শীর্ষ চাল আমদানিকারক হতে

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: উনিশ শতকের শুরু থেকে থাইল্যান্ড বিশ্বের বৃহত্তম চাল রফতানিকারক দেশ ছিল। কিন্তু ২০১৫ দেশটিকে হটিয়ে চাল রফতানিতে শীর্ষস্থান দখল করে নেয় ভারত। এরপর ভিয়েতনাম দ্বিতীয় স্থানে আসলে তৃতীয় অবস্থানে চলে যায় দেশটি। বর্তমানে ফের চাল রফতানিতে বৈশ্বিক বাজার দখলের চেষ্টা থাইল্যান্ডের।

থাইল্যান্ডের চাই নাট রাইস রিসার্চ সেন্টারের গবেষক ও ধান বিশেষজ্ঞ হিসেবে ১৬ বছরের ক্যারিয়ার শুয়ানচম দেরুসামির। ধানের চূড়ান্ত একটি জাত তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত জাতটি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন। উদ্ভাবিত ধান থেকে সরু চাল হবে বলে জানা গেছে।

দেরুসামির উদ্ভাবিত এ চালটি সরু ও লম্বা। এ চালকে আরডি৭৯ বা কোর খোর ৭৯ বলা হচ্ছে। আরডি মানে দেশটির রাইস ডিপার্টমেন্টকে বোঝানো হয়। আর সরকারি এ সংস্থাতেই কাজ করেন দেরুসামি। এক দশক আগে থেকে দেরুসামি এ জাতের স্ট্রেন নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। নতুন ধানের স্টেন তৈরি, সরকারের অনুমোদন ও কৃষক পর্যায়ে চাষ শুরু করতে আনুমানিক ১০ বছর সময় লাগে। এখন এ ধানটি কৃষকদের চাষাবাদ বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে।

শুয়ানচম দেরুসামির উদ্ভাবন দেশটির চাল শিল্পের সম্ভাব্য ভবিষ্যত বলে ধরা হয়েছে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রয়োজনীয় হিসাবে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ চালের ওপর নির্ভরশীল। থাইল্যান্ডের ক্ষেত্রে চাল কেবল খাবারের জন্য নয়, এটা দেশটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফসলও। এক-চতুর্থাংশ থাই পরিবার এ ফসলের আয়ের ওপর নির্ভর করে। দেশটির প্রায় অর্ধেক কৃষিজমি এ ধান উৎপাদনে নিবেদিত। এজন্য দেশটি এশিয়ার রাইস বোল বা এশিয়ার চালের ঝুড়ি উপাধি অর্জন করেছে।

সরু জাতের অভাব দেশটির চাল রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। খরার পর ২০ বছরের মধ্যে এ বছর দেশটি থেকে চালান সর্বনিম্ন হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০২০ সালে থাই চালের রফতানি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ কমে যাবে।

আরডি৭৯ হলো তাদের কাজ করা ১২টি জাতের মধ্যে একটি। সানিত জিতনুপং নামের একজন কৃষক আরডি৭৯ জাতের ধান চাষ শুরু করেছেন। এক দশকেরও বেশি সময় তিনি তার চার একর জমিতে মোটা জাতের ধান চাষ করে আসছেন। গত জুনে তিনি দেরুসামির স্ট্রেনের ধান চাষ শুরু করেন। তিনি বলেন, আমি শুনেছি বিশ্বজুড়ে প্রতিযোগিতা করতে আমাদের এ ধানের চাষ আরো বেশি বাড়ানোর প্রয়োজন। নতুন কিছু শুরু করা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আমার হারানোর কিছু নেই। যদিও ফসল কাটার আগে ভালোই মনে হচ্ছে। আগে গড়ে পাঁচ টনের তুলনায় এবার প্রায় ১০ টন ধান পাব বলে আশা করছি।

থাই রাইস মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্রিয়াংসক তপানানন বলেন, এখনো প্রচুর কৃষক সরু ধানের চাষ শুরু করেননি। তবে তাদের এ ধান চাষে রাজি করাতে খুব বেশি সময় লাগবে না। দেশীয় বাজার এরই মধ্যে এ চালকে গ্রহণ করেছে এবং শিগগিরই কৃষকরা এ ধান চাষে মনোযোগী হবেন। কারণ ধানটির রফতানি বাজার আছে।

চালটিতে সুগন্দ নেই। তাই দেরুসামি তার উদ্ভাবিত চালের জাতটি ঠিক করার পরিকল্পনা করছেন। তিনি এ চালের সঙ্গে সুগন্ধ যুক্ত করার কাজ করছেন। তিনি বলেন, আমি যখন সরু ধানের জাত নিয়ে কাজ শুরু করি, তখন স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি যে এটা করতে পারব। এ চাল যদি দেশের রফতানি বৃদ্ধিতে অবদান রাখে, তাহলে আমি আরো গর্বিত হব। তবে এটা সরু জাতের থাই চালের শুরুমাত্র।

উল্লেখ্য, ১৯৮০-এর দশকের শুরু থেকে থাইল্যান্ড বিশ্বের বৃহত্তম চাল রফতানিকারক দেশ ছিল। বিভিন্ন জাতের জেসমিন ও সাদা চাল দিয়ে বৈশ্বিক বাজার দখল করে রেখেছে থাইল্যান্ড। বিশ্বজুড়ে মোট রফতানি হওয়া চালের এক-পঞ্চমাংশ রফতানি করা দেশটি ২০১৫ সালে সমস্যায় পড়ে। ভিয়েতনামের সরু ও প্লাম্পার জাতগুলো চীন থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত এশিয়ার বৃহত্তম চালের গ্রাহকদের কাছে পছন্দনীয় হয়ে উঠেছে।

চাল রফতানিতে বৈশ্বিক বাজার দখলের চেষ্টা থাইল্যান্ডের সংবাদের তথ্য বণিক বার্তা থেকে নেওয়া হয়েছে।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ