আন্তর্জাতিক কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সম্প্রতি মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিস কর্তৃক প্রকাশিত গ্লোবাল এগ্রিকালচারাল ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে আর্জেন্টিনায় গম উৎপাদন ও রফতানি কমে যেতে পারে।

ইউএসডিএর প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, শস্যটির উৎপাদন ১৫ শতাংশ কমে ১ কোটি ৮৬ লাখ টনে নামতে পারে। মূলত কম জমিতে আবাদ ও ফলনের কারণে উৎপাদন কমবে। এর ফলে প্রভাব পড়বে রফতানিতেও।

পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে আর্জেন্টিনার গম রফতানি কিছুটা কমে ১ কোটি ২৬ লাখ টনে নামতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সারের তীব্র সংকট চলছে। এছাড়া অন্যান্য উৎপাদন উপকরণের দামও আকাশচুম্বী। এ কারণে গম আবাদ ব্যাপক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। গম আবাদি জমির পরিমাণ ৬ শতাংশ কমে ৬২ লাখ হেক্টরে নামতে পারে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন আবাদি জমির পরিমাণ ২৫ শতাংশ কমবে।

পড়তে পারেন: এক মাসে ৭ লাখ ৬৩ হাজার টন গম-ভুট্টা রফতানি ইউক্রেনের

প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি ও আগামী মৌসুমে আর্জেন্টিনায় গমের মজুদ প্রায় ২০ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে। মজুদ পরিস্থিতি দেশটির সরকার খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছে। উদ্দেশ্য মিলিং ইন্ডাস্ট্রিতে যথাযথ গম সরবরাহ নিশ্চিত করা।

এদিকে, বাংলাদেশে যে পরিমাণ গম উৎপাদন হয় তা দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তাই বাড়তি গম বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে। গত ৯ মাসে ভারত থেকে ১৩’শ কোটি টাকার গম আমদানি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।

কয়েক মাসে ব্যাপক হারে গম আমদানি বেড়েছে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে। আমদানি বাড়ার কারণে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি বেড়েছে পাঁচ গুণ।

পড়তে পারেন: এক দশকের সর্বোচ্চ দামে ভুট্টা, বেড়েছে গমের দাম

ভোমরা শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব শাখা থেকে জানা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে, অর্থাৎ জুলাই-মার্চ পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে গম আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৭১ হাজার ১৫০ টন। আমদানীকৃত এসব গমের মূল্য ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ পর্যন্ত গম আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৮৮ টন, যার মূল্য ২৮৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত কাস্টমসের বিভাগীয় সহকারী কমিশনার আমীর মামুন জানান, কৃষিপণ্য হিসেবে গম আমদানি বেড়েছে ব্যাপক হারে। কিন্তু খাদ্যশস্যটি আমদানি করে সরকার কোনো রকম রাজস্ব আয় করতে পারে না।

পড়তে পারেন: কমতে পারে গমের রফতানি, দাম বাড়ার পূর্বাভাস

ভোমরা স্থলবন্দরে কৃষিজাত পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. শাহিন হোসেন জানান, প্রতিদিন গড়ে ৩০-৩৫ ট্রাক গম আমদানি করছে তার প্রতিষ্ঠানটি, যা গত অর্থবছরের এ সময়ের তুলনায় চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। গত বছর প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ ট্রাক গম আমদানি হয়েছিল। তিনি বলেন, দেশীয় বাজারে গমের চাহিদা বেশি থাকায় আমদানি বেড়েছে।

সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা বাজারের গম ভাঙানো মিল মুকন্দ ফ্লাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকন্দ কুমার মজুমদার জানান, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় চলতি বছর দেশে গমের চাহিদা ব্যাপক। তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে পরিমাণ গম উৎপাদন হয়, তাতে চাহিদা মেটে না। ফলে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে গম আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়।

তার মিলে সপ্তাহে গমের চাহিদা রয়েছে ১৫-২০ হাজার কেজি। তবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গমে চাহিদা মেটে না। ভারত থেকে আমদানীকৃত গম সংগ্রহ করে মিলের চাহিদা মেটান। তিনি বলেন, বর্তমানে গমের পাইকারি দর কেজিপ্রতি ৩১-৩২ টাকা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ