। তবে বাজারে এরকম দাম ও ফলন ভালো হলে খরচের টাকা পুষিয়ে নেওয়া যাবে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক এগ্রিকেয়ার.কম কে বলেন, চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে আলুর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষক। আর নির্ধারিত সময়ে আলু চাষের জন্য উঠান বৈঠক ও বিভিন্ন সমাবেশের মাধ্যমে তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কৃষকরা যাতে আলুর ভালো ফলন পান সেই জন্য সার, সেচ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন: শীতকালীন সবজিতে ভাগ্য বদলের চেষ্টা রাজশাহীর চাষিদের

তিনি আরও বলেন, এ বছরও ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর এই নির্ধারিত পরিমাণ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হলে সেখান থেকে উৎপাদিত আলু জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় বিক্রি করতে পারবে।

রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হলে কৃষকরা লাভবান হবেন। কৃষি বিভাগ থেকে আলু চাষের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাসহ উৎপাদিত আলু দেশের সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করে তবে আলু চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এগ্রিকেয়ার / এমবি