ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: গম বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য ফসল। কিন্তু গম চাষের অন্যতম প্রতিবন্ধক ছত্রাক। ছত্রাকজনিত কারণে গমের ক্ষতি হয়ে থাকে। এ পর্যন্ত গমের ১৫টি রোগ সনাক্ত করা হয়েছে। গমের ব্লাস্ট রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার:

যে জমিতে সেচের সুবিধা নেই অথচ মাটিতে যথেষ্ট পরিমানে রস থাকে সে জমিতে বিনাসেচেও সফলভাবে গম চাষ করা যায়। গমের ব্লাস্ট রোগ (Wheat blast) ২০১৬ সনে বাংলাদেশে মারাত্মক আকারে প্রথম দেখা যায়।

রোগের কারণ : ম্যাগনেপরথে অরাইজি প্যাথোটাইপ ট্রিটিকাম (Magnaporthe oryzae pathotype triticum) নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।

রোগের বিস্তার: আক্রান্ত বীজের মাধ্যমে গমের ব্লাস্ট রোগ ছড়ায়। গমের শীষ বের হওয়া থেকে ফুল ফোটার সময়ে তুলনামূলক গরম ও স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া থাকলে এ রোগের আক্রমন ঘটতে পারে। বৃষ্টির কারণে গমের শীষ ১২-২৪ ঘন্টা ভেজা থাকলে ও তাপমাত্রা ১৮ সেঃ অথবা এর অধিক হলে এ রোগের সংক্রমণ হয় এবং রোগের জীবাণু দ্রুত বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

আরোও পড়ুন: গমের পাতার দাগ রোগ দমনে করণীয়

গমের গোড়া পঁচা রোগ ও তার প্রতিকার

গমের ব্লাস্ট রোগের লক্ষণ:

১. প্রধানত: গমের শীষে ছত্রাকের আক্রমণ হয়।
২. পাতায় চোখের ন্যায় ধূসর বর্ণের ছোট ছোট দাগ পড়ে।
৩. শীষের আক্রান্ত স্থানে কালো দাগ পড়ে।
৪. আক্রান্ত স্থানের উপরের অংশ সাদা হয়ে যায়।
৫. শীষের গোড়ায় আক্রমণ হলে পুরো শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যায়।
৬. আক্রান্ত শীষের দানা অপুষ্ট হয় ও কুঁচকে যায় এবং দানা ধুসর বর্ণের হয়।
৭. পাতায়ও এ রোগের আক্রমন হতে পারে এবং এক্ষেত্রে পাতায় চোখের মত ধূসর বর্ণের ছোট ছোট দাগ পড়ে।

গমের ব্লাস্ট রোগের প্রতিকার:

১. ব্লাস্ট মুক্ত ক্ষেত থেকে গম বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
২. মাড়াইয়ের পর আক্রান্ত গম ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
৩. অপেক্ষাকৃত কম সংবেদনশীল জাত যেমনঃ বারি গম ২৮ ও বারি গম ৩০ জাতের চাষ করতে হবে।
৪. উপযুক্ত সময়ে (অগ্রহায়ণের ০১ হতে ১৫ তারিখ) বীজ বপন করতে হবে যাতে শীষ বের হওয়ার সময়ে বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা পরিহার করা যায়।
৫. বপনের পূর্বে প্রতি কেজি বীজের সাথে ৩ গ্রাম প্রোভ্যাক্স-২০০ ডব্লিউপি অথবা ৩ মিলি হারে ভিটাফ্লো-২০০ এফএফ ছত্রাকনাশক মিশিয়ে বীজ শোধন করলে গমের ব্লাস্ট রোগের পাশাপাশি অন্যান্য বীজবাহিত রোগও দমন হবে এবং ফলন বৃদ্ধি পাবে।
৬. গমের ক্ষেত ও আইল আগাছামুক্ত রাখুন।
৭. নাটিভো ৭৫ ডব্লিউ জি/নভিটা ৭৫ ডব্লিউজি প্রতি লিটার পানিতে ০.৬ গ্রাম হারে মিশিয়ে শীষ বের হওয়ার সময় একবার এবং তার ১২-১৫ দিন পর আরেকবার স্প্রে করলে গমের পাতা ঝলসানো রোগ, বীজের কালো দাগ রোগ এবং মরিচা রোগ ইত্যাদিও দমন হবে।

গমের ব্লাস্ট রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার লিখেছেন উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব), মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই), শিবগঞ্জ, বগুড়া।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ