নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আউশ ও আমন ধান চাষে নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এর বৈজ্ঞানীরা। খরা সহিষ্ণু নেরিকা-১০ জাত থেকে উদ্ভাবিত এ নতুন জাতের ধান গাছের বাড়বাড়ন্তি প্রচন্ড খরায় বন্ধ থাকে। আবার যখন অনুকূল পরিবেশ আসে তখন দ্রুত বাড়বাড়তি সম্পন্ন করে স্বাভাবিক ফলন দিতে সক্ষম।

আউশ ও আমন মৌসুমে চাষ উপযোগী বিনা ধান ১৯ বরেন্দ্র ও পাহাড়ী এলাকাসহ সারাদেশে বৃষ্টি নির্ভর অবস্থায় সরাসরি রোপন (ডিবলিং) উপযোগী। সেচের পানি সাশ্রয়ী। জীবনকাল ৯৫-১০৫ দিন। আউশ মৌসুমে গড় ফলন ৩.৮৪ টন/হে. ও সর্বোচ্চ ফলন ৫.০ টন/হে.। আমন মৌসুমে গড় ফলন ৫.১৬ টন/হে. ও সর্বোচ্চ ফলন ৫.৫টন/হে.। চাল সরম্ন ও লম্বা।

পড়তে পারেন: ১৫ দিন পানিতে ডুবে থাকলেও মরে না নতুন ধান বিনা-২৩

ধান চাষিরা ভাইয়েরা আসুন নতুন এ জাতের ধান চাষের শুরু থেকে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তা জেনে নেই। জমি তৈরি থেকে শুরু করে ধানের ফলন ঘরে তোলা পর্ন্ত পুরো নিয়ম তুলে ধরা হলো।

জমি ও মাটি: বেলে দো-আঁশ এবং এটেল দো-আঁশ জমি এই জাতের চাষের উপযোগী। জমি তৈরী: জাতটির চাষাবাদ পদ্ধতি অন্যান্য উফশী রোপা আমন জাতের মতই।

বপণের সময়: আউশ: আউশ মৌসুমে মধ্য মার্চ (১লা চৈত্র) থেকে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ (১৫ই বৈশাখ) পর্যমত্ম। আমনঃ আমন মৌসুমে মধ্য জুলাই (১লা শ্রাবন) হতে মধ্য আগস্ট (১লা ভাদ্র) পর্যমত্ম বপন করা যায়। বীজ হার: প্রতি হেক্টর জমি চাষের জন্য ২৫-৩০ কেজি বা এক একর জমির জন্য ১০-১২ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়।

পড়তে পারেন: জনপ্রিয় হচ্ছে জিঙ্কসমৃদ্ধ নতুন ধান ‘বঙ্গবন্ধু-১০০’

বীজ শোধন: প্রতি ১০ কেজি বীজে ২৫ গ্রাম ভিটাভ্যাক্স-২০০ বা ব্যাভিস্টিন ব্যবহার করা যেতে পারে। বীজ শোধনের জন্য মাত্রানুযায়ী ছত্রাকনাশক মিশিয়ে একটি বদ্ধ পাত্রে ৪৮ ঘন্টা রাখা আবশ্যক।

সার ও প্রয়োগ পদ্ধতি: সার প্রয়োগ-হেক্টর প্রতি ১৬০ কেজি ইউরিয়া, ৪৫ কেজি টিএসপি, ৫০ কেজি এমওপি এবং ৫০ কেজি জিপসাম।

প্রয়োগের নিয়ম: রোপার জন্য জমি তৈরীর শেষ চাষের আগে সম্পূর্ণ টিএসপি এবং এমওপি জমিতে সমভাবে ছিটিয়ে চাষের মাধ্যমে মাটির সাথে ভালভাবে  মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সারের অর্ধেক পরিমাণ চারা রোপনের ৭-৮ দিন পর,  এবং বাকি অর্ধেক ৩০-৩৫ দিন পর জমির উর্বরতার উপর নির্ভর করে প্রয়োগ করতে হবে।

পড়তে পারেন: নতুন ধান ‘ফাতেমা’, ফলন বিঘায় ৫০ মণ

ইউরিয়া সার প্রয়োগের ২/১ দিন আগে জমির  অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে এবং প্রয়োজন হলে আগাছা দমন করতে হবে। জমির উর্বরতা ও ফসলের অবস্থার উপর নির্ভর করে ইউরিয়া সার প্রয়োগ মাত্রার তারতম্য করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে টিএসপি ও দসত্মা সার একই সাথে প্রয়োগ করা যাবেনা।

তাই এক্ষেত্রে একচাষ পূর্বে টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে এবং শেষ চাষের সময় ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার ছিটিয়ে প্রয়োগ করা অবশ্যক।

সেচ ও নিষ্কাশন: জমি তৈরীর সময় ২/৩ বার স্বাদু পানি দিয়ে লবণাক্ত পানি বের করে দিলে জমির লবণাক্ততা অনেকটা কমে যায়। তাছাড়া কুশি, ফুল আসা ও পরিপক্কতার সময় লবণের মাত্রা ১০ ডিএস/মিটারের বেশী হলে স্বাদু পানি দিয়ে লবণাক্ততা কমিয়ে আনতে হবে। ধান পাকার ১০-১২ দিন আগে জমির পানি শুকিয়ে ফেলা ভাল।

পড়তে পারেন: নতুন ধান দুলালী সুন্দরী চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

আগাছা দমন ও মালচিং: চারা রোপনের পর আগাছা দেখা দিলে নিড়ানী বা হাতের সাহায্যে আগাছা পরিষ্কার এবং মাটি নরম করে মালচিং করতে হবে।

বালাই ব্যবস্থাপনা: এ জাতটিতে পাতা পোড়া ও খোল পঁচা ইত্যাদি রোগ সহণশীল। এছাড়াও জাতটির বাদামী গাছ ফড়িং প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য জাতের তুলনায় বেশি।

হেক্টর প্র্তি ফলন: আউশ মৌসুমে গড় ফলন ৩.৮৪ টন/হে. ও সর্বোচ্চ ফলন ৫.০ টন/হে. ও আমন মৌসুমে গড় ফলন ৫.১৬ টন/হে. ও সর্বোচ্চ ফলন ৫.৫টন/হেক্টর।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ