নিজস্ব প্রতিবেদক: নাটোরের গুরুদাসপুরে বাণিজ্যিকভাবে মাছচাষিরা পুকুরে উন্নত প্রজাতির মাছ চাষ শুরু করে। বর্তমানে শুধুমাত্র গুরুদাসপুরে বছরে ৩শ কোটি টাকার মাছ উৎপাদন হচ্ছে।

বছরে সাড়ে ৪ হাজার মে. টন মাছের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ১৫ হাজার মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত মাছ বিক্রি হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। একসময় চলনবিলের বুক চিরে প্রবাহিত বড়াল, নন্দকুঁজা, আত্রাই, গুমানি, বেশানি, তুলসিগঙ্গাসহ অন্তত ১০টি নদীর শাখা প্র-শাখায় প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হতো মাগুর, শিং, বোয়াল, রুই পাতাশীসহ নানা প্রজাতীর সুস্বাদু মাছ। সময়ের সাথে সাথে প্রাকৃতিক মাছের জায়গা দখল করেছে চাষের মাছ।

গুরুদাসপুর উপজেলা মৎস অফিসের তথ্যানুযায়ী, এ উপজেলা ২০২০-২১ সালে পুকুরের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। জলায়তন প্রায় ৬ হাজার হেক্টর। এছাড়াও ৯ টি নদী,৩টি খাল এবং ৬ টি বিল থেকে প্রায় ১শ মে.টন, ৩০ টি প্লাবন ভূমি থেকে ১ হাজার ১৬ মে. টন ও অন্যান্য জলাশয় থেকে ২‘শ মে.টন সহ ১০ হাজার মে.টনেরও বেশী মাছ উৎপাদন হচ্ছে। মাছের উৎপাদনও বেড়েছে ৩ গুন অর্থাৎ প্রায় ১৫ হাজার মে. টন। উপজেলায় মাছের চাহিদা মেটানোর পরও সাড়ে ১০ হাজার মেট্রিক টন মাছ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বাজারজাত করা হচ্ছে। যার আর্থিক মূল্য (গড়ে প্রতি কেজি ৩শত টাকা) ৩শ কোটি টাকারও বেশী।

গুরুদাসপুর উপজলো মৎস দপ্তর থেকে গৃহীত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০১৭-১৮ সাল থেকে ২০২১-২২ নাগাদ মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হছিল ১০৬৭২.৩০ মে. টন। কিন্তু বে-সরকারী হিসেবে ২০২১-২২ সাল নাগাদ প্রকৃত উৎপাদন ২০ হাজার মে. টনেরও বেশী হয়েছে বলে মাঠ জরিপে পাওয়া যায়।

চাষিরা মাছে উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়ে নাটোর জেলায় শীর্ষস্থান দখল করেছে। উবৃত্ত ১০ হাজার মে.টন মাছ ব্যবসায়ীদের উদ্ভাবিত চৌবাচ্চা পদ্ধতির ট্রাকের পানিতে জীবন্ত মাছ দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছে। এতে মাছ চাষী এবং ব্যবসায়ীরা অধিক লাভবান হচ্ছে। ব্যাপক র্কমসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, কমেছে বেকারত্বের অভিশাপ।

উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা রতন চন্দ্র সাহা বলেন, মৎস বিভাগ প্রতিনিয়ত চাষিদের মাছ চাষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগীতা প্রদান করে আসছে। মা ও পোনামাছ নিধন বন্ধে অভিযান চলমান রেখেছে। নিষিদ্ধ কারেন্ট,বাদাইসহ চায়না জালে মাছ শিকার বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবনী রায় জানান, গুরুদাসপুর উপজেলা মৎস সেক্টরে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এখানে স্থানীয় চাহিদার তিনগুন মাছ উৎপাদিত হচ্ছে। উবৃত্ত মাছ বিক্রি করে চাষী ও ব্যবসায়ীরা হচ্ছেন লাভবান। বেড়েছে কর্মসংস্থান কমেছে বেকারত্ব। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাছ চাষী ও ব্যবসায়ীদের সবধরনের সহযোগীতা অব্যাহত রয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ/২০২৩