দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার রসিংপুর ইউনিয়নের জোহান এগ্রো ফার্মের মালিক জাহিদুল ইসলাম তুহিন। বিপাকে পড়েছেন গরুর খাবার নিয়ে। শুধু তুহিন নয়, শত শত খামারির একই অবস্থা। বন্যার প্রভাব, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও বৃষ্টিতে এবার ধানের খড় সংরক্ষণ করে রাখতে পারেননি দোয়ারাবাজারের কৃষকেরা। ফলে বন্যা ফুরোলেও তার প্রভাব কাটেনি।

নিজেরা ধান চাষ করে যেটুকু খড় পাই, তা দিয়ে কয়েক মাসের গরুর খাদ্যের জোগান হয়। তারপর কৃষকদের কাছ থেকে খড় কিনে সংরক্ষণ করি। কিন্তু এবার কৃষকদের খড় মাঠ থেকে বন্যায় নিয়ে গেছে, অনেকে ক্ষেতের ধানও ঘরে তুলতে পারেননি। এবারে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ক্ষেতেই খড় ফেলে রাখা হয়েছে। খড় সংকটের প্রভাব সামনের কয়েক দিন থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।

এতে মাঠের মধ্যেই পচে নষ্ট হওয়াসহ বন্যায় ভেসে গেছে গবাদি পশুর প্রধান খাদ্য খড়। এ কারণে আমন ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত আগামী কয়েক মাসে গোখাদ্যের চরম সংকটে থাকতে হবে বলে মনে করছেন খামারিরা।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের অন্যান্য নিউজ পড়তে পারেন:

 বড় নয়, মাঝারি দেশাল গরুর দিকে যে কারণে ঝুঁকছে খামারিরা

আলোহীন চোখ নিয়ে গরুর খামারে লাখোপতি ফাহিম

গরুর নতুন খামারের জন্য বকনা ও গাভীর প্রাপ্তিস্থান-মূল্য

কৃষকরা জানান, ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যার কবল থেকে ধান ও খড়ের চেয়ে পরিবার-পরিজনের জীবন বাঁচানো দায় হয়ে পড়েছিল। তাই খড়ের দিকে নজর দেয়া সম্ভব হয়নি। প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, কৃষকরা খড় সংরক্ষণ না করায় আগামীতে গোখাদ্যের সংকট দেখা দিতে পারে।

জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক ছোট-বড় গরুর খামার রয়েছে। এছাড়া প্রায় প্রত্যেক কৃষকই বাড়িতে গরু পালন করেন। বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মৌসুমি খামারিসহ ব্যবসায়ীরা গরু পালন করেন। সরেজমিনে গত কয়েক দিনে উপজেলার বাংলাবাজার, পান্ডারগাঁও, লক্ষ্মীপুর, বোগলাবাজার, নরসিংপুরসহ বেশ কয়কটি এলাকায় খড় সংকটের চিত্র লক্ষ করা গেছে।

উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা কৃষক ও গরু পালনকারী নুর মোহাম্মদ এবং মো. কিবরিয়া জানান, ধান কাটার মৌসুম শুরুর পর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। বৃষ্টির পর ভয়াবহ বন্যায় মানুষের জীবন বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। এতে ধান সংরক্ষণ করাই সম্ভব হয়নি, তাই খড়ের প্রতি তাদের নজর নেই।

তারা বলেন, কৃষকরা ধান ক্ষেতেই খড় শুকাত। কিন্তু ক্ষেতে পানি থাকায় সেখানে খড় শুকানো তো পরের কথা, এ বছর ধান ঘরে তোলার মতো পরিস্থিতি ছিল না। এছাড়া খড় শুকাতে প্রখর রোদের প্রয়োজন। ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই খড়গুলো রোদে শুকাতে দিলে দু-এক দিনের মধ্যে শুকিয়ে যেত। পরে সেগুলো গোখাদ্য হিসেবে সংরক্ষণ করা হতো। যাদের গরু আছে, তারা সেগুলো নিজেদের গরুকে খাওয়াতেন; আর যাদের গরু নেই, তারা সেগুলো বিক্রি করতে পারতেন।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের অন্যান্য নিউজ পড়তে পারেন:

রাজশাহীতে ভয়ংকর এলএসডি আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বাড়ছে

গরুর প্রাণঘাতী ব্যাবেসিওসিস রোগ সম্পর্কে জানেন কি?

গরুর তড়কা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

একই এলাকার গরু ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ জানান, ব্যাবসা করার জন্য গরু এনে এক থেকে দেড় মাস পালনের পর বাজারে বিক্রি করেন তিনি। গরু পালনের জন্য স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকেই খড় কেনেন। কিন্তু এবার খড় সংরক্ষণ করতে না পেরে ধানক্ষেতেই খড় পচে নষ্ট হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, সুনামগঞ্জ জেলায় এ বছর ব্যপক আকারে খড়ের সংকট দেখা দিয়েছে। আর এখন হাইব্রিড জাতের ধান চাষ হওয়ায় ধান গাছগুলো আকারে ছোট হচ্ছে। এতে খড়ের পরিমাণও হচ্ছে কম। এ কারণে অন্যান্য জেলা থেকে খামারিদের খড় সংগ্রহ করে গোখাদ্যের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে।

বন্যার পর থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আমরা সরকারের কাছে কয়েক দফা ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সহযোগিতায় ৯০০ মেট্রিক টন খাবার চেয়েছিলাম, সেখানে সব উপজেলা পরিষদসহ সম্পূর্ণ প্রজেক্ট মিলিয়ে আমাদের দেয়া হয়েছে ১১১ মেট্রিক টন খাবার।

বর্তমানে জাতি সংঘের একটি অঙ্গসংগঠন ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশনের অর্থায়নে সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলা থেকে চারটি উপজেলার খামারিদের খাবার দেয়া হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে খামারিদের খড় সংরক্ষণের জন্য উপদেশ দেয়া হয়। কীভাবে খড় সংরক্ষণ করতে হবে, সে প্রশিক্ষণও আমরা দিয়ে থাকি।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ