ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশে গত এক দশকে ২০১০-১১ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুধ, ডিম ও মাংসের উৎপাদন বেড়েছে কয়েক গুণ। এ সময়ে ডিম উৎপাদন বেড়েছে ১১’শ ৩ কোটি। যা ২০১০-১১ অর্থবছরে থেকে ছিল ৬০৮ কোটি পিচ।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০-১১ অর্থবছরে ডিমের উৎপাদন ৬০৮ কোটি পিচ থেকে ১৮২ শতাংশ বেড়ে বর্তমানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭১১ কোটিতে। সে সময়ে ২৯ লাখ ৫০ হাজার টন দুধ উৎপাদন হয়েছিল, সেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উৎপাদন প্রায় ২৩৭ শতাংশ বেড়ে ৯৯ লাখ ২৩ হাজার টনে উন্নীত হয়। একই সময়ের ব্যবধানে মাংসের উৎপাদন প্রায় ২০ লাখ টন থেকে ২৭৭ শতাংশ বেড়ে ৭৫ লাখ টনে দাঁড়ায়।

দেশে গত এক দশকে আমিষের উৎপাদন ২৫০ শতাংশ বাড়লেও সেই অনুযায়ী কমেছে মাথাপিছু প্রাপ্তি। পর্যাপ্ত পরিমান ডিম, দুধ, মাংস উৎপাদন হলেও বাজারজাতকরণ, ভোক্তাদের পণ্য নিশ্চয়তার শঙ্কা, বিপণন অসুবিধার কারণে মাথাপিছু প্রাপ্তি ঘটেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

দুধের ভোগ কমে যাওয়ার পেছনে দামের পাশাপাশি মানের প্রশ্ন রয়েছে। প্যাকেট দুধের বিষয়ে ভোক্তাদের মনে এক ধরনের শঙ্কা বিরাজ করছে। ফলে শহরের মানুষ পণ্যটি গ্রহণে ভীত থাকে। দুধের মানের নিশ্চয়তা দিতে পারলে ভোগ অবশ্যই বাড়বে বলে জানান কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ড. শামসুল আলম।

প্রাণিজ আমিষের জনপ্রতি ভোগ বাড়েনি গত এক দশকে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের দৈনিক জনপ্রতি ভোগ যেখানে ৩৩ দশমিক ৭২ গ্রাম ছিল, সেখানে ২০১৬ সালে তা কমে ২৭ দশমিক ৩১ গ্রামে নেমে এসেছে। তবে গরুর মাংসের জনপ্রতি ভোগ না কমে কিছুটা বাড়লেও তার পরিমাণ খুবই সামান্য, মাত্র শূন্য দশমিক ৭ গ্রাম।

আরোও পড়ুন: রাজশাহীতে ডিম- মুরগির দামে ব্যাপক উঠানামা

জাতিসংঘের মা ও শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদন বলছে, পুষ্টিহীনতার কারণে বাংলাদেশে স্কুলগামী শিশুদের ১৮ শতাংশ রোগা-পাতলা এবং ৯ শতাংশ স্থূলকায়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, স্কুলগামী রোগা-পাতলা শিশুর হারের দিক থেকে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। পাঁচ বছরের নিচে খর্বকায় শিশুর হার ছিল ২৭ শতাংশ। স্বল্প ওজনের শিশু ২৩ শতাংশ এবং ক্ষীণ স্বাস্থ্য প্রায় ১০ শতাংশের।

আমিষ জাতীয় খাদ্যের উৎপাদন ও ভোগ বাড়াতে গবেষণায় জোর দিতে হবে বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা। কেননা বিশ্বব্যাংকের গবেষণা বলছে, আগামী এক দশকে যে কয়টি আমিষ বা প্রাণিজ পণ্যের জনপ্রতি প্রতিদিনের চাহিদা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাবে, তার মধ্যে এগিয়ে থাকবে ডিম, মাংস ও দুধ।

গত এক দশকে দেশে দুধের উৎপাদন প্রায় আড়াইশ শতাংশ বাড়লেও সেখানে প্রক্রিয়াজাত শিল্পের অংশগ্রহণ খুব কম। দেশের মোট উৎপাদনের মাত্র ৫-৭ শতাংশ দুধ সংগ্রহ করে কোম্পানিগুলো। ফলে দুধ থেকে বিভিন্ন ধরনের দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। আবার দেশে দুধের দাম বেশি থাকায় পাউডার মিল্ক আমদানি করছে। দুধের নানামুখী ব্যবহারের মাধ্যমে ঘাটতি মেটানোর সুযোগ থাকলেও সেটি হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ এমরান বলেন, যে জেলায় সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদন হয়, সেখানে মাঝেমধ্যেই দুধ বিক্রি না করে খামারিরা রাস্তায় ঢেলে দিচ্ছেন। আবার ঠিক তার পাশের জেলার মানুষ দুধ পাচ্ছে না। দুগ্ধ খাতে বিপণনের এ বেদনাদায়ক চরিত্রের মধ্যে উৎপাদন বাড়ছে। দাম সহনীয় করার পাশাপাশি ও বিপণন দুর্বলতা কাটাতে পারলে জনপ্রতি দুধের ভোগ অবশ্যই বাড়বে।

এক দশকে ডিম উৎপাদন বেড়েছে ১১’শ কোটি শিরোনামে সংবাদের তথ্য বণিক বার্তা থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ