আন্তর্জাতিক কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আমাদের দেশে জমি থেকে আলু, পেঁয়াজ, আদাসহ বিভিন্ন ফসল কাটার আগেই আনুমানিক একটা দাম ধরে নিয়ে বিক্রি করা হয়। কিংবা আগাম টাকা নিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসল বিক্রির অঙ্গীকার করে থাকেন চাষিরা। কিন্তু এবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলা খাদ্য দফতর একই ঘরানায় ধান কিনবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, ৬ লাখ টনের বেশি ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১ নভেম্বর মঙ্গলবার থেকে ধান কিনতে মাঠে নেমেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা খাদ্য দফতর। সদ্য শেষ হওয়া মরসুমেও লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি ধান কিনেছিল খাদ্য দফতর। এ বার মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ শতাংশ খরিফ ও ২৫ শতাংশ বোরো মরসুমের ধান কেনা হবে বলে জানা গিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ খাদ্য দফতর জানায়, মঙ্গলবার থেকে জেলায় ৩০টি ধান্ ক্রয় কেন্দ্র চালু হয়ে যাবে। এ মওসুম থেকে জমির পরিমাণ দেখিয়ে চাষিকে ধান বিক্রি করতে হবে। ধান কাটার আগে দফতরে গিয়ে জানিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে রেশন কার্ড-আধার কার্ডের সংযোগ দেখে একটি পরিবারের একজন চাষিকেই ধান বিক্রির সুযোগ দেবে খাদ্য দফতর। ফলে কাটার আগে জামি দেখিয়ে ধান বিক্রি করতে হবে।

অনলাইনেও ধান বিক্রির দিনক্ষণ বেছে নিতে পারবেন চাষিরা। ফলে, সরকারি সহায়ক মূল্যের ধান বিক্রির দিনক্ষণ ও কেন্দ্র নিজেই ঠিক করার সুযোগ থাকছে। ঠিক করার পরে হঠাৎ করে তা বাতিল করা যাবে না বলেও জানানো হয়েছে। চিকিৎসা, শিক্ষা বা বিবাহ সংক্রান্ত জরুরি প্রয়োজনে অন্তত তিন দিন আগে ধান বিক্রির তারিখ বাতিল করে পরবর্তী দিন নিতে হবে। না করে নির্দিষ্ট দিনের অন্তত দশ দিন পরে ফের ধান বিক্রির সুযোগ পাবেন চাষি।এখনও খেত থেকে সব ধান ওঠেনি। ফলে পুরনো ধান বিক্রির সুযোগও রয়েছে চাষিদের কাছে।

 এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন

শীতকালে পুকুরের মাছ ও পানির ১০ সমস্যার সমাধান জানুন

বিঘায় ফলন ২২মণ ব্রিধান ৭৫, খুশি চাষিরা

১৫ দিন পানিতে ডুবে থাকলেও মরে না নতুন ধান বিনা-২৩

নতুন ফসল মুসলি চাষে হতে পারেন লাখপতি, কেজি ১২’শত টাকা

খাদ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, চলতি মওসুমে কুইন্টাল প্রতি ধানের সহায়ক মূল্য ২০৪০ টাকা। সেখানে খোলা বাজারে চালের দাম অনেকটাই বেশি। ফলে এখন চাষিদের ধান্য-ক্রয় কেন্দ্রে আসার সম্ভাবনা কম।

জেলা চালকল মালিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, চাষিরা কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতেই পারেন। কিন্তু আমরা গুণগত মান দেখে তবেই খাদ্য দফতরের কাছ থেকে ধান নেব।

গত মরসুমে সহায়কমূল্যে ধান নেওয়ার পরেও নির্দিষ্ট সময়ে (সেপ্টেম্বর) চাল না দেওয়ায় দু’টি চালকল সংস্থাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়। সাড়ে ছ’হাজার টন চাল পাওনা ছিল সেখান থেকে। এক মাস সময় চেয়ে নেন ওই চালকল মালিকেরা।

রায়না ২ ব্লকের উচালনের চালকল মালিক গফুর আলি খানের দাবি, শুক্রবারের মধ্যেই বকেয়া চাল শোধ করে দিয়েছেন তিনি। আব্দুল মালেক বলেন, ‘‘চালকলগুলি চাল পরিশোধ করে দিয়েছে। এ মরসুমে যাতে এ রকম সমস্যা না হয় তার জন্য আমরা চুক্তিবদ্ধ চালকলগুলিকে সতর্ক ন্য বথাকার জলব।’’

গত মরসুমে জেলার ১০৯টি চালকল সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। এ মরসুমে এখনও পর্যন্ত পাঁচটি চালকল চুক্তি করেছে। জেলা খাদ্য নিয়ামক অসীম নন্দীর দাবি, ‘‘আশা করা যায় ১৫ নভেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় চালকলের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়ে যাবে। আর ওই দু’টি চালকলের সঙ্গে চুক্তি হবে কি না, তা জেলা স্তরের মনিটরিং কমিটি আলোচনা করবে। সেই মতো রাজ্যে প্রস্তাব পাঠানো হবে।’’

এ দিন কালনায় একটি অনুষ্ঠানে ধান কেনা নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দাগেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। তাঁর দাবি, কেন্দ্র সরকার সহায়ক মূল্যে পঞ্জাব থেকে ১৬৯ লক্ষ টন, হরিয়ানা থেকে ৫৯ লক্ষ টন, উত্তরপ্রদেশ থেকে ৭২ লক্ষ টন, তেলেঙ্গানা থেকে ১১২ লক্ষ টন এবং অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ৮০ লক্ষ টন ধান কেনে। সেখানে এখান থেকে কেনা হয় এক লক্ষ টন ধান। তবে মুখ্যমন্ত্রীর চেষ্টায় এ রাজ্য উচ্চ সহায়ক দরে ধান কিনে নেওয়া হয়। এ বার রাজ্যে ৫৫ লক্ষ টন ধান কেনারপরিকল্পনা রয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ