নওগাঁ থেকে ফিরে মেহেদী হাসান, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: মেধাবী ছাত্র সজীব হোসেন। পিএসসি, জেএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে জিপিএ-৫। সেইসাথে পরপর দুই পরীক্ষায় বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়েছে। এসএসসিতেও পেয়েছে জিপিএ-৫। বর্তমানে একাদশ ( এইচএসসি) শ্রেনীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তার প্রধান কাজ পড়াশোনার পাশাপাশি মুরগির খামারের দেখাশোনা করা। ছাত্রবস্থায় তার মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের চকরঘুনাথ এলাকার বাসিন্দা সজীব। বয়স প্রায় ১৮ বছর। বাবা সাইদুর রহমান। মুদিখানার ব্যবসার পাশাপাশি করেন কৃষিকাজ। যা আয় হতো চলত সংসারের খরচ। ৪ বছর আগে গড়ে তুলেছেন লেয়ার মুরগির খামার। খামারটি দেখাশোনা করত বাড়ির ছোট ছেলে সজীব হোসেন। ছেলের ভরষাতেই তার এ কার্যক্রম চালু বলে জানিয়েছেন সাইদুর রহমান।

খামার থেকে অর্জিত আয় দিয়ে ব্যাংক ঋণ শোধ করা, সংসারের খরচ, পড়াশোনা খরচ সবই চলে। এতে বাড়তি আয় কওে একটি গরুর খামার করার কথা ভাবছেন সজীব হোসেন

গত ৩ আগস্ট ২০২০ তারিখে সজীবের সঙ্গে কথা হলে তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, আশেপাশের কয়েকটি খামারে ব্রয়লার মুরগির চাষ হয়। মুরগি পালন তার শখ। বাবার কাছে জেদ ধরে ডিম দেওয়া লেয়ার মুরগির খামার করেছেন তিনি।

তিনি জানান, উপজেলার চৌবাড়িয়া হাটের ডিম, মুরগি ও একদিনের বাচ্চার পাইকারি ডিলার ডালিমের কাছে থেকে ৫১০টি একদিনের বাচ্চা কিনেছিলেন। খামার বড়ির কাছের ফাঁকা জায়গাতে করেছেন খামার। যাতে দেখাশোনা করতে সুবিধে হয়। খামারে রয়েছে ৪৯০ টি লেয়ার মুরগি। মুরগি থেকে ৬০ শতাংশ ডিম পেয়েছেন সাড়ে ৫ মাস বয়সে। ৯০-৯৫ শতাংশ মুরগি ডিম পাড়তে শুরু করলে মাসিক লাভ হবে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা । বাড়িতে বিদ্যুৎ লাইন থাকায় সহজেই পানির ব্যবস্থাও করেছেন তিনি।

মুরগিকে খাবার দিচ্ছেন সজীব হোসেন। ছবি: এগ্রিকেয়ার২৪.কম।

সজীবের বাবা সাইদুর রহমান জানান, করোনার কারণে প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম যে মুরগির ফিড, অষুধ সবকিছু বন্ধ হয়ে যায় কি না। আবার ডিমের দাম কমে যায় কি না। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ ডিম যদি ৭ টাকা পিস থাকে তাহলে কিছুটা লাভ হয়। ডিমের দাম কিছুটা বাড়ার কারণে ইজ্জত রক্ষা হলো বলেও জানান তিনি।

বর্তমানে ডিমের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন খামারে ৩৫০ টি ডিম পাওয়া যাচেছ। তবে প্রতিদিন ১০-১৫ টি করে ডিমের সংখ্যা বাড়ছে। খুচরা হিসেবে প্রতি হালি মুরগির লাল বাদামি ডিম ৩২ টাকা করে এবং পাইকারি শতকরা হিসেবে ১০০ ডিম বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা থেকে ৭২০ টাকা করে বিক্রি করছেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে শতকরা ৯০- ৯৫ ভাগ মুরগি ডিম দেওয়া শুরু করবে। ব্যয় ছাড়াও দৈনিক উল্লেখযোগ্য টাকা আয় করবেন বলে জানান তিনি।

সজীবের বাবা সাইদুর রহমান জানান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ডিমপাড়া মুরগির খামার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রজেক্ট। লাভ হলে ভালো আবার ডিমের দাম কমে গেলে মুরগি হুট করে বিক্রি করে দেওয়া যায় না। তাই রিস্ক থাকে অনেক। লেয়ার জাতের মুরগি ১৮ থেকে ২২ মাস বয়স পর্যন্ত নিয়মিত ডিম দেয়। পরে আস্তে আস্তে কমতে থাকে। তাই ২২ মাস বয়সের পরে আমার খামারের মুরগিগুলো বিক্রি করে দেব। তখন এসব মুরগি প্রতিটি কমপক্ষে ৪০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা করে বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

ভেটেরিনারি চিকিৎসক আতাউর রহমান এগ্রিকয়োর২৪.কম কে জানান, সজীবের মুরগির খামাওে নিয়মিত আসি। দেখাশোনা করি। মুরগির রোগ বালাই সাধারণত বেশি হয়। তবে মুরগির ফাইল কলেরা, রানীক্ষেত এবং গামবোরা রোগের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই বাচ্চার বয়স ১৫ দিন থেকে ৫০ দিনের মধ্যে গামবোরা এবং ৫০ দিনের মধ্যে রানীক্ষেত ও গামবোরা ভ্যাকসিন দিয়ে নিলে এসব মহামারী রোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।

সজীব ছাড়াও এলাকায় একে অপরের দেখাদেখি মুরগি, হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন। তাতে সবারই কমবেশি লাভ হয়। তারা প্রত্যেকেই ব্যবসা ধরে রেখেছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অভিমাণ্য চন্দ্র এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, ‘কালিকাপুর, পরানপুর, প্রসাদপুর এসব ইউনিয়নে গরু, ব্রয়লার মুরগি, সোনালি, লেয়ার মুরগির খামার গড়ে উঠেছে। অনেকেই লাভবান হয়েছেন আবার কিছুকিছু খামারি ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। উপজেলায় গরুর খামার রয়েছে ১৩’শ ৮৫ টি, মুরগির খামার ৮৭ টি। ব্রয়লার মুরগির খামার রয়েছে ২১০ টি, লেয়ার মুরগি খামার রয়েছে ৩১ টি।

তিনি আরো জানান, লেয়ার মুরগি পালন একটি একটি লাভজনক ব্যবসা। যে কোনো বেকার নারী-পুরুষ লেয়ার পালনে এগিয়ে এলে সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এতে করে কমবে বেকারত্ব, বাড়বে কর্মসংস্থান। উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে হাঁস খামারি ও বাড়িতে পালনকারীদের নিয়মিত পরামর্শ সেবা দেওয়া হচ্ছে।