কী হয়েছিলো সেদিন ক্ষেতে

কে এস রহমান শফি, টাঙ্গাইল, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কী হয়েছিলো সেদিন ক্ষেতে আগুন দেয়া কৃষক আব্দুল মালেকের। তা জানার চেষ্টা করেছে দেশের কৃষিভিত্তিক অনলাইন নিউজপোর্টাল এগ্রিকেয়ার২৪.কম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে গণমাধ্যম সবখানেই ক্ষেতে আগুন দেয়ার ঘটনাটি গুরুত্ব পেয়েছে।



সম্প্রতি ওই কৃষকের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। জানা যায়, সেদিন দুঃখ ও ক্ষোভ থেকেই ধানের ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে দেন চাষি আব্দুল মালেক। তবে আগুনে পুড়েছে এক শতাংশ জমির ধান। আশপাশের বিভিন্ন জমিতে কাজ করছিল অনেক দিনমজুর। তারাই এসে নিভিয়ে ফেলে আগুন।

আব্দুল মালেক সিকদার এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আসলে কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। শ্রমিক না পাওয়ায় ও ধানের দাম কম হওয়ায় প্রতিবাদ স্বরুপ ক্ষেতে আগুন দেই। শিক্ষার্থীরা ধান কেটে দেয়ায় আমি অনেক খুশি।

গত বুধবার (১৫ মে) মো. আবদুল মালেক সিকদারের ভাগ্নে লায়ন নজরুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজের অনার্স (হিসাবরক্ষণ) ১ম বর্ষের ছাত্র আতিকুর রহমান সিয়াম তার ১৫ জন বন্ধুকে নিয়ে  মামার জমির ধান কেটে দিয়েছেন।

টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা গ্রামের ওয়াজেদ আলী মাস্টারের ছেলে মো. আবদুল মালেক সিকদার।

চাচা কালিহাতী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত হুরমুজ আলী বিএসসি। বয়স ৫৩। অনেকদিন প্রবাসে ছিলেন। ১১ বছর যাবত দেশে এসেছেন।

আরও পড়ুন: যুগ যুগ ধরে অবহেলিত কৃষকের হয়ে খুব কম মানুষই কথা বলেছে

এমন যদি হতো… প্রগাঢ় হতো কৃষকের হাসি

নিজের জমি বলতে কিছুই নেই আবদুল মালেক এর। অন্যের ১১৫ শতাংশ জমি চাষ করেন। জমিতে শুধু বোরো ধানের চাষ হয়। এরপর বোনা আমন বোনা হয় কিন্তু পানি কম হলে ফসল হয়, আর বেশি হলে ফসল নষ্ট হয়ে যায়।

সেই সাথে নিজের একটা পুকুর আছে, যেখানে মাছের চাষ করেন। দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে মিম সিকদার কুদুদিনী কলেজে অনার্স পড়ে, মেজ মেয়ে মুন সিকদার স্থানীয় স্কুলে ৪র্থ শ্রেনিতে পড়ে আর ছোট ছেলে মাহি সিকদার ৩য় শ্রেনিতে পড়ে। কষ্ট করেই সংসার চালাতে হয়।

কী হয়েছিলো সেদিন ক্ষেতে আগুন দেয়া কৃষক আব্দুল মালেকের: সেদিন ছিল রোববার। ধান কাটার মজদুর খুঁজতে গিয়েছিলেন এলেঙ্গা হাটে। মজদুর পেয়েছিলেনও। ৬০০ টাকা রোজ। তাদের দাবি তারা পোল্ট্রি মুরগী আর পাঙ্গাস মাছ খাবেন না।

ক্ষেতে পানি থাকলে ধান কাটবেন না। যন্ত্রচালিত ধান মাড়াই মেশিন থাকতে হবে। কিন্তু শেষে তিনি হেরে গেলেন। তার যন্ত্রচালিত মাড়াই মশিন নেই। তাই খালি হাতে ফিরে এলেন।

একে তে ধানের দাম নেই। তারওপর শ্রমিক সঙ্কট। সবমিলিয়ে নিজেকে আর সামলিয়ে নিতে পারেন নি। মনের দু:খে কালোহা বাজার থেকে এক লিটার কেরোসিন তেল কিনে নিয়ে আসেন ক্ষেতে। এক মোঠা খড় নিয়ে ক্ষেতের মাঝে ঢুকে খড়ের ওপর আগুন দেন। ইতিমধ্যে আশেপাশের দিনমজুরেরা দেখে তারা আগুন নিভিয়ে ফেলেন।

আবদুল মালেক সিকদার বলেন, এই ছোট্র ঘটনা যে এতদূর যাবে তা তিনি বুঝতে পারেন নি। তিনি কখনো ভাবেননি বিষয়টি নিয়ে এতো আলোচনা হবে।

বুধবার (১৫ মে) দুপুরে জেলার সরকারি সা’দত কলেজ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ, লায়ন নজরুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজসহ বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা এক সঙ্গে আব্দুল মালেক সিকদারের ক্ষেতের ধান কেটে দেন।



লায়ন নজরুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী মো. রাফি বলেন, সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারি শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় ধান ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ করেছেন আব্দুল মালেক সিকদার। মানবিক বিবেচনা করে আমরা ক্ষেতের ধান কেটে দিয়েছি।

মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজের শিক্ষার্থী মো. আল আমিন বলেন, ধানের দামের তুলনায় ধান কাটা শ্রমিকের মূল্য অনেক বেশি। প্রায় দেড় মন ধানের দাম দিয়ে একজন ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি হয়। সেই দিক বিবেচনা করে আমরা ধান কেটে দিয়েছি।

একই কলেজের শিক্ষার্থী মো. সুজন বলেন, ধান কাটা শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ার পরও শ্রমিক সংকট রয়েছে। ফলে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছে অনেক কৃষক। সেই জন্য আমরা বিভিন্ন কলেজ থেকে এসেছি সহযোগিতা করার জন্য।