ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম:  মেসওয়াক মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যম, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম নিয়মিত সুন্নাত হলো মেসওয়াক করা। নিয়মিত মেসওয়াক করায় রয়েছে শারীরিক ও আমলি উপকারিতা।

বিশ্বনবি বলেন- এমনটি কখনো হয়নি যে, জিবরিল আলাইহিস সালাম আমার কাছে এসেছেন আর মেসওয়াক করতে বলেননি। আর তাতে আমার আশঙ্কা হচ্ছিল যে, মেসওয়াক করতে থাকার কারণে আমার মুখের অগ্রভাগ ছিলে না ফেলি। (বুখারি, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)

যে কারণে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে নিয়মিত মেসওয়াক করতেন, আবার মেসওয়াক করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে ঘোষণা করেছেন অসংখ্য ফজিলত ও উপকারিতা।

*মেসওয়াক:
হাদিসের নির্দেশনা মোতাবেক আসলে মেসওয়াক দ্বারা বুঝা যায়, মুখ ও দাঁত পরিষ্কার করা। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। গাছের ডালা বা শিকড় দিয়ে প্রত্যেক নামাজ ও ওজুর সময় দাঁত পরিষ্কার করাকে ইসলামে মেসওয়াক বলা হয়।

* মেওয়াকের জন্য উত্তম ডালা বা শিকড়:
জায়তুন গাছের ডাল বা শিকড় দিয়ে মেসওয়াক করা উত্তম। তবে তা পাওয়া না গেলে, যেসব গাছের স্বাদ তিতা, সেসব গাছের ডালা বা শেকড় দিয়ে মেসওয়াক করা মুস্তাহাব। তবে তা হাতের আঙ্গুলের মতো মোটা ও নরম এবং লম্বায় এক বিঘত হওয়া ভালো।

* মেসওয়াক করার নিয়ম:
হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, ডান পাশ থেকে মেসওয়াক শুরু করা। দাঁতের প্রস্থের দিক তথা দাঁতের উপর থেকে নিচ এবং নিচ থেকে উপরের দিকে মেসওয়াক করা। লম্বা-লম্বি তথা ডান থেকে বামে বা বাম থেকে ডানের দিকে মেসওয়াক না করা।

হাতের মধ্যমা ও তর্জনি আঙুল থাকবে মেসওয়াকের উপর। কনিষ্ঠ ও অনামিকা আঙুল থাকবে মেওয়াকের নিচে। বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে মেসওয়াকের নিচ থেকে চাপ দিয়ে শক্তভাবে ধরতে হবে।

মেসওয়াক করার সময়:
ইসলামিক স্কলাররা দিনের বিভিন্ন সময়ে মেসওয়াক করার কথা বলেছেন। তবে অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে-
– ঘুম থেকে ওঠার পর মেসওয়াক করা। বিশ্বনবি ঘুম থেকে উঠেই দাঁত পরিষ্কার করতেন।’ (বুখারি ও মুসিলম)
– ওজু করার সময় কুলি করার আগে মেসওয়াক করা। তবে কেউ কেউ ওজু করার আগেই মেসওয়াক করার কথা বলেছেন। বিশ্বনবি মেসওয়াক করতেন অতপর ওজু করতেন। (মুসলিম)
– নামাজ পড়ার আগে মেসওয়াক করা।
– কোনো মজলিশে যাওয়ার আগে মেসওয়াক করা।
– কুরআন ও হাদিস পড়ার আগে মেসওয়াক করা মুস্তাহাব।

উপকারিতা:
– হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বলেন, ‘মেসওয়াক করে নামাজ আদায় করা, মেসওয়াকবিহীন নামাজের তুলনায় ৭০ গুণ বেশি ফজিলত রয়েছে।’ (বায়হাকি)
– মেসওয়াকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়। (বুখারি, নাসাঈ)
– দারিদ্র্যতা দূর হয়ে সচ্ছলতা আসে এবং উপার্জন বাড়ে।
– মেসওয়াকে পাকস্থলী সুস্থ থাকে ও শরীর শক্তিশালী হয়।
– মেসওয়াকে স্মরণশক্তি ও জ্ঞান বাড়ে, অন্তর পবিত্র হয়, সৌন্দর্য বাড়ে।
– মেসওয়াকে ফেরেশতারা তার সঙ্গে মুসাফাহা করেন, নামাজে বের হলে সম্মান করেন, নামাজ আদায় করে বের হলে আরশ বহনকারী ফেরেশতারা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
– মেসওয়াকে শয়তান অসন্তুষ্ট হয়।
– মেসওয়াককারীরা ইবাদতে শক্তি পাবেন, বিজলীর ন্যায় দ্রুত ফুলসিরাত পার হবেন এবং ডান হাতে আমলনামা পাবেন।
– নিয়মিত মেসওয়াক করলে মৃত্যুর সময় কালেমা নসিব হবে, জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হবে। পূত-পবিত্র হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে মুমিন।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত নিয়মিত মেসওয়াক করা। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের করা নিয়মিত এ আমলটি যথাযথভাবে আদায় করা। মেসওয়াক করার মাধ্যমে হাদিসে ঘোষিত ফজিলতগুলো লাভের চেষ্টা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব সময় মেসওয়াক করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলতগুলো লাভ করার তাওফিক দান করুন (আমিন)। ইসলামের দৃষ্টিতে মেসওয়াকের গুরত্ব ও ফজলিত শিরোনামে সংবাদের তথ্য কালের কন্ঠ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।