ডেস্ক প্রতিবেদন, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ঝিঙ্গা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় গ্রীষ্মকালীন সবজি। আমাদের দেশে প্রায় সব এলাকাতেই ঝিঙ্গা চাষ করা হয়। সঠিক পদ্ধতিতে ঝিঙ্গা চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

চলুন জেনে নেওয়া যাক ঝিঙ্গা চাষের সঠিক পদ্ধতি:

জলবায়ু ও মাটি: দীর্ঘ সময়ব্যাপী উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া এবং প্রচুর সূর্যালোক থাকে এমন এলাকা ঝিঙ্গা চাষের জন্য উত্তম। সুনিষ্কাশিত উচ্চ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁআশ মাটি ঝিঙ্গার সফল চাষের জন্য উত্তম।

জাত: আমাদের দেশে বর্তমানে দুই ধরণের ঝিঙ্গা চাষ করা হয়। ১। দেশি ঝিঙা, ২। হাইব্রিড জাত। দেশী জাতের ঝিঙ্গা আকারে ছোট, দ্রুত আশ হয়ে যায়, স্বাদে কিছুটা তিক্ত এবং ফলন কম। অপর দিকে হাইব্রিড জাতের ঝিঙ্গা আকারে বড় লম্বা, সুস্বাদু এবং বীজ নরম ও রসালো।

আরও পড়ুন: যে পদ্ধতিতে কলমি চাষে অধিক লাভবান হবেন 

তাই বর্তমানে আমাদের দেশের চাষিরা হাইব্রিড জাতের ঝিঙ্গা চাষ করার প্রতি বেশি আগ্রহী। বাজারে এখন হাইব্রিড জাতের অনেক ঝিঙ্গা পাওয়া যায়, তাঁর মধ্যে রয়েছে- গ্রিন স্টার, বসন্তী, সামিহা, ডায়েট, অনামিকা, মাওতি, লুফা ৩৫, রিজ লং, দোদুল, হিরো, হারকুলাস, টেস্টি, সাথী, ঈসা খাঁ, মূসা খাঁ, বলেশ্বর ইত্যাদি অন্যতম।

বীজ বপনের সময়: ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
বীজ হার : হেক্টর প্রতি ৩-৪ কেজি বা শতাংশ প্রতি ১২-১৫ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।

জমি নির্বাচন এবং তৈরি:  ঝিঙ্গা চাষে সেচ ও নিকাশের উত্তম সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক প্রায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। একই গাছের শিকড় বৃদ্ধির জন্য জমি এবং গর্ত উত্তমরুপে তৈরি করতে হয়। এ জন্য জমিকে প্রথমে ভাল ভাবে চাষ ও মই দিয়ে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন জমিতে কোন বড় ঢিলা এবং আগাছা না থাকে।

বেড তৈরি: বেডের উচ্চতা হবে ১৫-২০ সেমি। বেডের প্রস্থ হবে ১.২ মিটার এবং লম্বা জমির দৈঘ্য অনুসারে সুবিধামত নিতে হবে। এভাবে পরপর বেড তৈরি করতে হবে। এরূপ পাশাপাশি দুইটি বেডের মাঝখানে ৬০ সেমি ব্যাসের সেচ ও নিকাশ নালা থাকবে এবং ফসল পরিচর্যার সুবিধার্থে প্রতি দুবেড পর পর ৩০ সেমি প্রশস্ত নালা থাকবে।

মাদা তৈরি ও চারা রোপণ: মাদার আকার হবে ব্যাস ৫০ সেমি, গভীর ৫০ সেমি এবং তলদেশ ৫০ সেমি। ৬০ সেমি প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা সংলগ্ন উভয় বেডের কিনারা হইতে ৬০ সেমি বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে ২ মিটার অন্তর অন্তর এক সারিতে মাদা তৈরি করতে হবে। প্রতি বেডে এক সারিতে ১৬-১৭ দিন বয়সের চারা লাগাতে হবে।

সার প্রয়োগ: প্রতি মাদায় গোবর সার- ৫ থেকে ১০ কেজি, ইউরিয়া- ৫০০ গ্রাম, টিএসপি- ৪০০ গ্রাম, এমওপি- ৩০০ গ্রাম, বোরণ- ২ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।

রোগ-বালাই: ঝিঙ্গা গাছের প্রধান শত্রু হচ্ছে বিটল পোকা। এছাড়াও গান্ধি পোকা পাতার রস চুষে খায় এবং পাতাকে রস শূণ্য করে। মাছিতে ফল নষ্ট করতে থাকে। তাই এসব ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় হতে রক্ষা পেতে হলে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।

আরও পড়ুন: যেভাবে পেঁয়াজ চাষে অধিক লাভবান হবেন

ফল সংগ্রহ: গাছ লাগানোর দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে ঝিঙ্গা সংগ্রহ করা যায়। ঝিঙ্গা চাষ করে যেমন পরিবারের চাহিদা মেটানো যায় তেমনি বাজারে বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করা যায়।

জেনে নিন ঝিঙ্গার সঠিক চাষ পদ্ধতি শিরোনামে লেখাটির তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার / এমবি