নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীর সবেচেয়ে বড় কৃষিপণ্যের হাট বানেশ্বর হাট থেকে আম, আলু, পেঁয়াজ, ভুট্টা, ডালসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের পাইকারী কেনাবেচায় উঠে গেল ‘ঢলন’ প্রথা। অন্তত তিন দশক ধরে এসব পণ্য কেনাবেচায় ঢলন দিতে হতো কৃষককে।

আজ শনিবার (২৪ অক্টোবর ২০২০) থেকে হাটে পণ্য বিক্রিতে আর ‘ঢলন’ দিতে হয়নি। জেলার পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ হাটে যাওয়ার পর যে সব আড়তদার কৃষকের কাছে ঢলন নিয়েছিলেন তারা মূল্য পরিশোধ করেছেন।

কৃষকরা জানিয়েছেন, এসব আড়তে এক মণ আম বিক্রি করতে গেলে ৬ কেজি ঢলনসহ ৪৬ কেজি দিতে হতো। অন্যান্য কৃষিপণ্যের মণ হতো ৪২ কেজিতে। এতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন চাষিরা।

এর আগে শুক্রবার বানেশ্বর বাজারে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও চাষিদের নিয়ে বৈঠক করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মনসুর রহমান। ওই সভায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম হিরা বাচ্চু, ইউএনও নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুমানা আফরোজ ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সামশুন নাহার ভুঁইয়া।

সভায় চাষিরা বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরেই তাদের এক মণে অতিরিক্ত কৃষিপণ্য ব্যবসায়ীদের দিতে হয়। দিতে না চাইলে তার কৃষিপণ্য কেনা হয় না। তারা আড়ৎদারদের কাছে জিম্মি। প্রায় তিন দশক ধরে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন। তারা এই ‘ঢলন’ প্রথা বাতিলের দাবি জানান।

ব্যবসায়ীরা তাদের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। তবে তা টেকেনি। ইউএনও সিদ্ধান্ত দেন, এখন থেকে সব পণ্যের এক মণ হবে ৪০ কেজিতে। এর বেশি নেয়া যাবে না।

এ বিষয়ে পুঠিয়ার ইউএনও নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, তিনি অল্পদিন আগেই পুঠিয়ায় যোগ দিয়েছেন। সেখানে গিয়েই চাষিদের কাছ থেকে এ বিষয়টি শোনেন। চাষিরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তাকে অনুরোধ করেন।

তিনি বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই এই সভার আয়োজন করা হয়।

ইউএনও আরো জানান, সারাদেশে ৪০ কেজিতে এক মণ। ব্যতিক্রম ছিল বানেশ্বর বাজার। অথচ এই বাজারেই রাজশাহীর মধ্যে সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে। এখানে চাষিরা বছরের পর বছর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছিলেন। এক মণের জন্য আমের ওজন নেয়া হতো ৪৬ কেজি।

পেঁয়াজসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের এক মণ হতো ৪২ কেজিতে। সেই প্রথা বাতিল করা হলো। এখন থেকে সব পণ্যের এক মণ হবে ৪০ কেজিতে। এটি নিশ্চিত করতে আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে।

পুঠিয়ার ঝলমলিয়া এলাকার চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০ বছর ধরে তিনি বাগান ইজারা নিয়ে আমচাষ করেন। অন্যান্য কৃষিপণ্যও আবাদ করেন। তার কৃষিপণ্য কোনদিন ৪০ কেজিতে এক মণ ধরা হয়নি। ঢলন দিতেই হয়েছে। এতদিন পর ঢলন প্রথা বন্ধ হওয়ায় তার ভাল লাগছে।

বানেশ্বর বাজার বণিক সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য ওসমান আলী এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে দাম একটু কম-বেশি হতে পারে। কিন্তু এক মণ পণ্যের ওজন ৪০ কেজিই হবে। তারা সেটি মেনে চলবেন। শুক্রবার থেকেই এটি কার্যকর করা হয়েছে।

তিনি আরোও বলেন, ঢাকায় নেয়ার পথে কৃষিপণ্য পঁচে যায়। এ জন্য আমের ক্ষেত্রে ছয় কেজি এবং অন্যান্য কৃষিপণ্য দুই কেজি বেশি নেয়া হতো।

কৃষিপণ্যের পাইকারী কেনাবেচায় উঠে গেল ‘ঢলন’। এতে লাভবান হবেন কৃষকরা। অতিরিক্ত পণ্যের দাম কয়েক দশক ধরে ব্যবসায়ীদের পকেটে গেলেও তা এখন কৃষকদের কাছে পৌঁছাবে। কৃষকরা এতে খুশি হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ