ছবি: শাটারস্টক

কারও করোনা হয়েছে, জ্বর নেই, উপসর্গও নেই। তিনি সেরে গেলেন। পরে অন্য কারণে এমনি ঠান্ডা লেগে জ্বর বা কাশি হল, তখন ভিতরে থেকে যাওয়া ভাইরাসের পুরনো আরএনএ-র অস্তিত্ব মিলতে পারে পিসিআর টেস্টে। তার মানেই যে সংক্রমণ আছে, তা নয় কিন্তু।

এই প্রসঙ্গে সংক্রামক রোগের ভারতীয় চিকিৎসক নীতিন গুপ্ত বলেন, “ভাইরাসের আরএনএ আছে কি না, তা দেখা হয় আরটিপিসিআরের মাধ্যমে। অনেক সময় দেখা যায়, আরএনএ ভাইরাস চলে যাওয়ার পরেও থাকতে পারে। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এই ভাইরাস ৩০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।”

খুব কম উপসর্গ রয়েছে যাঁদের, তাঁদের বেশির ভাগের থেকেই ৭-৮ দিন পর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে না। কারও ক্ষেত্রে করোনা সেরে গিয়ে ডেঙ্গি সংক্রমণ হল, সে ক্ষেত্রেও জ্বর আসতে পারে। তখন করোনা টেস্ট পজিটিভ আসা মানেও সংক্রমণ ঘটেছে এমন নয়। সেটা সংক্রমিত করতে পারে কি না, তা কালচার করে দেখে বলা সম্ভব বলেই জানান নীতিনবাবু।

আরও পড়ুন: দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্তের সম্ভাবনা আছে কি? চিকিৎসকরা কি বলছেন?

কতদিন থাকতে পারে করোনা

আম্ফান, বন্যা, করোনা মোকাবেলা করে এখনো দেশের অবস্থান ভালো

মুম্বইয়ের ধারাভি বস্তিতে সংক্রমিতের সংখ্যা এপ্রিল মাসে বাড়তে শুরু করেছিল। কন্টেনমেন্ট স্ট্র্যাটেজির মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে আসে। সংক্রামক রোগের চিকিৎসক সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় যুক্ত ছিলেন সেই কাজে। দ্বিতীয় বার সংক্রমণের বিষয়ে তিনি বলেন, “এটি নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্সে যে স্টাডি হয়েছে, সেখানে দ্বিতীয় দফায় কোভিড পজিটিভ হয়েছে।

এটা হতে পারে ভাইরাস শরীরেই ছিল, নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল, রোগীও সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন, কিছু দিন পরে তা সক্রিয় হয়েছে। আরেকটা কারণ হতে পারে, ফের সংক্রমণ। সংক্রমণ ফের হয়েছে কি না, তা জানতে ভাইরাস কালচার করে জেনেটিক সিকোয়েন্সিং করা প্রয়োজন প্রতিটি নমুনার। এই মুহূর্তে শুধু ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে হয় এটি। তবে রোজ ৫ থেকে ৭ লক্ষ নমুনায় তা পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। আর এই অসুখটার বয়স মাত্র কয়েক মাস, তাই এটা নিয়ে নিশ্চিত ভাবে এখনই বলা সম্ভব নয়।”

ফ্রান্স, চিন, দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রামাণ্য কেস স্টাডি রয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে কোভিড সেরে গিয়ে ১০-৪৫ দিনের মধ্যে (গড়ে) জ্বর ও কাশির উপসর্গ, ফের পজিটিভ এসেছে আরটিপিসিআরে। কিন্তু এটা নিষ্ক্রিয় হয়ে ভাইরাস সক্রিয় হয়ে উঠল (রি-অ্যাক্টিভেশন), নাকি ফের সংক্রমণ, তা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন। যদি চার থেকে পাঁচ মাসের বিরতি নিয়ে কারও সংক্রমণ হয়, তা হলে বলা যেতে পারে ফের সংক্রমণ। কিন্তু যে কেসগুলি এ রাজ্যে শোনা গিয়েছে, বেশির ভাগই প্রথম বার সেরে যাওয়ার দু’মাসের মধ্যেই ঘটেছে, জানালেন সায়ন্তনবাবু।

দ্বিতীয় বার সংক্রমণের সঙ্গে কি কো-মর্বিডিটির যোগ রয়েছে?

রোগের ভয়াবহতার সঙ্গে থাকলেও ফের সংক্রমণের ক্ষেত্রে সে ভাবে এর যোগ নেই বলা যেতে পারে, কারণ স্টাডিতে দেখা গিয়েছে, ১৯ বছর বয়সি যুবক থেকে ৯১ বছর বয়সি বৃদ্ধাও রয়েছেন, এমনটাই জানালেন সায়ন্তনবাবু।

তাঁর কথায়, “করোনা ভাইরাস চিকেন পক্স ভাইরাসের মতো নয় যে এক বার হলে আর কখনও হবে না। তাই ফের সংক্রমণ হতেই পারে। এই ভাইরাসের অ্যান্টিবডি ২ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত থাকে শরীরে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি দিন থাকে না। অনেক সময় স্টেরয়েড ইত্যাদির কারণে অ্যান্টিবডি কমে যেতে পারে। তিন মাস পরেই যদি অ্যান্টিবডি কমে যায়, তা হলে তো এপ্রিল-মে মাসে যাঁরা সংক্রমিত হয়েছিলেন, অনেকের মধ্যেই তো পুনরায় সংক্রমণ হওয়ার কথা অগস্টে। কিন্তু সেটা তো হয়নি। কিন্তু এতটা ভয়ানক পরিস্থিতি নাও হতে পারে যে প্রতি তিন মাস অন্তর কেউ করোনা আক্রান্ত হতে থাকবেন। হাত পরিষ্কার রাখা, মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়মগুলি মানতে হবে, কারণ এর কোনও বিকল্প নেই।”

করোনা হয়েছে, জ্বর নেই, উপসর্গও নেই! করণীয় কি? শিরোনামে সংবাদের তথ্য আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে নেওয়া হয়েছে।