ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ইসলামে আত্মপর্যালোচনার গুরুত্ব অপরিসীম। আত্মপর্যালোচনার মাধ্যমেই মানুষ নিজের আমল ও কর্মের হিসাব নিজেই করে। এটি মুমিনের প্রতিদিনকার রুটিন। কারণ আমরা সবাই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দুনিয়াতে এসেছি।

সসীম এই জীবনে আমাদের অসীম জীবনের পুঁজি অর্জন করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে। তাই আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ। কিয়ামতের দিন আমাদের সবাইকেই এই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব দিতে হবে। অতএব সেই কঠিন দিনে মহান আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য তাঁর নির্দেশিত পথে জীবনকে পরিচালিত করতে হবে। তাঁর দেওয়া হায়াতকে তাঁর হুকুম মোতাবেক কতটুকু পরিচালনা করা হয়েছে, প্রতিদিন তা নিয়ে নিজেই পর্যালোচনায় বসতে হবে। কারণ প্রাণপাখি উড়ে গেলেই পৃথিবীতে ফিরে আসার আর কোনো সুযোগ থাকবে না। নিজের নেক আমল ঘাটতিগুলো পূরণ করারও কোনো ব্যবস্থা থাকবে না।

আরও পড়ুন: ইসলামে ঝিনুকের চুন খাওয়া কি জায়েজ?

মহান আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আর প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত আগামীকালের জন্য সে কী প্রেরণ করেছে, তা চিন্তা করা। মহান আল্লাহকে ভয় করতে থাকো। তোমরা যা করো, আল্লাহ তাআলা সে সম্পর্কে অবগত। (সুরা : হাশর, আয়াত : ১৮)

হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘তোমার হিসাব নেওয়ার আগে নিজের হিসাব নিজে করে রাখো।’ (বুখারি ও মুসলিম)

অর্থাৎ প্রতিদিন আত্মপর্যালোচনা করো। তবে আমলের ঘাটতি পূরণ করার সুযোগ হবে। নিম্নে আত্মপর্যালোচনার কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো;

১. আত্মপর্যালোচনা ব্যক্তিকে অন্যের সমালোচনা তথা গিবত থেকে বিরত রাখে। গিবত মারাত্মক গুনাহ, যে বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তোমরা পরস্পরের গুপ্তচরবৃত্তি ও গিবতকর্মে লিপ্ত হয়ো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করে? নিশ্চয় তোমরা তা ঘৃণা করো।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)

২. নিজের দোষত্রুটি নিজের সামনে প্রকাশ করার মাধ্যমে মানুষ স্বীয় ভুলত্রুটি জানতে পারে। ফলে তার হৃদয় ভালো কাজের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকতে পারে।

৩. আত্মপর্যালোচনার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নিয়ামতগুলো, অধিকারগুলো জানতে পারে। আর সে যখন আল্লাহর নিয়ামত ও তার অবস্থান সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে, তখন সে আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ে উদ্বুদ্ধ হয়।
৪. আত্মপর্যালোচনা জীবনের লক্ষ্যকে সব সময় সজীব করে রাখে। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনুভব করতে পারে এই পৃথিবীর বুকে আমাকে অনর্থক সৃষ্টি করা হয়নি। পার্থিব জীবন শুধু খাওয়াদাওয়া, হাসিঠাট্টার নয়। এ জীবনের পরবর্তী যে অনন্ত এক জীবন, তার জন্য যে আমাদের সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে, আত্মপর্যালোচনা সর্বক্ষণ তা স্মরণ করিয়ে দেয়।
৫. আত্মপর্যালোচনা করে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় জীবনে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়, যাতে পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়।

আরও পড়ুন: ইসলামের দৃষ্টিতে চাষাবাদ

৬. আত্মপর্যালোচনা ব্যক্তিজীবনে সন্দেহপ্রবণতা দূর করে। মূলত সন্দেহপ্রবণতা থেকে পাপাচারের উৎপত্তি। পবিত্র কোরআনে সন্দেহপ্রবণতাকে ‘পাপ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অধিকাংশ (অহেতুক) অনুমান থেকে দূরে থাকো। কারণ (অহেতুক) অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)
৭. আত্মপর্যালোচনা আল্লাহর সঙ্গে বান্দার, ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির, মনিবের সঙ্গে দাসের সর্বোপরি মানুষের সঙ্গে মানুষের ইনসাফপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে।

৮. আত্মপর্যালোচনার মাধ্যমে ব্যক্তি সব ধরনের ক্ষতি, বিপর্যয় কাটিয়ে মহান আল্লাহর অশেষ রহমত লাভ করে। ব্যক্তির জীবনে তখন অকল্পনীয় সফলতা দেখা দেয়।

৯. আত্মপর্যালোচনা ব্যক্তিজীবনে মানবীয় দুর্বলতা প্রতিকার ও স্থবিরতা কাটিয়ে গতিশীলতা ও প্রাণচাঞ্চলতা এনে দেয়।
১০. আত্মপর্যালোচনা ব্যক্তিকে সময় মূল্যায়নের গুরুত্ব বোঝায়। এতে ব্যক্তি যথাসময়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

আমাদের সবার উচিত প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আত্মপর্যালোচনার মাধ্যমে নিজের আমল ও কর্মের হিসাব করা। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন (আমিন)।

ইসলামে আত্মপর্যালোচনার সুফল শিরোনামে লেখাটি লিখেছেন মো. আবদুল গনী শিব্বীর, প্রভাষক নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা।  লেখাটি কালের কণ্ঠ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার / এমবি