নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সারাদেশে কার্পজাতীয় মাছ উৎপাদন, বিপণন-বিক্রিতে প্রথম স্থানে রয়েছে রাজশাহী। সারাবছর এখানে মাছের দাম উঠানামা করলেও বর্তমানে ঈদের পর প্রতিকেজি মাছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা বেড়েছে। এতে খুশি চাষি ও বিক্রেতারা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের পর বাজারে মাছের চাহিদা থাকলেও আমদানি তেমন নাই। পর্যাপ্ত ক্রেতা রয়েছে। রাজশাহীতে শিক্ষার্থীরা ঈদের ছুটি কাটিয়ে শহরে আসতে শুরু করলেও জেলেরা মাছ ধরতে শুরু করেননি। কারণ হিসেবে মাছ ধরার জেলে, বহন করার গাড়ি ও সর্বপরি লোকবল সংকটের কারণে বাজারে মাছের দাম বেড়েছে মাছের দাম। তবে, এ দাম থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন তারা।

আজ শনিবার (১৬ জুলাই ২০২২) রাজশাহীর সাহেববাজার মাছের আড়ত, উপশহর নিউমার্কেট, লক্ষীপুর মাছের আড়ত ঘুরে দেখা যায় বিগত সময়ের চেয়ে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে কার্পজাতীয় মাছ। ঈদের পরের দুদিন দোকান না খুললেও সপ্তাহের শেষে দোকান চালু করেছে দোকানিরা। আস্তে আস্তে খুলছে মুদি ও মাংসের দোকান।

পড়তে পারেন: ঘুরে দাঁড়িয়েছেন রাজশাহীর ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিরা

চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অক্সিজেন স্বল্পতা কমাতে বড় আকারের মাছ বিক্রি করছেন চাষিরা। ঈদের আগে থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতার সমারোহে ব্যবসা জমিয়ে তুলেছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। জেলায় উৎপাদিত রুই, কাতলা, ম্রিগেল, গ্রাসকার্প, ব্লাডকার্প, সিলভারসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছ ঢাকার বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানেও ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে তাজা মাছ। গত ১০ জুলাই কোরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হলেও একদিন পর থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রামে রাজশাহীর মাছ যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত বাইরে মাছ যাওয়ার কারণে মাছের দাম বেশি বলে মন্তব্য করেছেন মাছ বিক্রেতারা।

সাহেববাজারের মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, মাছের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাছ ধরার লোক নাই। সবাই ঈদের কারণে ব্যস্ত। আমরা মাছ কিনতে গিয়ে না পেয়ে বেশি টাকা দিয়ে চাষির পুকুর থেকে ধরে নিয়ে আসছি। এতে বেশি খরচ পড়ছে। এ বেশি দাম থাকবে না। কমে যাবে। তবে এই মাসের শেষের দিকে।

রাজশাহীর বিভিন্ন কাঁচা বাজারের মৎস্য আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে ছোট এক থেকে দেড় কেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে যা আগে ১৮০-২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। ৫ কেজির রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা কেজি দরে যা আগে বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকায়। সিলভার কার্প মাছ প্রতিকেজি ১৪০, ছোট আকারের কাতল ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা; ৫ কেজির কাতল ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা , দুই কেজি ওজনের মৃগেল চাষি পর্যায়ে ২০০ টাকা এবং বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়। এছাড়া তেলাপিয়া ১৮০ টাকা, বোয়াল ১০০০ টাকা। প্রতিটি মাছের কেজিতে বেড়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে চিংড়ির কেজিতে ৪০০ টাকা বেড়ে বাগদা চিংড়ি ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

পড়তে পারেন: মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে বাংলাদেশ

রাজশাহী জেলা মৎস্য সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলায় মৎস্য উৎপাদন ও বিপণন-বিক্রির সঙ্গে জড়িত জেলার প্রায় সাড়ে ৯ লাখ মানুষ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮০ হাজার ১৪১ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদন হয়। বর্তমানে মাছ উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৮৩ হাজার ৪৯২ মেট্রিন টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলায় মাছ উদ্বৃত্ত ৩১ হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২০ সালে মাছের উদ্বৃত্ত প্রায় আড়াই গুণ। সেইসাথে মোট জলাশয়ের সংখ্যা বেড়েছে। তিন ৪৮ হাজার ৪২৭টি থেকে বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৭২০ টিতে।

জেলার পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, ২০১৯-২০ সালের দিকে ৩-৪ কেজি ওজনের রুই বিক্রি করেছি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে মাছের কিছুটা দাম বেড়েছে। পাইকারিতে আমরা ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেশি পাচ্ছি।

উল্লেখ্য, রাজশাহীতে উৎপাদিত মাছের কার্প জাতীয় মাছ প্রায় ৮৫ শতাংশ। এছাড়াও কার্পজাতীয় মাছ উৎপাদনে শীর্ষে থাকা রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন প্রায় ১৫০ ট্রাক মাছ রপ্তানি হয়ে থাকে। বর্তমানে ঢাকায় মাছের চাহিদা ও বেশ ভালো দাম থাকায় খুশি এখানকার চাষিরা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ