নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কমঃ রাজশাহীর পবা উপজেলার খামারি সাইফুল ইসলাম। তাঁর পোল্ট্রি খামার গড়ে তুলেছিলেন প্রায় ৮ বছর আগে। বর্তমানে লোকসানে লোকসানে খামার বন্ধ করেছেন তিনি। ‍শুধু সাইফুল নয়, রাজশাহীর লেয়ার, ব্রয়লার, সোনালী খামার মিলিয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বন্ধ হয়েছে ব্রয়লার খামার। সাম্প্রতিক ব্যবসা্ বাদ দেওয়া খামারিরা বলছেন এককেজি উৎপাদন খরচ ১৫০ টাকা প্রায়। আরি বিক্রি করতে হচ্ছে ১২০ টাকা!

খামারিরা বলছেন, আজকে ব্রয়লার বিক্রি করছে ১২০ টাকায়। ডিম বিক্রি করছে ৭.৭৫-৮.০০ টাকায়। ব্রয়লার খাদ্যের দাম ২.৫ টাকা এবং লেয়ার খাদ্যের দাম ৫ টাকা কেজিতে বেড়েছে। প্রতিটি ডিম উৎপাদন খরচ ১১ টাকার উপরে।  প্রতি কেজি ব্রয়লারের উৎপাদন খরচ ১৪৫-১৫০ টাকা। দেশের ৮০/৯০ হাজার খামার বন্ধ হলে ৫০ লক্ষ লোক সরাসরি বেকার হবে, ব্যাংকে খামারিদের খেলাপি ঋন বাড়বে।

প্রায় ৩ দশক আগে এক লাখ টাকা খরচ করে মুরগির খামার গড়ে তোলেন রাজশাহী নগরীর হেঁতেম খাঁ এলাকার শফিকুল ইসলাম। স্বপ্ন ছিল নিজের গড়া খামারে মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী হবেন। দু দশক ভালোভাবে চললেও বিপত্তি বাঁধে ২০১২ সালের পর থেকে। কিন্তু বড় ধাক্কা খেয়েছেন করোনার প্রথম বছরেই। ১৬ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে গুটিয়ে নিয়েছেন ব্রয়লার ব্যবসা।

ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় পরের বছর ৩ হাজার লেয়ার মুরগি পালন করেন তিনি। কিন্তু কিছুতেই আলোর মুখ দেখতে পারছেন না। ফিডের দাম বাড়ার কারণে ও পণ্যের দাম না থাকায় দিন দিন আশাহত হয়েছেন এই খামারি। অভিযোগ, খুচরা বাজারে দাম থাকলেও মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে একের পর এক লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁকে। এবছর ব্রয়লার মুরগি না থাকলেও ডিম বিক্রি করে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে তাঁর।

খামারে উৎপাদিত ডিম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলাসহ ঢাকা শহরেও যায়। রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বাজার পরিস্থিতিতে বর্তমানে মুরগির চাহিদা কম থাকায় বাজারদর পড়ে গেছে। ফলে ক্ষুদ্র খামারিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।

এই খামারি এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমার গত ৩ বছরে ১৬ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। ব্রয়লার পালন ছেড়েছি। একটা ৯ লাখ টাকার শেড পড়ে আছে। পোল্ট্রি সেক্টর ঝুঁকির সম্মুখীন। বলা যায় খামারিরা পথে বসেছেন। ডিমের উৎপাদন খরচ এখন ১০ টাকা আর বিক্রি হচ্ছে ৭ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ৫০ টাকা পিস কিনে ৯০ টাকা কেজিতে খরচ করে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করে ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় নাই।

পবা উপজেলার আরেক খামারি সোহেল রানা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, খামারে যে পরিশ্রম করতে হয় তাতে লাভের কোন আলোচনা করা যাবে না। ৬০ দিনে সোনালি মুরগি বিক্রয়ের উপযোগী হয়। আমার খামারের মুরগি বিক্রয়ের উপযোগী হয়ে গেছে। পাইকাররা প্রতি কেজি মুরগি ১৯০ টাকা দর করছেন, যেখানে আমার খরচ পড়েছে ২৩০ টাকা। হিসাব করে দেখেছি, এই পর্যায়ে মুরগি বিক্রি করলে মোটা অঙ্কের লোকসান যাবে। কিছু করার উপায় নাই বিক্রি করতে হবে। লোকসান একবার যায় আবার আরেক চালানে কিছু লাভ আসে সেটা দিয়ো আবার খামার চালু রাখি। এভাবেই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছি। খাদ্যের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। ফলে খামারিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।

বাগমারা উপজেলার দামনাশ এলাকার লেয়ার খামারি হাসানুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, খাদ্যের দাম অনেকটা বেড়েছে ভাই। ১৬’শ টাকার ফিডের বস্তা এখন ৩৪’শ টাকা। ডিমের দাম ১২ টাকা পিস পাইকারি বাজার হলে লাভ হবে তাছাড়া ব্যবসা ছাড়তে হবে। আমি এ বছর দেখব, এরপর খামার ব্যবসা ছেড়ে অন্যকিছু করব।

রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, রাজশাহীর ৭০ শতাংশ খামার বন্ধ। বহুবার বলেছি বিভিন্ন জায়গায়। কোন কাজ হয়না। পোল্ট্রি ফিডের বর্তমান দাম খামার চালিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত নয়। ডিমের দাম উৎপাদন খরচের তুলনার কম। প্রতিপিস ডিমে ৩ টাকা লোকসান টাকা দিচ্ছেন খামারিরা। খাদ্যের দাম কমানো, প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, সটিক বাজার নির্ধারণ সবকিছু এখন করা জরুরি প্রয়োজন। তা না হলে পোল্ট্রি খাত টিকবে না।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো: আখতার হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয় আবার চালু হয়। ডিম মুরগির দাম কমার পর খামারিরা স্মারকলিপি দিয়েছিলেন আমাদের কাছে। পরে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে আমরা অবহিত করেছি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ