মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: বছর ছয়েক আগের কথা। সংসারে পাত ফেলে বসেছে অভাব। অসুস্থ স্বামী আব্দুর রশিদ খাঁ কামলা দিতে পারেন না। সংসার চালাতে এনজিও থেকে একের পর এক টাকা উঠাতে হয় বিলকিস আরা বেগমকে। পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭ লাখ টাকা। এমন সময় অন্ধের একমাত্র অবলম্বন হয়ে দেখা দেয় কৃষি বিভাগ। পরামর্শ দেয় কেঁচো চাষের। সেই থেকে ৭ লাখ টাকার কিস্তির সুরাহা করতে শুরু হয় ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনে কেঁচো চাষ।

বলছিলাম রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছী কারিগরপাড়ার বিলকিস আরা বেগমের কথা। যিনি ভার্মি কম্পোস্ট সার (কেঁচো সার) উৎপাদন করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। ২০১৬ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অভাব মিটিয়ে ৭ লাখ টাকার কিস্তি এখন দেড় লাখ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। মাসে আয় করছেন ১৫ হাজার টাকা।

সে সময়ে তিনি একটি চাড়ি, ৫০০ কেঁচো আর পাঁচশ টাকা নিয়ে মাঠে নামেন। পবা উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে নেন প্রশিক্ষণ। তারপর অভাব পালিয়ে যায় দৌড়ে।

বিলকিস আরা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, স্বামী আব্দুর রশিদ খাঁ অসুস্থ হওয়ায় ক্ষেতে কাজ করতে পারেন না। বর্তমানে এই সার উৎপাদন করেই তিনি সংসার নির্বাহ করছেন। প্রথমবার তিনি মাত্র ৬০০ টাকার সার বিক্রি করেছিলেন। পর্যায়ক্রমে চাড়ির (সার উৎপাদনের জন্য ছোট পাত্র) সংখ্যা বৃদ্ধি করেন। বর্তমানে চাড়ির সংখ্যা ৩০০। গোবর প্রক্রিয়াজাত করার জন্য রয়েছে একটা হাউজ।

পড়তে পারেন: বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদনে সফল কৃষকরা

সার উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রাম থেকে গোবর সংগ্রহ করে প্রথমে ডিবি তৈরি করেন। সংগৃহীত গোবর ২০-২৫ দিন একস্থানে গচ্ছিত রেখে পরে হাউজ ও চাড়িতে দেন। এই গোবর কেঁচো বেশী খায় এবং সারও বেশী হয়। অর্থ্যাৎ, গোবরের উপরের অংশ ঝুরঝুরে হয়। ঝুরঝুরে অংশ প্রতিমাসে সার বের করে নিতে হয়। পরে আবার গোবর দিয়ে কেঁচো ছেড়ে দিতে হয়।

আয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিমাসে গড়ে ৩০ মণের অধিক সার উৎপাদন করছেন। সেক্ষেত্রে প্রতিমাসে। প্রতিমণ সারের দাম ৫০০-৬০০টাকা। এছাড়াও অন্যান্য কৃষকরাও এখন তার নিকট থেকে সার ক্রয় করছেন। প্রতিমাসে গড়ে সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকা আয় করতে পারছেন। এই আয় থেকে চলছে সংসার। স্বামীর ঔষুধের খরচ।

পড়তে পারেন: রাজশাহীতে বাড়ছে কেঁচো সার উৎপাদন

হাসতে হাসতে তিনি বলেন, “আমার ছেলের বিয়ে হয়ে আলাদা হয়ে গেছে। খরচ আরো কমে গেছে। আমরা দুইডাই মানুষ। যা টাকা আসে তা দিয়ে আনন্দে দিন কেটে যায়। ৭ লাখ টাকা কিস্তি আমি এইটার উপর দিয়েই চালাইছি। এখন আর লাখ দেড়েক টাকা আছে। বছর খানেকের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।”

“আমার স্বামীর অসুখ না হলে আমি আরো সামনে আগাতে পারতাম। আরো চাড়ি বাড়িয়ে আরেকটা হাউজ করে নিতাম। পরিশ্রম করে আরো লাভ হতো। কিন্তু আমি আপাতত আর পারছি না। তবে, আশা আছে। কেউ কেঁচো কিনতে চাইলে আমার কাছে আসলে সব বলে দিব। ২ থেকে আড়াই টাকা পিস নিব। জাত, চাষ অন্যান্য যেসব বিষয় আছে সেগুলো কৃষি বিভাগ জানিয়ে দিবে।”

পড়তে পারেন: কেঁচো সারে ভাগ্য খুলেছে তানিয়ার, মাসিক আয় ২৫ হাজার

পবা উপজেলা বড়গাছী ব্লকের কৃষি অফিসার জানান, বেশ কয়েকজনকে কেঁচো সার উৎপাদনের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের আধুনিক কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের সহায়তায় সেডসহ হাউজ করে দিয়েছে। আগামীতে আরো দেয়া হবে। এই সার উৎপাদন ও ব্যবহারকারীদের উৎসাহিত করতে উৎপাদনকারীদের নিকট হতে কেঁচো সার ক্রয় করা হয়। আর এই সার বিভিন্ন প্রদর্শনীতে বিনামূল্যে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা বলেন, অত্র উপজেলায় আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারনের লক্ষে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিলকিস আরা বেগমকে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। সেইসাথে সেডসহ একটি হাউজ নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। এতে এই সার উৎপাদন করতে তার অনেক সহজ হবে। আগামীতেও এই কার্যক্রম চলমান থাকবে। এই ধরনের উদ্যোক্ত্যাদের উৎপাদিত সার কৃষি অফিস ক্রয় করছে। আগামীতেও এ কার্যক্রম চলামান থাকবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ