ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাংলাদেশের আবহাওয়া আম বাগান তৈরি ও আম উৎপাদনের উপযোগী। এ কারণে বাংলাদেশে আম বাগান গড়ে উঠেছে। বর্ষার শুরুতে অর্থাৎ আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে আম গাছ রোপণের উপযুক্ত সময়। আসুন জেনে নিই গাছ লাগবেন যেভাবে।

খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত বর্ষার সময় চারা রোপণ না করাই ভালো:

১. চারা রোপণের আগে ১ মিটার বিশিষ্ট গর্ত করে গর্তের ওপরের অর্ধেক মাটি এক পাশে এবং নিচের অর্ধেক মাটি অপর পাশে রাখতে হবে। গর্ত করার পর ১০-১৫ দিন গর্ত রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।

২. গর্ত ভর্তি করার সময় ওপরের মাটির সাথে ১০ কেজি গোবর সার, ৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম ও ৫০ গ্রাম জিঙ্ক সালফেট ভালোভাবে মিশিয়ে, মিশ্রিত মাটি নিচে এবং নিচের মাটি ওপরে দিয়ে গর্ত ভর্তি করতে হবে। গর্ত ভর্তির ১০-১৫ দিন পর গর্তের মাঝখানে চারাটি সোজাভাবে লাগিয়ে চারিদিকে মাটি দিয়ে চাপ দিতে হবে।

৩. রোপণের পরে গাছে সেচ দিতে হবে এবং গাছটি একটি শক্ত খুঁটি দ্বারা বেঁধে দিতে হবে। চারাটির বয়স ২-৩ বছর হলে এবং চারার গোড়া থেকে নতুন ডালপালা গজালে তা কেটে ফেলতে হবে। গাছের দৈহিক বিকৃতি দেখা দিলে তা কেটে ফেলতে হবে।

আরোও পড়ুন: যে কারণে আম গাছে দেরিতে মুকুল আসছে

গাছ লাগনোর পর গাছের যত্ন করবেন যেভাবে:

পাতাকাটা উইভিল কচি পাতা কেটে ফেললে কার্বারিল গ্রুপের সেভিন ২ গ্রাম/লিটার অথবা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের রিপকর্ড/কট্র্ ১০ ইসি ১ মিলি/লিটার পানিতে দিয়ে স্প্রে দ্বারা আক্রমণ প্রতিহত করতে হবে।

গাছটির বয়স ৪-৫ বছর হলে গাছে আম ধরাতে হবে। ফলন্ত গাছের পরগাছা, শুকনা ডাল, রোগাক্রান্ত ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে। বছরে দুইবার আম গাছে সার প্রয়োগ করতে হবে। বর্ষার শুরুতে একবার এবং বর্ষার পরে আর একবার সার প্রয়োগের পরে প্রয়োজনীয় সেচ প্রদান করতে হবে।

আম গাছে পুষ্পমঞ্জরি বের হয়েছে কিন্তু ফুল ফোটেনি এবং আম মটর দানার মতো হলে এই দুই অবস্থায় সেচ প্রদান করতে হবে। আম গাছে প্রধান পোকার মধ্যে আমের ফলছিদ্রকারী এবং মাছি পোকা অন্যতম। এগুলোকে অনুমোদিত মাত্রার কীটনাশক প্রয়োগ করে এবং ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে দমন করা যায়।

আমের রোগের মধ্যে অ্যানথ্রাকনোজ ও বোঁটা পচা রোগ অন্যতম। এ রোগগুলোকে অনুমোদিত মাত্রার ছত্রাকনাশক এবং আম সংগ্রহের পর গরম পানিতে আম শোধনের মাধ্যমে দমন করা যায়।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ। আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত এ অঞ্চল খিরসাপাত আমের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অনেক বেশি। মোট উৎপাদনের ২০-২৫ ভাগ আম এই জাতের এবং প্রতি বছরই বাড়ছে এই জাতের আমের বাগান।

আরোও পড়ুন: টবে বারোমাসি আম চাষ পদ্ধতি

দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে সুমিষ্ট এই জাতটি। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিমাণ চাষিকে উত্তম কৃষি প্রযুক্তির আলোকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিরাপদ, বিষমুক্ত, স্বাস্থ্যসম্মত ও রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন বাড়াতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এমনটিই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

আষাঢ়-শ্রাবণে আম গাছ লাগবেন যেভাবে শিরোনামে লেখাটি লিখেছেন ড. মো. শরফ উদ্দিন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, আকবরপুর, মৌলভীবাজার। লেখাটি কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ