ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করোনা সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা মানুষগুলো আবারো করোনা আত্রান্ত হতে পারেন কি না এ বিষয়ে চলছে গবেষণা। ইতোমধ্যে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে দ্বিতীয়বারের মতো করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে। এতে রীতিমত ঘাবড়ে গিয়েছেন অনেকে। সংক্রমণ থেকে ফিরে আসা মানুষ যদি আবারো আক্রান্ত হন তাহলে তা কেমন দেখায়!

ভারতের মুর্শিদাবাদ, খড়গপুর-সহ রাজ্যের কিছু জায়গায় দ্বিতীয় বার করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কেউ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর ফের আরটিপিসিআরে রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। কারও ক্ষেত্রে ছিল কো মর্বিড ফ্যাক্টর। বাংলাদেশের ক্রিকেটার মাশরফি মোর্তাজার ক্ষেত্রেও দ্বিতীয় বার সংক্রমণের কথা বলা হয়েছিল।

দ্বিতীয় বার সংক্রমণের প্রসঙ্গে ভারতের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, “দ্বিতীয় বার কারও কারও ক্ষেত্রে সংক্রমণ ফিরে আসছে। কারও কারও ক্ষেত্রে ভাইরাল লোড (রক্তে ভাইরাসের পরিমাণ) কম থাকে প্রথম বারের সংক্রমণে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হচ্ছে। রোগ প্রতিরোধের স্থায়িত্বও কম হচ্ছে। এই কারণেই সংক্রমণ ফিরে আসছে বলে মনে করা হচ্ছে। অ্যান্টিবডির স্থায়িত্ব কম হওয়ায় ফের সংক্রমণের আশঙ্কাও থাকছে।”

সুবর্ণবাবু বলেন, “ধরুন কারও করোনা হল। সে ক্ষেত্রে গড়ে তিন মাস বা ৯০ দিনের মতো সুরক্ষা দিচ্ছে অ্যান্টিবডি। যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম, তার ক্ষেত্রে এই ৯০ দিনও কার্যকর হচ্ছে না। তাই সংক্রমণ ফিরে আসার আশঙ্কা থাকছে।”

এই প্রসঙ্গে সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বলেন, “কারও কারও সংক্রমণ ফিরে এসেছে বলে শোনা যাচ্ছে। এই নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন। রোগ প্রতিরোধের বিষয়টি এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। তাই সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও পরবর্তীতে বাইরে বেরলে আগের মতোই মাস্ক ব্যবহার, বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহারের বিষয়গুলি মাথায় রাখতেই হবে।’’

প্রায় একই কথা বলছেন মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস। তাঁর মতে, “দ্বিতীয় বার সংক্রমণের বিষয়টি নিয়ে সঠিক ভাবে বলার সময় এখনও আসেনি। বেশির ভাগ মানুষই সবেমাত্র সেরে উঠেছেন। অল্প সংখ্যক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে পুনরায় সংক্রমণের বিষয়টি। তবে এ নিয়ে আরও অনেক গবেষণা প্রয়োজন। এ বিষয়ে বিশদে বলা সম্ভব নয় কারণ ভাইরাসের সম্পূর্ণ চরিত্রই এখনও স্পষ্ট নয়। সংক্রমণ যাঁদের ক্ষেত্রে ফিরে আসছে, মনে করা হচ্ছে এ জন্য রোগ প্রতিরোধ শক্তিই দায়ী। তবে ভাইরাস কালচার করা গেলে সবথেকে ভাল হয়। ফলস পজিটিভ আসছে কি না, সতর্ক থাকতে হবে সেই বিষয়েও। সে ক্ষেত্রে আরও এক বার পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। তবেই বিষয়টা সঠিক ভাবে বোঝা যাবে।”

আরোও পড়ুন: কতদিন থাকতে পারে করোনা

করোনার টিকা উৎপাদন শুরু রাশিয়ার

সংক্রমণ থেকে সুস্থতার পরে আবারও করোনা পরীক্ষার নির্দেশনা

দ্বিতীয় বার রিপোর্ট পজিটিভ মানেই কি করোনা সংক্রমণ?

এই প্রসঙ্গে সংক্রামক রোগের চিকিৎসক নীতিন গুপ্তের মত, “ভাইরাসের আরএনএ আছে কি না, তা দেখা হয় আরটিপিসিআরের মাধ্যমে। অনেক সময় দেখা যায়, আরএনএ ভাইরাস চলে যাওয়ার পরেও থাকতে পারে। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এই ভাইরাস ৩০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।”

দ্বিতীয় বার সংক্রমণের বিষয়ে তিনি বলেন, “এটি নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে। চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্সে যে স্টাডি হয়েছে, সেখানে দ্বিতীয় দফায় কোভিড পজিটিভ হয়েছে। এটা হতে পারে ভাইরাস শরীরেই ছিল, নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল, রোগীও সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন, কিছু দিন পরে তা সক্রিয় হয়েছে। আরেকটা কারণ হতে পারে, ফের সংক্রমণ। সংক্রমণ ফের হয়েছে কি না, তা জানতে ভাইরাস কালচার করে জেনেটিক সিকোয়েন্সিং করা প্রয়োজন প্রতিটি নমুনার। এই মুহূর্তে শুধু ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে হয় এটি। তবে রোজ ৫ থেকে ৭ লক্ষ নমুনায় তা পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। আর এই অসুখটার বয়স মাত্র কয়েক মাস, তাই এটা নিয়ে নিশ্চিত ভাবে এখনই বলা সম্ভব নয়।”

দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্তের সম্ভাবনা আছে কি? চিকিৎসকরা কি বলছেন? শিরোনামে সংবাদের তথ্য আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে নেওয়া হয়েছে।