ধর্ম ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ৬১৮ থেকে ৯০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় তিনশ’ বছর টাং রাজবংশ চীন শাসন করে। তবে টাং সম্রাটদের তৈরি করা রাষ্ট্রতন্ত্র ও প্রশাসনিক সংস্কার ১৯০৫ সাল পর্যন্ত চীনে বিদ্যমান থাকে।

টাং শাসনামলে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আবিষ্কার-উদ্ভাবনের উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিলো তা রাজবংশের শাসনামল শেষ হওয়ার বহুকাল পর পর্যন্তও স্থায়ী হয়েছিল।

চীনে টাং শাসনামলে দেশের সর্বাঙ্গীন উন্নয়নশীলতার সঙ্গে সঙ্গে এ অঞ্চলে ইসলামের আগমন ঘটে ও বিস্তৃতি লাভ করে। টাংদের সঙ্গে আরব বণিকদের ব্যবসায়িক লেনদেন চীনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। এতে করে ওই অঞ্চলে উমাইয়া ও আব্বাসীয় খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়।

এর কয়েক শতাব্দী পরে চীনের সঙ্গে আরব বণিকদের ব্যবসায়িক সূত্র দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এরই মধ্যে চীনে ইসলামী অনুশাসনের অবসান ঘটে।

চীনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর সেখানকার মুসলমানরা ব্যাপকভাবে মিসরীয়, গ্রীক, পার্সিয়ান, মেসোপটেমিয় ও আসিরীয় ভাষা শেখা শুরু করে।

৭৫০ – ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পশ্চিমে রোমান সাম্রাজ্য, পারস্য সাম্রাজ্য ও ইংল্যান্ডের মধ্যে আব্বাসীয় খেলাফতকেই সবচেয়ে প্রভাবশালী সাম্রাজ্য হিসেবে মনে করা হয়।

তৎকালীন চীনা মুসলিম পণ্ডিতরা গ্রীক, সংস্কৃত ও পার্সিয়ানসহ বিভিন্ন ভাষায় লিখিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাবলী আরবি ভাষায় অনুবাদ করেন যা পাশ্চাত্যে পরবর্তী সভ্যতার উন্মেষ ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

চীনের বর্তমান গণনাপদ্ধতি সেখানকার মুসলমান কর্তৃক উদ্ভাবিত হয়, এবং ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। পরবর্তীতে রোমানরাও তাদের অনুসরণে নিজস্ব গণনাপদ্ধতি উদ্ভাবন করে যা‌ বর্তমানে রোমান সংখ্যা নামে সুপরিচিত।

গণিতশাস্ত্রের বীজগণিত ও এ্যালগরিদমও তৎকালীন চীনা মুসলমানরা উদ্ভাবন করেছিলেন।

পশ্চিমা বিশ্বে আধুনিক সভ্যতার বীজ বপন করা হয়েছিলো মুসলিম মনীষীদের হাতে – একথা বললে মোটেও অত্যুক্তি হবে না। সাম্প্রতিক বিশ্বে ঘটে যাওয়া যে শিল্পবিপ্লব তাও ঘটেছে মুসলিম আরব বণিকদের হাত ধরে।

বর্তমানে চীন অর্থনৈতিকভাবে সারা বিশ্ব শাসন করছে, এবং সমগ্র আমেরিকায় যতজন শিল্পশ্রমিক রয়েছে তার আটগুণ বেশি শিল্পশ্রমিক রয়েছে চীনে।

সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন চীন সামরিক এবং কুটনৈতিকভাবেও গোটা বিশ্ব শাসন করবে। এই সব সফলতার জন্য চীন ঐতিহাসিকভাবে মুসলমানদের কাছে চিরঋণী হয়ে থাকবে।

চীনের টাং রাজবংশ ও ইসলামের সোনালী যুগ শিরোনামে ফোরেক্স স্ট্রিট থেকে লেখাটি অনুবাদ করেছেন ফরহাদ খান নাঈম। লেখাটি জাতীয় দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত হয়েছে।