নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মো. মোস্তাক হোসেন জানিয়েছেন এ বছর বীজ আলুর সংকট রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আলুর দাম হটাৎ বৃদ্ধি বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দামে আলু বিক্রি হচ্ছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এটা অতিরিক্ত। এখন খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হওয়া উচিৎ।

গতকাল রোববার (১৮ অক্টোবর ২০২০) সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আলু দামের ঊর্ধগতি ও তা কীভাবে ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে আনা যায় সে বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।

বাংলাদেশে মোট কোল্ডস্টোরেজ আছে ৪০৭ টা, চালু আছে ৩৯৩টি। এতে ৪৫ লাখ টন আলু মজুদ হয়েছে। গত বছর হয়েছিল ৫৫ লাখ টন। এবছর প্রায় ১০ লাখ টন মজুদ কম হয়েছে।

পর্যাপ্ত আলু মজুদ আছে কিনা ও কৃষি বিপণন অধিদফতরের দাম কেন কার্যকর করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মো. মোস্তাক হোসেন বলেন, এ বছর প্রায় ১৫ লাখ টন আলু উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় কোল্ডস্টোরেজে ১০ লাখ টন আলু কম ঢুকেছে।

আরোও পড়ুন: আলুর লাগাম টানতে মাঠে প্রশাসন

তিন দিনের মধ্যে আলুর দাম কমাতে মাঠে নামছে টিসিবি

অন্যান্য বছর ৫৫ লাখ টন আলু আসে কোল্ডস্টোরেজে আর সেখানে এ বছর এসেছে ৪৫ লাখ টন। আর করোনার কারণে আলুর ব্যবহার বেশি হয়েছে। একই সঙ্গে বন্যায় অন্যান্য সবজির উৎপাদন কম হওয়ায় আলুর চাহিদা বেড়ে গেছে। পাশাপাশি আলু আবাদ এক মাস পিছিয়ে গেছে। অন্যান্য বছর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে নতুন আলুর চাষ হয়। এ বছর সেটা পিছিয়ে গেছে। আলুর বাজারে ঘাটতি রয়েছে।

তিনি আরোও বলেন, গত ১৫ দিন আগে হঠাৎ করে আলুর দাম বেড়ে গেছে। কারণ পণ্যের দাম নির্ভর করে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। এখন আলুর শেষ সময় তাই চাহিদা বেশি যোগান কম হওয়ায় এমনটা হয়েছে। কোল্ডস্টোরেজের আলুর ৩০ ভাগ সময় আছে।

এদিকে ব্যবসায়ীরা চাহিদা বেশি সরবরাহ কম তাই তারা দামটা বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। এখন আমরা সকল আলু ব্যবসায়ীদের উৎসাহী করছি কোল্ডস্টোরেজ যে আলু আছে তা বিক্রি করে দেয়ার জন্য। যাতে করে আলুর দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে থাকে আমরা সেই চেষ্টাই করছি।

তিনি বলেন, কৃষি বিপণন অধিদফতর কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে দর নির্ধারণ করেছে ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা ও খচরা পর্যায়ে ৩০ টাকা। আমরা এই বিষয়টি আবার পর্যালোচনার দাবি জানিয়েছি। বর্তমানে কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে আলুর খরচ পড়ে ২২-২৩ টাকা, সেটা যদি ২৩ টাকাই রাখা হয় তাহলে কেউ বিক্রি করবে না। বর্তমানে কোল্ডস্টোরেজে ক্রেতা ও বিক্রেতা নেই। এজন্য বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জানিয়েছি।

আরোও পড়ুন: এবার আলুর দাম বেঁধে দিয়ে ডিসিদের নজরদারির নির্দেশ

রাজশাহীতে নিয়ন্ত্রণহীন আলুর মূল্য

কত টাকা নির্ধারণ করলে ভালো হয় বলে মনে করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যবসায়ী, কৃষক ও কোল্ডস্টোরেজসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারিত দামটা পর্যালোচনা করা দাবি জানিয়েছি। বাণিজ্যমন্ত্রী সে প্রস্তাব কিছুটা বিবেচনা করবে বলে আমাদের জানিয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আলুর উৎপাদন বেশি হয়েছে কোনো ঘাটতি নেই, আর আপনি বলছেন ১০ লাখ টন ঘাটতি রয়েছে এ বিষয়টি কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী আমি জানি এ বছর আলু কম হয়েছে। আলু যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে আলু গেল কোথায়। আগমী সাতদিন বা এক মাস পর দেখবেন আমরা যেটা বলেছি সেটা সত্য। এ বিষয়েতো আমরা চ্যালেঞ্জ করতে পারি না। তবে আমরা বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।

বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীনের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন- কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. ইউসুফ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) মো. ওবায়দুল আজম, অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) মো. হাফিজুর রহমান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা।  বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর চেয়ারম্যান ব্রি. জে মো. আরিফুল হাসান, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আল-বেরুনি, র্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই-এর প্রতিনিধি, কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং পাইকারি আলু ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ