চলতি বছরে কৃষি ঋণের

ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করোনা মহামারীতে কৃষি খাতের ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত পাঁচ হাজার কোটি টাকার মধ্যে কৃষকের পাওনা সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে ব্যাংকে।কৃষি প্রণোদনার পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিতরণে এপ্রিল মাসে ৪৩টি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হলেও ব্যাংকগুলো এই চার মাসে মাত্র ৪৯৮ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। বাকি সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা এখনো পড়ে রয়েছে ব্যংকে। এমনকি ১৩টি ব্যাংক এখন পর্যন্ত এক টাকাও বিতরণ করেনি।

এসব তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ঢাকা টাইমস। রহমান আজিজের প্রতিবেদন পাঠকের জন্য দেওয়া হলো।

বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে এই প্রণোদনার অর্থ কৃষকদের দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে সবকিছু গুছিয়ে আনতে সময় লাগার কারণে ঋণ বিতরণে বিলম্ব হওয়ার দাবি করছে কোনো কোনো ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এসব নিয়ে উদ্ধিগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত ঋণ বিতরণে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। আর কৃষি বাঁচাতে প্রণোদনার এই অর্থ কেন আটকা পড়লো সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে চাপ দেবেন বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

করোনা মহামারী শুরু হলে কৃষি খাতের জন্য ১২ এপ্রিল ডেইরি ফার্ম, পোলট্রি ফার্ম, মৌসুমি ফল-ফুল ও মৎস্য খাতে চলতি মূলধন সরবরাহের লক্ষ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ তহবিল থেকে সহজ শর্তে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে পারবেন কৃষক। শর্ত অনুযায়ী এ ঋণ বিতরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে থেকে ক্লেইম করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা দিয়ে দেবে।

আরোও পড়ুন: প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পে হরিলুট! কেনাকাটায় অস্বাভাবিক দাম

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের জনতাসহ ১৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক কোনো ঋণই বিতরণ করেনি। আবার কোনো কোনো ব্যাংকের শাখা পর্যায়ে শাখা প্রধান কিছু জানেনও না। আবার জনতা ব্যাংক তাদের শাখাগুলোতে চলতি মাসের ৯ তারিখ এ বিষয়ে শাখা প্রধানদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।

জানা যায়, প্রণোদনার এই অর্থ বিতরণে কাল বিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ উদ্ধিগ্ন। কেন বিলম্ব বা ঋণ বিতরণ কেন হচ্ছে না এবিষয়ে ব্যাংকগুলোর কাছে ব্যাখাও চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তদারকি কমিটি গঠন, শাখা পর্যায়ে ফোন করাসহ বেশ কিছু উদ্যোগও গ্রহণ করেছে ব্যাংক সেক্টরের নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মধ্য এপ্রিল থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংক বিতরণ করেছে মাত্র ৪৯৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর থেকে ১৭ হাজার ৯৮০ জন কৃষক উপকৃত হয়েছে। কোনো ব্যাংক ১০০ টাকা বিতরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ক্লেইম করলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে ১০১ টাকা দেবে। আর গ্রাহকের কাছে থেকে সুদ হিসাবে নেবে ৪ শতাংশ। সরকারের টাকা বিতরণ করলেও ওই ব্যাংক অপারেটিং চার্জ হিসাবে পাঁচ শতাংশ সুদ পাবে। কিন্তু অধিকাংশ ব্যাংক আগ্রহ দেখাচ্ছে না এতে। কোনো কোনো ব্যাংক বাধ্যবাধকতার কারণে বিতরণ করলেও তা নামমাত্র।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত একটি আবেদনও পড়েনি এবং কোনো ঋণ বিতরণ করেনি জনতা ব্যাংক, আইএফআইসি, যমুনা, মধুমতি, ওয়ান, সীমান্ত ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এছাড়া স্টান্ডার্ড, সাউথইস্ট, এনআরবি গ্লোবাল, এনআরবি, এনসিসি ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে আবেদন এলেও কোনো ঋণ বিতরণ করেনি ব্যাংকগুলি।

আরোও পড়ুন:খামারিদের প্রণোদনা নিশ্চিতে ভর্তুকী মূল্যে খাদ্য ও বাচ্চা দেয়ার প্রস্তাব

কোন ব্যাংকে কতো আবেদন-বিতরণ

রাষ্ট্রায়ত্ব অগ্রণী ব্যাংকে আবেদন জমা পড়েছে ৭১৪টি। এর মধ্যে ৭১৪ জনকে ৫ কোটি ৯০ লাখ ৮১ হাজার টাকা বিতরণ করেছে। বেসিক ব্যাংকে আবেদন পড়েছে ২৩টি এর মধ্যে ১১টি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ বিতরণ করেছে ৯৯ লাখ টাকা। ১৩ হাজার ৬৯৭টি আবেদন পড়েছে কৃষি ব্যাংকে। ব্যাংকটি এসব কৃষককে ২৫৬ কোটি ৯৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা বিতরণ করেছে। বিডিবিএলে ১টি আবেদনের বিপরীতে ৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৪৮২ আবেদনের বিপরীতে ১৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা বিতরণ করে।

রূপালী ব্যাংকে ১ হাজার ৩৩৩টি আবেদনের বিপরীতে ১ হাজার ৩০৯ জন কৃষককে দেয়া হয়েছে ৮ কোটি ৮৮ লাখ ১৪ হাজার টাকা। সোনালী ব্যাংকে ১ হাজার ৩৮টি আবেদনের বিপরীতে ১ হাজার ২১ জনকে ৭ কোটি ৭০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। এবি ব্যাংক ১৬ আবেদনের বিপরীতে ৪ কৃষককে দিয়েছে ৬১ লাখ ২ হাজার টাকা। আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকে ৫৪টি আবেদনের বিপরীতে ৪৮ জনকে ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ব্যাংক এশিয়া ১০টি আবেদনের বিপরীতে ১৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ব্র্যাক ব্যাংক ৩৭৫টি আবেদনের বিপরীতে ১৬৭ কৃষককে ঋণ দিয়েছে ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ডাচ বাংলা ব্যাংক ৭টি আবেদনের বিপরীতে ১ জনকে ২৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এক্সিম ব্যাংক ১৮টি আবেদনের বিপরীতে ৬৯ কোটি ৭৩ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংক ৮ আবেদনের বিপরীতে ১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

ইসলামী ব্যাংক ১০১টি আবেদনের বিপরীতে ১৪ জনকে ২ কোটি ৮৪ লাখ। মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৭৪টি আবেদনের বিপরীতে ১৫ কোটি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ১টি আবেদনের বিপরীতে ২০ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। ন্যাশনাল ব্যাংক ৪৭টি আবেদনের বিপরীতে ১২ জনকে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ১১টি আবেদনের বিপরীতের ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। প্রাইম ব্যাংক ৬টি আবেদনের বিপরীতে ২ জনকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। পূবালী ব্যাংক ২০টি আবেদনের বিপরীতে ৯ জনকে ২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ৯টি আবেদনের বিপরীতে ৮১ লাখ টাকা।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১টি আবেদনের বিপরীতে ১৫ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। এসবিএসি ব্যাংক ১৪টি আবেদনের বিপরীতে ৫ জনকে ২৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সিটি ব্যাংক ৩১টি আবেদনের বিপরীতে ১৩ জনকে ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংক ২৬টি আবেদনের বিপরীতে ৫ কৃষককে ১৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ট্রাস্ট ব্যাংক ১৭টি আবেদনের বিপরীতে ২ জনকে ৬ লাখ টাকা। ইউসিবি ২৮টি আবেদনের বিপরীতে ২১ জনকে ৩ কোটি ১ লাখ টাকা। উত্তরা ব্যাংক ১৬২টি আবেদনের বিপরীতে ১২৯ জনকে ১ কোটি ১২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বিতরণ করেছে।

নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কয়েকজন ব্যাংকার ঢাকা টাইমসকে জানান, প্রণোদনার এই ঋণ বিতরণে তাদের অনাগ্রহ নয়, বরং গোছাতে একটু দেরি হয়ে গেছে। কৃষকের কাছে সরাসরি ঋণ পৌঁছাতে তারা চেষ্ঠা চালাচ্ছেন। খুব দ্রুত ঋণ বিতরণ শুরু করবে তারা। আবার কিছু এলাকায় বন্যার কারণে ঋণ বিতরণে অনেক বিষয় আশয় বিবেচনা করার জন্যও দেরি হয়েছে বলে তাদের দাবি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিশ্চুক ঢাকা টাইমসকে জানান, চুক্তিবদ্ধ ব্যাংকগুলোকে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ বিতরণে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শাখা ব্যবস্থাপকদের টেলিফোনে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ এবং পরামার্শ প্রদান করা হচ্ছে। ব্যাংকসমূহের শাখাওয়ারী বরাদ্দকৃত ঋণের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এদিকে শাখাগুলোতে ৯ আগস্ট প্রণোদনার ঋণ বিতরণে চিঠি দিয়েছে জনতা ব্যাংক। রাষ্ট্রয়াত্ব এ ব্যাংক এপ্রিলের পরিবর্তে কেন আগস্টে চিঠি দিয়েছে জানাতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ কর্মকর্তা জানান, জনতা ব্যাংকের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখা তলব করে পত্রপ্রেরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

কৃষি বাঁচাতে প্রণোদনার অর্থ বিতরণের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি প্রণোদনার অর্থের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। কৃষকের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতেও সবসময় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি কৃষকরা রবি মৌসুমে ঋণ নিতে বেশি আগ্রহী। অর্থাৎ আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বেশি ঋণ বিতরণ হবে।’

এখনো ১৩টি ব্যাংক ঋণ বিতরণ না করার প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরকে চাপ দিবো কৃষককে প্রণোদনার অর্থ দিতে। তাছাড়া আমাদের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা চাষীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও ব্যাংকের কর্মকর্তাদের তদারকি করতে শুরু করেছেন। আশা করছি অচিরেই এটির সমাধান হয়ে যাবে।’

কৃষকের পাওনা সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে ব্যাংকে শিরোনামে সংবাদের তথ্য ঢাকা টাইমস থেকে নেওয়া হয়েছে।