নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দিনাজপুরে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গম আমদানি অব্যাহত থাকলেও সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে কেজিতে ৮ টাকা। এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি গম সাড়ে ৩৬ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে সাড়ে ৪৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

এরআগে রাশিয়া থেকে প্রাথমিকভাবে তিন লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ। এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)।

গত বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সান্ডার ভিকেনতেভিচ মান্টিটস্কির সাক্ষাৎকালে দুই দেশ এ বিষয়ে সম্মত হয়।

বর্তমানে ভারতে দাম বাড়ায় দেশের বাজারে গমের দাম বাড়ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। অপরদিকে গম বিক্রি না করে গুদামে মজুদ রেখে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে দাবি গম ক্রেতা ও সরবরাহকারীদের।

পড়তে পারেন: গম কিনতে ৫৩০ কোটি ইউয়ান ঋণ দিচ্ছে চীনা কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক

হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, কয়েক দিন আগে বন্দর দিয়ে ২০ থেকে ২৫ ট্রাক গম আমদানি হলেও বর্তমানে তা কমে ৮ থেকে ১০ ট্রাকে নেমেছে। গত মঙ্গলবার বন্দর দিয়ে মাত্র ১ ট্রাক গম আমদানি হয়েছে। বন্দর দিয়ে গত জুলাই মাসে ২০ কর্মদিবসে ৪২৯টি ট্রাকে ১৭ হাজার ১৮২ টন গম আমদানি হয়েছিল।

সচিবালয়ে সাক্ষাৎকালে তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও গম আমদানি-রপ্তানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।

সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। এ সম্পর্ক বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুনর্গঠনে রাশিয়ার সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি।

পড়তে পারেন: ১০ বছরের সর্বনিম্নে নামতে পারে গমের বৈশ্বিক ব্যবহার

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে রাশিয়া ভূমিকা রাখতে আগ্রহী। তিনি বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় গম রপ্তানির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেনসহ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

দেশীয় বাজারে গমের চাহিদা বেশি। মানুষের পাশাপাশি গোখাদ্য, মাছ ও হাঁস-মুরগির খাবার হিসেবেও ব্যবহার বাড়ছে গমের। ফলে বছরের ব্যবধানে গমের আমদানি বেড়েছে ৫ গুণ।

২০২১-২২ অর্থবছর ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গম আমদানি আগের বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেড়েছে। ব্যবসায়ী ও মিলাররা বলছেন, দেশীয় বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় আমদানিতে এ উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে।

ভোমরা শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব শাখা থেকে জানা গিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-জুন পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে গম আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭০২ টন, যার মূল্য ১ হাজার ৫৭২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আগের অর্থবছর এ বন্দর দিয়ে গম আমদানি হয় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৭৩ টন, যার মূল্য ৪৮৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে আমদানি বেড়েছে পাঁচ গুণ।

পড়তে পারেন: ভারত থেকে ঢুকছে গম, কমেছে দাম

ভোমরা স্থলবন্দরের গম আমদানিকারক হারু ঘোষ জানান, দেশীয় বাজারে গমের চাহিদা বেশি। মানুষের পাশাপাশি গোখাদ্য, মাছ ও হাঁস-মুরগির খাবার হিসেবেও ব্যবহার বাড়ছে গমের। ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার কারণে পণ্যটির দাম বেড়েছে। গত বছরের এ সময় প্রতি কেজি গম ২৬-২৭ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এ বছর তা বেড়ে ৩৬-৩৭ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত কাস্টমসের বিভাগীয় সহকারী কমিশনার আমীর মামুন জানন, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে গম আমদানি বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু পণ্যটি আমদানি করলে সরকারের কোনো রাজস্ব আসে না। কৃষিপণ্য হিসেবে এটি শুল্কমুক্ত।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ