অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: গম রফতানিতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অনেক দেশ।এ তালিকায় বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শস্য রফতানিকারক দেশ রাশিয়া ও আর্জেন্টিনা রয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে কোটা বেঁধে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মস্কো। এ পরিস্থিতিতে আর্জেন্টিনা কোন পথে যাবে এমন আলোচনা তুঙ্গে।

ওয়ার্ল্ডগ্রেইনডটকম এ বিষয়ে খবর প্রকাশ করেছে। রাশিয়ার পর আর্জেন্টিনা গম রফতানিতে লাগাম টানলে আন্তর্জাতিক বাজারে কৃষিপণ্যটির রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে পারে।

রাশিয়া বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ গম উৎপাদনকারী দেশ। কৃষিপণ্যটির রফতানিকারকদের তালিকায় দেশটি শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। করোনা মহামারীর মধ্যে দেশটিতে গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এর পরও অভ্যন্তরীণ বাজারে গম ও গম থেকে তৈরি খাবারের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়তির পথে রয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানায় ব্যর্থতার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের তীব্র সমালোচনা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

এরপর নড়েচড়ে বসে রাশিয়া সরকার। অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখতে গম রফতানি কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। এর অংশ হিসেবে রাশিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন সময়ে রাশিয়া থেকে গম রফতানিতে টনপ্রতি ৩০ ডলার ৩২ সেন্ট রফতানি শুল্ক দিতে হবে। একই সময়ে রুশ রফতানিকারকরা সর্বোচ্চ ১ কোটি ৭৫ লাখ টন গম রফতানি করতে পারবেন।

এবার রাশিয়ার মতো আর্জেন্টিনাও একই পথে হাঁটতে চলেছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। যদিও আর্জেন্টিনা সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। এ বিষয়ে দেশটির কৃষিমন্ত্রী লুইস বাস্তেরা বলেন, গম রফতানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে নয় অনেকেই। তবে করোনাকালে অভ্যন্তরীণ মজুদ বাড়ানো ও সরবরাহ চেইন নির্বিঘ্ন রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এজন্য যা করা প্রয়োজন, আর্জেন্টিনা সরকার সেটাই করবে।

মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর আর্জেন্টিনার গম রফতানিতে ফের মন্দা ভাব ফিরে এসেছে। টানা দুই বছরের মন্দা ভাব কাটিয়ে ২০১৯ সালে আর্জেন্টিনা থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৩৫ লাখ টন গম রফতানি হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি।

আরোও পড়ুন: সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে গম

আগামী সপ্তাহে সরকার ও শস্য খাতের সঙ্গে সম্পৃক্তদের একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ বৈঠকে গমের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। ফলপ্রসূ আলোচনার মধ্য দিয়ে গমের রফতানি শুল্ক বাড়ানো কিংবা রফতানি সীমা বেঁধে দেয়ার মতো তুলনামূলক কঠোর সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিতে পারে আর্জেন্টিনা সরকার। এমিনটিই জানিয়েছেন আর্জেন্টিনার কৃষিপণ্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান সিইসি এক্সপোর্ট কোম্পানিজ চেম্বারের প্রধান গুস্তাভি ইডিগোরাস।

তিনি আরো বলেন, ভুট্টা থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে গমের বাজারে হস্তক্ষেপে আর্জেন্টিনা সরকারের আগ্রহ নেই। তবে মহামারীকালে অভ্যন্তরীণ বাজারে ভারসাম্য রক্ষায় সব ধরনের বিকল্প আলোচনার টেবিলে রয়েছে।

গত ডিসেম্বরের শেষ ভাগে ভুট্টা রফতানিতে দুই মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল আর্জেন্টিনা সরকার। অভ্যন্তরীণ বাজারে বাড়তি চাহিদা ও মূল্যবৃদ্ধির জের ধরে এমন সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়। তবে ১৫ দিন না যেতেই এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে আর্জেন্টিনা। সাময়িক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও ভুট্টা রফতানির পরিমাণ ৩০ হাজার টনে সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

২০২০ সালে আর্জেন্টিনা থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে কৃষিপণ্যটির রফতানি আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ কমে ১ কোটি ২৫ লাখ টনে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে ইউএসডিএ। সেই হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে আর্জেন্টিনা থেকে কৃষিপণ্যটির রফতানি কমেছে ১০ লাখ টন। এর আগে ২০১৩ সালে আর্জেন্টিনার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ১ কোটি ৩৮ লাখ ২৫ হাজার টন গম রফতানি হয়েছিল।

গম রফতানিতে চ্যালেঞ্জের মুখে অনেক দেশ, আর্জেন্টিনা কোন পথে? শিরোনামে সংবাদের তথ্য বণিক বার্তা থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ