মেহেদী হাসান, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ঝড়ের মুখে পড়া ঘুড়ির মতো রাজশাহীতে ডিম- মুরগির দামে ব্যাপক উঠানামা চলছে। একবার নিচে নামছে তো আরেকবার উপরে। বাজরে নেই স্থিতিশীলতা। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর চলতি বছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত পোলট্রি শিল্পের উদ্যোক্তারা পানির দরে ডিম, মুরগি ও বাচ্চা বিক্রির ফলে পুঁজি হারিয়ে ফেলেন।

খামারিরা নানা সংকটের কারণে মুরগির খামারে উৎপাদন বন্ধ করেছিলেন। ফলে হ্যাচারিগুলো বাচ্চা উৎপাদন বন্ধ করে দেন। প্রভাব পড়ে বাজারে। সাময়িক ব্রয়লার, লেয়ার, কক মুরগির সংকট হলেও বর্তমানে বাজারে রয়েছে পর্যাপ্ত আমদানি। ক্রেতা না থাকায় ব্যবসায়ীরা পড়ছেন লোকসানে। এদিকে সেই প্রভাব পড়ছে খামারিদের ওপর। ঠিক এমনই তথ্য জানান পোল্ট্রি সংশ্লিষ্টরা।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বাজারে আমদানি বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির। আমদানি বেশি হওয়ায় দফায় দফায় মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। অপরদিকে কয়েকমাস ধরে লোকসানে পড়া খামারিদের ক্ষতি পুষাতে বাড়ছে ডিমের দাম।

কোরবানির ঈদের আগে প্রতিকেজি ব্রয়লার ১৩০ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও তা এখন ১১০ টাকায় নেমে এসেছে। প্রতি এক’শ লাল বাদামি ডিম ৭২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৭৫০ টাকা এবং ৬৬০ টাকা থেকে বেড়ে সাদা ডিম ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্য ডিমের দাম বাড়ায় ভোক্তাদের ক্ষোভ বাড়লেও ব্রয়লার মুরগির দামে তারা এখন স্বস্তি প্রকাশ করছেন।

অপরদিকে বেকায়দায় পড়েছেন মাংস উৎপাদনকারী খামারিরা। ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ৪০ টাকা পিস কিনে খামারে তুললেও তা প্রতিকেজি বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ৮৫ টাকা কেজি। মাংসের এমন দামে হাজার হাজার টাকা লোকসান গুনছেন খামরিরা।

রাজশাহীর হরিপুর এলাকার পোল্ট্রি ডিলার ও ব্যবসায়ী সাকিব হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ব্রয়লারের বাচ্চা কেনা আছে ৩৫-৪০ টাকা পিস আর ‍মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। প্রতি হাজারে ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। এসব পোষোবে কে? সরকার ৫% সুদে ঋণ দেওয়ার যে কথা বলেছে সেটারে আবেদন করেছি।

ডিম ও মাংস উৎপাদনে ক্ষতিগ্রস্থ খামারিদের জন্য এ দামের প্রভাব সম্পর্কে জানান রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি বলছে, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে লাখ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছেন খামারিরা। তবে বর্তমানে দাম বাড়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন। পোল্ট্রি মুরগির দাম প্রথমে বাড়ার কারণ, করোনায় হ্যাচারিগুলো বাচ্চা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সেইসাথে অনেক বাচ্চা মাটিতে পুঁতে ফেলেন। অনেকে পুঁজি সংকটে বাচ্চা না কিনে খামার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। প্রায় ৫৬ থেকে ৭০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে যায়। বাজারে মাংসের যোগান কমে যায়। ফলে বাড়তে থাকে ব্রয়লার মুরগির দাম। এখন ক্রেতা নাই তাই আবারো দাম কমেছে। এ দামের উঠানামাতে ক্রেতারাও বিরক্তি প্রকাশ করে।

এদিকে পর্যাপ্ত ক্রেতা না পাওয়ায় পোল্ট্রি মুরগির দাম বাড়ছে না বলে জানিয়েছে রাজশাহীর সাহেব বাজার এলাকার মুরগি ব্যবসায়ী মিলন হোসেন। তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, কোরবানির ঈদের আগে মুরগির দাম কিছুটা ছিল। সেসময় ব্যবসা হয়েছে। ঈদের পর প্রতিকেজি মুরগির দাম কমেছে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। এখন বাজারে মুরগির আমদানি থাকলেও ক্রেতা নেই। ব্রয়লার মুরগি আগে ছিল ১৩৫-১৪০ টাকা, সোনালী ২৪০ টাকা, দেশী মুরগি ৪০০ টাকা বিক্রি করলেও সবগুলোর বাজার ধ্বস। বর্তমানে বর্তমানে লেয়ার বাজারেই নেই। ব্রয়লার ১০০-১১০ টাকা, সোনালী ২২০-২২৫ টাকা, দেশী ৩৮০ টাকা দরে বিক্রি করছি।

আরোও পড়ুন: ক্রেতাশূন্য রাজশাহীর সবজি বাজার, ব্যবসায়ীর মাথায় হাত

আরেক ব্যবসায়ী রেজাউল করিম মিঠু এগ্রিকয়োর২৪.কমকে জানান, করোনায় রাজশাহীতে শিক্ষার্থী নাই। মেসগুলো ফাঁকা। আগেও একই পরিমান মুরগি বাজারে আসতো কিন্তু সবগুলো বিক্রি হয়ে যেতো। আর এখন ক্রেতা নাই, বিক্রি নাই। সারাদিন বসে থেকে কোনমতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা।

ডিম ব্যবসায়ী বাদলা এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, প্রতি এক’শ লাল বাদামি ডিম ৭৫০ টাকা এবং সাদা ডিম ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, দেশি মুরগির প্রতি হালি ৪ টি ডিমের দাম ৫৫ টাকা, হাঁসের ডিম ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছি।

প্রণোদনা টাকা খামারিরা কবে নাগাদ পাবেন এমন প্রশ্নে রাজশাহী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অন্তিম কুমার সরকার এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, জেলা- উপজেলা পর্যায়ের করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের তালিকা করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বিষয়টি অধিদপ্তরে জানিয়েছেন। মার্চ- এপ্রিলের দিকে বেশি ক্ষতি হয়েছিল পরিবহন ব্যবস্থার জন্য কিন্ত বর্তমোনে স্বাভাবিক হয়েছে। এখন আর খুব বেশি খামারি ক্ষতির মধ্যে নেই।দামও স্বাভাবিক হয়েছে।

আরোও পড়ুন: রাজশাহীতে কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম, বেড়েছে ডিমের

রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, লেয়ার মুরগি প্রায় ১৮ থেকে ২০ মাসের একটা দীর্ঘ প্রজেক্ট। দাম কমলেও মুরগি বিক্রি করতে পারেন না তারা। লোকসান দিয়ে খামার ধরে রাখতে হয়। এখন লেয়ারের বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে না তেমন, খামার বন্ধ। ফলে ডিমের বাজার বাড়তি।

মুরগির দাম কমার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় বড় কোম্পানিগুলো একবারে লাখ লাখ মুরগির বাজারে নিয়ে আসেন ফলে বাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মার খেয়ে যান।