মালিকুজ্জামান কাকা, যশোর প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশের প্রথম এলাচ চাষী যশোর বেনাপোলের শাহজাহান আলী। গত বছরের সুপার সাইক্লোন আম্পান ঝড়ে এলাচ চাষের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলেও বর্তমানে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। প্রথমে দিশেহারা হয়ে পড়লেও নতুন দিনে পদার্পন করেছেন বাংলাদেশের প্রথম এলাচ চাষী বেনাপোলের শাহজাহান আলী

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সঠিক দিক নির্দেশনা না পাওয়ায় একাধিকবার এলাচ চাষে ক্ষতির শিকার হয়েছেন দেশের প্রথম এলাচ চাষী বেনাপোলের শাহজাহান আলী কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি।

যে পরিমাণ ফল ধরেছিল গাছে তাতে কমপক্ষে কয়েক লাখ টাকার এলাচ বিক্রি হতো। কিন্তু আম্পান ঝড়ে গাছ মাটির সাথে মিশে গেছে। এতে শাহাজান আলীর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়। নতুন করে আবার চারা তৈরি করে তা রোপণ করে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।

কৃষি বিভাগ ও মসলা ইনস্টিটিউশনের কর্মকর্তারা একাধিকবার এলাচের ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। তবে তাদের কাছ থেকে এলাচ চাষের যুতসই কোনো পরামর্শ পাইনি শাহাজান। ৯ বছর আগে ২০১২ সালে বেনাপোল পৌর সভার সামনে পাঠবাড়ি এলাকায় এক বিঘা জমিতে দুই জাতের এলাচ চাষ শুরু করেন সৌখিন কৃষক শাহজাহান আলী।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

এলাচ ২৫০০, জিরার কেজিতে বাড়লো ২০ টাকা

ভারতীয় এলাচের কেজিতে কমলো ২০০ টাকা

অপ্রধান মসলা ধনিয়া চাষে ধনী ময়েজ

ওয়েব সাইটের মাধ্যমে এলাচ চাষের ফর্মূলা জানতে পারেন। সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয় এ চাষের জন্য। বহু কষ্টে বিদেশ থেকে এলাচ গাছের মূল সংগ্রহ করে আনেন ৭০টি। এলাচ গাছ বীজ থেকে নয় মূল থেকেই জন্ম নেয়। যে কোনো ছায়াযুক্ত স্থানে এই এলাচ চাষ করা যায়।

বাংলাদেশের আবহাওয়া এলাচ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। বেলে দোআঁশ জমিতে মূল রোপন করেন। এখানে মাটির সমস্যার কারণে ২০১৬ সালে এক একর জমি লীজ নিয়ে বেনাপোলের নারায়নপুর গ্রামে নতুন করে সবুজ এলাচ চাষ শুরু করেন। সেখানে ৬০০ এলাচের ঝাড় ছিল। প্রতিটি ঝাড়ে ১০০ থেকে ১১০টি গাছ হয়েছিল। পর্যাপ্ত ফলন আসার সময় হানা দেয় আম্পান ঝড়। তাতে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় শাহজাহানের।

করোনা ভাইরাসের মাঝে ২০২০ সালের ২১ মে আম্পান ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি তার সাহায্য সহযোগিতায়। তারপরও দমেনি তিনি। নতুন করে মাটি সংগ্রহ করে এখন চারা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চারা নেওয়ার জন্য বুকিং দিচ্ছেন অনেকে।

এলাচ চাষী শাহাজান আলী জানান, বাণিজ্যিক এলাচ চাষে আগ্রহীরা তার কাছ থেকে চারা নিয়ে পার্বতী অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় চাষাবাদ করছে। ঝড়ে গাছ নস্ট হওয়ার পর প্রথমে বীজতলা তৈরি করেন। সেখানে প্রায় ২৫০০০ চারা হয়। চারা বড় হলে কিছু চারা নিজে রোপন করেন। বাকীটা আগ্রহী চাষিদের কাছে বিক্রি করেন তিনি।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

৩০ প্রজাতির ফল চাষে তাক লাগিয়েছেন সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা

বিশ্বের সবচেয়ে দামী মসলা “জাফরান” চাষ করবেন যেভাবে

উত্তরাঞ্চলে অর্থকরী ফসল কফি চাষের সম্ভাবনা

প্রথমে অন্য ফসলের মাঠে এলাচ চাষ করেছিলেন। কিন্তু তাতে ফলন ভালো হয়নি। পরে একটি মেহগনী বাগান (গাছের ছায়াযুক্ত স্থান) লিজ নিয়ে এলাচ চাষ করেন। এতে পূর্বের চেয়ে ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্থু আম্পান ঝড়ে প্রায় সব গাছ নস্ট হয়ে যায়। যে ২/৪টি গাছ আছে তাতে ফল ধরেনি। তারপরও চেস্টা চালান তিনি। ২০১৬ সালে যে গাছ রোপন করা হয়েছিল সেটাতে ২০১৯ সালে কিছু ফল এসেছিল। যেটা বিক্রির পর্যায়ে ছিল না। প্রথম ফল সে কারণে কিছু আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পরীক্ষার জন্য দেওয়া ও রাখা হয়।

তিনি আরো বলেন, যে কেউ বাড়ির আঙ্গিনা অথবা ফলদ বৃক্ষের বাগানে এ জাতের সবুজ সুঘ্রান এলাচ চাষ করতে পারবে। সরকার যদি বাণিজ্যিকভাবে এলাচ চাষে আগ্রহীদের আর্থিক সহযোগিতা করে তাহলে খুব অল্প সময়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে।

এলাচ বাগানের শ্রমিক ইউনুছ আলী জানায়, গ্রামে এলাচ চাষ হওয়ায় অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসত এ বাগান দেখতে। আম্পান ঝড়ে বাগান ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ২/৪টি গাছ আছে। এখন লোকজন তেমন আসে না। নতুন করে গাছ রোপনের জন্য আমরা চারা তৈরি করছি। চারাগুলো বড় হলে আবার গাছ লাগানো হয়।

বাণিজ্যিকভাবে এলাচ চাষ বাংলাদেশে প্রথম শুরু করলেও আম্পানে সব শেষ। এখন চারা করা হচ্ছে। গাছ রোপন করলে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এলাচ চাষী শাহজাহান। আরো গবেষনা করে এই জাতীয় মসলার চাষ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশে আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে। সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও তাকে দেওয়া হয়েছে। নিজের প্রচেস্টায় এগিয়ে যেতে চায় শাহজাহান জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

স্থানীয়রা জানান, আম্পান ঝড়ে অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে এলাচ চাষী শাহাজান আলী’র। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রাইভেট মাইক্রতে করে মানুষ দেখতে আসে এলাচ বাগান। অনেক ভালো ফলন হয় কিন্তু সব শেষ করে দেয় আম্পান ঝড়। আবারও নতুন করে চারা ও বাগান তৈরি করে রোপণ করে তা পরিচর্যা করে বড় করে এখন ফলনের অপেক্ষায় শাহাজান আলী। এবার তার সফলতার নতুন গল্প যা বাস্তবতায় মোড়া।

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, শাহজাহান দেশের প্রথম এলাচ চাষি। আম্পান ঝড়ের আগে পরে শাহজানের এলাচ বাগান আমি নিজে ও উর্ধতন কর্মকর্তারা কয়েকবার পরিদর্শন করা হয়েছে। বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ অনেক কর্মকর্তা এসেছেন তার বাগানে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ