ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সম্ভাবনাময় ও লাভবান ফল হিসেবে ড্রাগন ইতিমধ্যে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ড্রাগনের ফল সারা বছরই উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। কৃত্রিমভাবে দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে সারা বছর ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো।

এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ রহিম ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান। কৃষি তথ্য সার্ভিসে লেখাটি এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর পাঠকের কাছে তুলে ধরা হলো।

কৃষি বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন প্রযুক্তি ও জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশে প্রভূত অগ্রগতি সাধন করলেও পুষ্টি নিরাপত্তায় এখনো কাক্সিক্ষত অবস্থানের পৌঁছাতে পারেনি। ফল সরাসরি ভক্ষণযোগ্য বলে পুষ্টির অধিকাংশ আমরা ফল থেকে পাই।

সরকারের বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা ও মানুষের পুষ্টি সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশে ফল চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। দেশীয় ফলের আবাদের সাথে সাথে বিদেশ থেকে আনিত ফলের অভিযোজিতা ও মূল্যায়নের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় কিছু ফলের জাত আবিষ্কৃত হয়েছে। ড্রাগন ফল তাদের মধ্যে অন্যতম।

বাংলাদেশের জলবায়ু ও মাটি ড্রাগন ফল উৎপানের জন্য যথোপযোগী। ড্রাগন ফল সুস্বাদু, পুষ্টির দিক থেকে প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা কোলেস্টেরল কমায়, ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, লাল-মাংসের জাতের ড্রাগন ফলে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান বিদ্যমান রয়েছে।

আরও পড়ুন: ২ একর জমি থেকে ২০ লাখ টাকা ড্রাগন বিক্রি

সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশে ফল চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। দেশীয় ফলের আবাদের সাথে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং উচ্চমূল্যের একটি ফসল যার নাম ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ সেই সঙ্গে ওষুধি গুণাগুণ থাকায় বিশ্ববাজারে ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং বাংলাদেশেও ড্রাগন ফলের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

ড্রাগন ফল একটি গ্রীষ্মকালী ফসল। বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের মৌসুম হল মে-অক্টোবর পর্যন্ত। এই সময়ে বাংলাদেশে ফলের পর্যপ্ততা প্রায় ৬০% কিন্তু শীতকালে ফলের প্রাপ্যতা থাকে ১৯%। শীতকালে ফলের প্রাপ্যতা বাড়ানোর জন্য কৃত্রিমভাবে দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে সারা বছর ড্রাগন ফল উৎপাদন প্রযুক্তিটি তুলে ধরা হলো।

আরও পড়ুন: ছাদ বাগানে টবে চাষ করুন ড্রাগন ফল

পরীক্ষণ স্থাপন: শীতকালে অর্থাৎ নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি মাসে কম দিনের দৈর্ঘ্য ও ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে ড্রাগন ফলে কোন ফুল-ফল আসে না। সম্প্রতি ২০১৮-২০১৯ খ্রি. বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহে শীত মৌসুমে রাতের বেলা বিভিন্ন লাইট জ্বালিয়ে অ-মৌসুমে ফল উৎপাদনের উপর একটি পরীক্ষা প্লট স্থাপন করা হয়।

কৃত্রিমভাবে দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির জন্য ড্রাগন ফলের গাছে লাইট স্থাপনের সময়: নভেম্বর মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর মাসের ১ম সপ্তাহ পর্যন্ত লাইট স্থাপন করা যাবে। সন্ধ্যা ৬টা-রাত ১২টা (ছয় ঘণ্টা) দু’মাসের জন্য লাইট জ্বালিয়ে পরীক্ষা করা হয়।

পরীক্ষণ প্রণালী বিভিন্ন মাত্রার লাইট যোগ করতে হবে। করণীয় কাজ সময়মতো লাইটগুলো জ্বালিয়ে দেয়া এবং বন্ধ করা। তাপমাত্রা ও আলোক তীব্রতা পরিমাপ করা এবং সম্ভব হলে রাতে (১০টা-১১টা) ফুল ফোটা শেষ হলে পরাগায়ন ঘটিয়ে দিলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।

পরীক্ষণ ফলাফল মূল্যায়ন: ফুল-ফল উৎপাদনে বিভিন্ন ফলাফল পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। সব আলোতে ড্রাগন গাছে কমবেশী ফুল ফল এসেছে তবে ১০০ ওয়াট নরমাল বাল্বে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। ১০০ ওয়াট নরমাল বাল্বে ফুল আসতে ৪৮ দিন লাগল এবং প্রতিটি পিলারে ১৬টি ফল ধরে কিন্তু কন্ট্রোল পিলারে কোন ফল আসেনি।

সর্বোচ্চ ফলের ওজন ৩০২ গ্রাম, প্রতিটি পিলারে ৫ কেজি এবং প্রতি হেক্টরে ৫ টন ফল পাওয়া যায় ১০০ ওয়াট নরমাল বাল্ব ট্রিটমেন্ট থেকে। ফলের ভক্ষণযোগ্য অংশ ৭১% ও টিএসএস ১৩.৮০%। সর্বোচ্চ খরচ ও লাভের অনুপাত ১:৩.০৯।

উদ্যান ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে, কৃত্রিমভাবে দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে সারা বছর ড্রাগন ফল উৎপাদন প্রযুক্তি গ্রহণে সারা বছর ফল পাওয়া, পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ কাক্ষিত কৃষি প্রবৃদ্ধি অর্জন ত্বরান্বিত হবে। এর ফলে দেশের সামগ্রিক ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে ও কৃষক লাভবান হবে। কৃত্রিমভাবে দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে সারা বছর ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি শিরোনামের লেখাটি কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে নেয়া হয়েছে।