ইলিশের দেখা মিলছে না

মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মৌসুম প্রায় শেষ হতে চললো। চলতি মাসেই শেষ হবে ইলিশ ধরা। তুবও ইলিশের দেখা মিলছে না পশ্চিমবঙ্গের জেলেদের জালে।

জুন মাসে শুরু হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ সংগ্রহ। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ইলিশ মাছ সংগ্রহ চলবে। এতো সময় পার হলেও সেভাবে ইলিশ ধরা দিচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গের জেলেদের জালে। অথচ গত ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যজীবীদের জালে ধরা পড়েছিল ৩৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ।

আর গত ২০১৯ সালে ১৯ হাজার টন ইলিশ ধরা পরে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যতটুকু ইলিশ পাওয়া গেছে, তা গত বছরের ১০ শতাংশ মাত্র।

এদিকে বাংলাদেশ থেকেও আসছে না পদ্মার ইলিশ। ২০১২ সাল থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করেছে বাংলাদেশ। এবার রসনাতৃপ্তিতে তাই পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ভরসা গুজরাট আর ওমানের ইলিশজাতীয় চকোরি মাছের ওপর। আর রয়েছে গত বছরে হিমঘরে রাখা পশ্চিমবঙ্গের কিছু ইলিশ।

গত দুই বছরের তুলনায় এ মৌসুমে পশ্চিমবঙ্গে একেবারেই কম ইলিশ ধরা পরেছে। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যজীবীদের জালে ধরা পড়েছিল ৩৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ। ২০১৯ সালে ধরা পড়ে ১৯ হাজার টন ইলিশ। আর এখন পর্যন্ত যতটুকু ইলিশ পাওয়া গেছে, তা গত বছরের ১০ শতাংশ মাত্র। দুই সপ্তাহ আগে মৎস্যজীবীরা বলেছিলেন, তাঁরা মাত্র দেড় হাজার টন ইলিশ ধরতে পেরেছেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে আর ইলিশ ধরতে পারেননি মৎস্যজীবীরা। বহু মৎস্যজীবী ব্যাংক ঋণ নিয়ে শোধ করতে না পেরে হতাশায় পড়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরার ওপর বলবৎ থাকা নিষেধাজ্ঞা ১৪ জুন উঠে যায়। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, উত্তর চব্বিশ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের মৎস্যজীবীরা মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে ছোটেন।

তবে দুই দিন পরেই অশান্ত হয়ে পড়ে সমুদ্র। প্রচণ্ড ঢেউ আর উত্তাল সমুদ্রে মৎস্যজীবীরা স্থির হয়ে মাছ ধরতে পারেননি। পশ্চিমবঙ্গে এখন ছোট–বড় ট্রলার ও নৌযান মিলিয়ে ৯ হাজার জলযান ইলিশ ধরার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে অবশ্য ছয় হাজার রয়েছে বড় ট্রলার।

প্রতিবছর পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র থেকে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টন ইলিশ পাওয়া যায়। তবে গত বছর আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে পাওয়া যায় ১৯ হাজার টন ইলিশ। এবার এখন পর্যন্ত গত বছরের তুলনায় মাত্র ১০ শতাংশ ইলিশ পাওয়া গেছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০) মৎস্য ব্যবসায়ী ও পশ্চিমবঙ্গের হিলসা ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অতুল দাস ইলিশ সংগ্রহের পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, প্রতিবছর পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র থেকে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টন ইলিশ পাওয়া যায়। তবে গত বছর আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে পাওয়া যায় ১৯ হাজার টন ইলিশ। এবার এখন পর্যন্ত গত বছরের তুলনায় মাত্র ১০ শতাংশ ইলিশ পাওয়া গেছে।

তবে আশা ছাড়ছেন না তারা। আবহাওয়া অনুকূল হলে আবার ইলিশ পাওয়া যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, করোনার কারণে থাকা লকডাউন এবং আম্পানের তাণ্ডবে জেলেরা অনেক দিন সমুদ্রে মাছ ধরতে যাননি। তাই সমুদ্রে প্রচুর মাছ আছে।

বাংলাদেশ থেকে আমরা ইলিশ পাচ্ছি না উল্লেখ করে তিনি বলেন, রপ্তানি বন্ধ সেই ২০১২ সালের ৬ জুলাই থেকে। তাই আমরা মিয়ানমার থেকে ইরাবতী নদীর ইলিশ আমদানি করেছি। তবে সেই ইলিশ বাংলাদেশের বা পশ্চিমবঙ্গের ইলিশের মতো স্বাদের নয়। এখন আসছে ওমান ও গুজরাটের ইলিশ।

অতুল দাস জানান, সমুদ্রমোহনা থেকে বাংলাদেশের পদ্মা ও মেঘনায় যেভাবে বঙ্গোপসাগরের ইলিশ ঢুকছে, সেভাবে পশ্চিমবঙ্গে সমুদ্র উপকূলবর্তী নদীতে ঢুকছে না। ইলিশ উল্টো স্রোতে বেশি চলে। পদ্মা, মেঘনার স্রোতে যতটা বেগবান, ততটা নয় এই রাজ্যের সমুদ্র উপকূলবর্তী নদীগুলোর। ফলে প্রবল স্রোতের কারণে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী নদীতে ঢুকে পড়ছে ইলিশ। এ সংকট শিগগিরই কেটে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

ইলিশের দেখা মিলছে না পশ্চিমবঙ্গের জেলেদের জালে শিরোনামের সংবাদটির তথ্য প্রথম আলো সংবাদ মাধ্যম থেকে নেয়া হয়েছে।